ঈদ-উল-আযহা সামনেই। নগরীর অনেক মানুষ এ সময়টাতে নাড়ীর টানে পরিবার পরিজন নিয়ে যাবেন গ্রামের বাড়ীতে। তাই এ সময় আপনার শহরের বাড়িটিকে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ করার দায়িত্ব আপনার ওপরেই নির্ভর করছে অনেকখানি। অনেকেই আবার কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে পড়েন দোটানায়। আপনার সার্বিক নিরাপত্তা ও কোরবানির পশু কেনা নিয়ে আজকের এই পরামর্শমূলক লেখা।
বাসা বাড়ির নিরাপত্তায়:
বাসা অথবা ফ্লাটে অটোলক সম্পন্ন মেইন গেট ব্যবহার করুন। বাসা ত্যাগের পূর্বে রুমের দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালা বদ্ধ করুন। মুল্যবান সামগ্রী ও দলিল নিরাপদ হেফাজতে রাখুন এবং তালাবদ্ধ করুন। প্রয়োজনে ব্যাংক লকারের সহায়তা নিন।
মার্কেট ও শপিং মলে নিরাপত্তায়:
স্বর্ণের দোকান, ব্যাংক,বীমা, অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান হলে সিসিটিভি এলার্ম স্কিম ব্যবহার করুন এবং নিশ্চিত হোন তা সক্রিয় আছে। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন এবং টাকা বহনে সর্বদা সতর্ক থাকুন। বড় অংকের অর্থ বহনে প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রোবাস ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিন।
রাস্তা ও যাত্রা পথের নিরাপত্তায় করনীয় :
রাস্তায় চলাচলের সময় সঙ্গে থাকা মুল্যবান সামগ্রী বা টাকা-পয়সা সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করুন। রাস্তায় বাস, ট্রেন, লঞ্চের টার্মিনালে পকেটমার ও দুষ্কৃতকারী হতে সাবধান থাকুন। রাস্তার পাশের দোকানের খাবার বা অপরিচিত লোকের কাছ থেকে কোনো খাবার না খাওয়াই ভালো।
কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সতর্কতা :
কোরবানীর হাটে পশু কেনা-বেচার সময় অর্থ লেনদেনে সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিন। পশু কেনাকাটার সময় অনেক অর্থ লেনদেন হয় বিধায় কিছু অসৎ ব্যবসায়ী জাল টাকার নোট বান্ডিলে দিয়ে দিতে পারে। জাল নোট সংক্রান্ত সন্দেহ দেখা দিলে পুলিশের সহায়তা নিন।
কোরবানির গরু কেনার সময় লক্ষণীয়:
• গরু দেখতে তরতাজা লাগছে? সতেজ গরুর ত্বক উজ্জ্বল থাকবে; দেখতে ফ্যাকাসে লাগবে না।
• কোরবানির গরু অসুস্থ থাকলে অস্বাভাবিক ভাবে মাথা নিচু করে রাখবে।
• অসুস্থ গরু প্রকৃতি এবং আশেপাশের পরিবেশ সম্বন্ধে উদাসীন থাকবে। নড়াচড়া কম করবে বা করবেই না।
• অসুস্থ গরু অন্য পশুর পেছনে লুকানোর চেষ্টা করবে।
• হালকা এবং ঘন ঘন কাশি দিচ্ছে এমন গরু না কেনাই ভাল।
• গরুর কান সমান আছে কিনা লক্ষ্য করুন। কান নিচের দিকে ঝুলে থাকলে বুঝবেন গরুটি অসুস্থ বা কোন সমস্যা আছে। কোরবানির গরু সুস্থ থাকলে কথার সাথে সাথে কান নাড়িয়ে সাড়া দিবে।
• বিমর্ষ চোখ থাকলে এবং চোখের কোণে ড্রেইনের মত দাগটি বেশি বড় থাকলে বুঝবেন গরুটি অসুস্থ।
• শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যাওয়া গরুর অসুস্থতার লক্ষণ।
• গরুর মুখ এবং নাকে লালা লেগে থাকা ভাল লক্ষণ। শুকনা ও খসখসে মুখ গরুর অসুস্থতার লক্ষণ বহন করে।
• বাম দিকে গরুর পেটের ঠিক পেছনের অংশটুকু ফুলে থাকলে বুঝবেন গরুর পেটের সমস্যা হয়েছে; এ ধরনের গরু কেনা থেকে বিরত থাকুন। সাধারণত পেটের এই অংশটুকু নরম থাকে; এখানে চাপ দিলে আঙুল বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই অংশটুকু কখনও শক্ত থাকে না। এই অংশটুকু শক্ত হয়ে থাকলে বুঝবেন গরুর কোন সমস্যা আছে।
কোরবানির পশু জবাই ও পবিবেশ রক্ষায় করণীয়:
কোরবানি একটি ধর্মীয় অনুশাসন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। কোরবানির পরেও আপনার পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় এবং কোরবানির পবিত্রতা নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। সুন্দর পরিবেশ রক্ষা করে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করুন। পশু জবাইয়ের পূর্বে গর্ত করে নিন। গর্তের মধ্যে রক্ত, গোবর ও পরিত্যক্ত অংশ পুঁতে রাখুন। জবাইকৃত পশুর উচ্ছিষ্টাংশ নিকটস্থ ডাস্টবিনে ফেলুন। জবাই করা পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের জন্য প্রয়োজনবোধে নিকটস্থ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, কিংবা ইউনিয়ন পরিষদকে সংবাদ দিন।
টাকা উত্তোলন ও পরিবহনে পুলিশি সেবা পাবেন যেভাবে:
কোন ব্যক্তি, সংস্থা, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ স্থানান্তরের জন্য পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন মনে করলে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করবে। থানা অপারগ হলে পুলিশ এস্কর্ট প্রত্যাশী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে আব্দুল গণি রোডস্থ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কন্ট্রোলরুমে গাড়ি পাঠালে মানি এস্কর্টে পুলিশি সহায়তা পাওয়া যাবে।
পুলিশ কন্ট্রোলরুমের নাম্বার সমূহ নিম্নরুপ:
ফোনঃ ০১৭১৩৩৭৩১১৯, ০১৭১৩৩৯৮৩১১, ৯৫৫৭১১৮৮, ৯৫১৪৪০০, ৯৫৫৯৯৩৩
সর্বোপরি আপনার নিরাপত্তা আপনার সচেতনতার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সর্বদা সতর্কাবস্থায় চলাফেরা করলে যে কোন আসন্ন বিপদ থেকে আপনি নিরাপদে থাকতে পারেন।