সিকিম সেক্টরের দোকলাম মালভূমিতে এক মাসেরও অধিককাল ভারত-চীনের অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে কঠোর মনোভাব জানালো চীন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানায়, ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদের ক্রমবৃদ্ধি যুদ্ধের (ভারত-চীনকে) দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা ইন্দো-চীন নীতিকেও লুট করেছে। (সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)
চীনের জাতীয়তাবাদী ট্যাবলয়েডটিতে প্রকাশিত এক কঠোর সম্পাদকীয়তে এমনটি বলা হয়। সেখানে ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তারা জাতীয় শক্তিমত্তার দিক দিয়ে চীনের থেকে দুর্বল। ভারতীয় রাজনীতিকদের প্রতি অভিযোগ তুলে বলা হয়, তারা ‘বর্ধিষ্ণু জাতীয়তাবাদের’ মাধ্যমে দেশটির চীন নীতিকে লুট হতে দিচ্ছে।
“ভারত চীনের চেয়ে জাতীয় শক্তিমত্তার দিক দিয়ে দূর্বল, কিন্তু তাদের কৌশলবিদ এবং রাজনীতিকরা বর্ধিষ্ণু জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে ভারতের চীন নীতিকে লুট হওয়া থেকে রক্ষার মতো প্রজ্ঞা দেখাচ্ছে না। এটা ভারতের নিজেদের স্বার্থও ঝুঁকিতে ফেলবে।”
সিকিম সেক্টরের রয়েছে বিশেষ ঐতিহাসিক পটভূমি। এটাই চীন ও ভারতের মধ্যে একমাত্র নির্ধারিত সীমানা, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং এমনটি বলেন। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটির ভারতীয় নাম দোকা লা, ভুটান যাকে বলে দোকালাম। তবে চীনের দাবি এই এলাকা তাদের দোংলাং অঞ্চলের অংশ।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সম্পাদকীয়তে ভারতের প্রতি অভিযোগ তুলে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদির নির্বাচন দেশটির জাতিয়তাবাদী অনুভূতিকে উস্কে দিয়েছে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে দুই দেশকে যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার অবস্থান পরিহার করতে বলা হয় ভারতকে।
এদিকে বুধবার সমাজবাদী পার্টির প্রবীণ নেতা ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুলায়ম সিং জাদব বলেন, চীন আমাদের শত্রু, পাকিস্তান নয়। দোকলাম অচলাবস্থার প্রেক্ষীতে বুধবার এই এমপি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতকে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। পাকিস্তানে তারা এ জন্য পরমাণু অস্ত্রও জড়ো করেছে। ভুটান ও সিকিমকে বিদেশি আক্রমণ থেকে রক্ষা করা ভারতের দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করেন। তিব্বতের স্বাধীনতাসংগ্রামে সাহায্য করা উচিত ভারতের, এমন প্রস্তাব করেন তিনি।
তবে চীনও এমন মন্তব্যের প্রেক্ষীতে অবস্থান নিয়েছেন। চীনা সেনাবাহিনী পিউপিলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মুখপাত্র বুধবার জানান, সিকিম ইস্যুর প্রেক্ষীতে তারা তিব্বতে বিপুল সামরিক সরঞ্জামের সন্নিবেশ ঘটিয়েছে।
দোকলাম মালভূমিতে এক মাসাধিককাল ব্যাপি এই বিরোধের সূত্রপাত সেখানে রাস্তা নির্মাণে চীনের উদ্যোগের পর। ভারত বাধা দেয়। চীনের দাবি তারা নিজেদের সীমান্তেই রাস্তা নির্মাণ করছে। ভারতীয় সেনাদের দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নিতে বলছে তারা। তবে নয়াদিল্লি এই রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগে আশঙ্কা জানি বলছে, এতে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সাথে ভারতের সংযোগ বাধাগ্রস্থ করতে পারবে চীনা বাহিনী।
ভারত চীন সরকারকে জানিয়েছে, এই রাস্তা নির্মাণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলবে।স্থিতাবস্থার ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে আশঙ্কা তাদের।