নোয়াখালিতে খেলা নিয়ে তিন ভাইকে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। হবিগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ২ জন। গোপালগঞ্জে এক যুবকের দুই হাত কেটে আর দুই চোখ তুলে চাচাত ভাইরা তাকে হত্যা করেছে। তারা চাচার দুই পা’ও কেটে দিয়েছে।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের কাজীনগরে ফুটবল খেলছিলো একদল যুবক। সেসময় দু’ গ্রুপের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষে তিন সহোদরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ।
নিহতরা হলো কাজীনগর গ্রামের কাজী বাড়ীর মোখছেদ উল্যাহর ছেলে কামাল (৩৬), মোঃ হারুন (৩২) ও মোঃ বাবলু (২৭)।
সোনাইমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী হানিফুল ইসলাম ভূঁইয়া ও নাটেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন স্বপন জানান, একটি বাড়ির উঠোনে ছেলেরা ফুটবল খেলছিলো। সেসময় নিহতদের সাথে এলাকার কয়েকজন যুবকের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দু’ পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে হারুন, বাবলু ও কামালকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে অন্যরা।
নাটেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন স্বপন দাবি করেছেন, নিহতরা স্থানীয়ভাবে মাদক, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো। তাদের নামে সোনাইমুড়ি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও দাবি তার।
হবিগঞ্জেও সামান্য ঘটনায় খুনোখুনি
হবিগঞ্জের লাখাইয়েও সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে।
ঈদের কয়েকদিন আগে খেজুর কেনা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ঝগড়ার জের ধরে ঈদের পরদিন দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়।
পুলিশ জানায়, ঈদের কয়েকদিন আগে লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের মলাই মিয়া পার্শ্ববর্তী পূর্ব সিংহ গ্রামের শাহজাহান মিয়ার দোকানে খেজুর কিনতে করতে যান। খেজুরের দাম নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হয়।
এ ঘটনার জের ধরে কয়েকদিন ধরে দু’ গ্রামের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা চলছিলো। রোববার সকাল ১১টার দিকে দু’ গ্রামের লোকজনই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তেঘরিয়া গ্রামের পক্ষ ধরে আশপাশের ৬টি গ্রামের মানুষ সংঘর্ষে যোগ দেয়।
ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে তেঘরিয়া গ্রামের মনা মিয়ার ছেলে কদম আলী ও সায়েদ মিয়ার ছেলে বকুল মিয়া নিহত হয়। আহতদের হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর) সাজ্জাদুর রহমান জানান, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে হাত কেটে চোখ তুলে খুন
ঈদের আনন্দের মধ্যে গোপালগঞ্জেও ঘটেছে নির্মমতার ঘটনা।
জেলার চর পাথালিয়ায় শালিস বৈঠক থেকে তুলে নিয়ে তুহিন মোল্লা নামে এক যুবকের দুই হাত কেটে ও দুই চোখ উপড়ে হত্যা করা হয়েছে। ঠেকাতে গেলে তারা তুহিনের বাবা পুলিশ সদস্য শওকত মোল্লার দুই পা কেটে ফেলে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গা কুপিয়ে জখম করে।
শনিবার রাতে সদর থানার চর পাথালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত শওকতকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গোপালগঞ্জ থানার ওসি মোঃ জাকির হোসেন মোল্লা এবং এসআই মোঃ খালেক জানিয়েছেন, সদর থানার চর পাথালিয়া গ্রামের পুলিশ সদস্য শওকত মোল্লার সাথে তার বড় ভাই লায়েক মোল্লার জমি-জমা ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিলো।
শনিবার রাতে এক সঙ্গে ঈদের খাবার খেয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শালিস বৈঠক বসেন। বৈঠক চলাকালে লায়েক মোল্লার ছেলে আরিফুল, শরিফুল ও রবিউল শওকত মোল্লার ছেলে তুহিনকে ধরে নিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর তুহিনের দুই হাত ও দুই চোখ উপড়ে ফেলে তারা।
খবর পেয়ে ছেলেকে বাঁচাতে বাবা শওকত মোল্লা এগিয়ে গেলে তারা শওকত মোল্লার দুই পা কেটে ফেলে। গুরুতর আহত পিতা-পুত্রকে প্রথমে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রাত ৩ টায় তুহিন মারা যায়।
ঘটনার পর পরই জড়িতরা এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।