ঈদে পোশাক বাজারের রমরমা ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মোবাইলফোনের বাজারে। বিদেশ যাওয়া-আসার বিমান টিকিট, মোটরসাইকেল, সেলফি স্টিক, ব্যাগ, হেডফোনের লোভনীয় অফারের পরও গত ঈদের তুলনায় বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় হতাশ মোবাইলফোন ব্র্যান্ডগুলো।
এক সপ্তাহ পরেই ঈদ। টিপটিপ বৃষ্টি আর জ্যাম ঠেলে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ঢুকছে ক্রেতারা। অথচ শপিং মলে ঢোকার মুখেই মোবাইলফোনের দোকানগুলোকে ক্রেতাশূন্যই বলা যায়। ঈদে পোশাক বাজারের একচেটিয়া আধিপত্য তো থাকেই। তবুও গত ঈদে মোবাইলফোনের বাজার ছিলো বেশ জমজমাট। কিন্তু এবার দুই মাস মিলিয়ে রোজা, অতিরিক্ত নতুন ব্র্যান্ড, খারাপ আবহাওয়া এবং বাজেটে মোবাইল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির মিশ্র প্রভাব পড়েছে বলে মনে করে মোবাইলফোন বিক্রেতারা।
শাওমির একটি আউটলেটের ব্র্যান্ড প্রমোটার সাকিবুর রহমান বলেন, ‘ঈদে আমরা আলাদাভাবে কোনো সাড়া পাচ্ছি না। প্রতিদিন আমাদের প্রায় ৪০টি সেট বিক্রি হচ্ছে রমজান জুড়ে। গত শুক্রবার আমাদের আউটলেটে সর্বোচ্চ ৯৬টি সেট বিক্রি হয়েছে। এই শপিং মলে শাওমির সব আউটলেট মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হচ্ছে ২’শ টি মোবাইলফোন।’
তবে পাশেই স্যামসাং মোবাইল ফোনের আউটলেটে কয়েকজন ক্রেতার দেখা পাওয়া গেলো।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শারমিন জাহান এসেছেন ছোট ভাই রাকিবকে নিয়ে। ঈদে পোশাক কেনা শেষ, ছোট ভাইয়ের স্মার্টফোনের বায়না পূরণ করতেই ওকে নিয়ে এসেছেন বলে জানালেন।
তবে গত ঈদের তুলনায় স্যামসাংয়েরও বিক্রি অর্ধেক কমেছে বলে জানান আউটলেটের বিক্রয় কর্মকর্তারা। দুই মাস মিলিয়ে রোজা থাকায় লোকজনের হাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা তেমন নেই। যা ছিলো তা পোশাক কিনতেই খরচ হওয়ায় মোবাইল বাজারের এই অবস্থা বলে মনে করেন তারা।
ভারতীয় সুপারস্টার দীপিকা পাড়ুকোনের বিজ্ঞাপন এবং সেলফির জন্য জনপ্রিয়তা পাওয়া অপপো আউটলেটের বিক্রয় কর্মীরাও হতাশ। এজন্য বাজারে প্রচুর ব্র্যান্ডের মোবাইলফোন আসাকে কারণ বলে মনে কওে তারা।
আকর্ষণীয় গিফটপ্যাক অফারেও ক্রেতাদের ভীড় না দেখে কিছুটা হতাশ বলে জানালেন এই আউটলেটের সেলস প্রমোটার মো.আক্তারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আগে শাওমি, হুয়াওয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতাটা ছিলো। এখন আরও নতুন ব্র্যান্ড এসেছে। অথচ ক্রেতা কিন্তু তেমন ভাবে বাড়ছে না। এবার গত ঈদের চেয়ে বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে।’
এবারের বাজেটে মোবাইল ফোন আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অপেক্ষাকৃত সস্তা স্মার্টফোনের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড সিম্ফনি’র ব্র্যান্ড প্রমোটার সজীব শাহ।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই সীমিত বাজেটে একেবারে টার্গেট করে সুলভমূল্যে সেট কিনতে আসে। বাজেটে শুল্ক বাড়ায় এখন মোবাইলফোন প্রতি ৬-৭’শ টাকা বেশি দাম রাখতে হচ্ছে আমাদের। ক্রেতারা দ্বিধা করছে, কেউ কেউ বাজেটের চেয়ে অতিরিক্ত ভেবে পিছু হটছে।’
একই চিত্র দেখা গেলো মোবাইল ফোনের আরেক বাজার মোতালেব প্লাজায়। মাত্র ছয় মাস হলো দেশে যাত্রা শুরু করা জেডটিই ব্র্যান্ডের আউটলেটে পত্রিকা পড়ছিলেন ব্র্যান্ডটির প্রমোটার শরিফুল ইসলাম।
জানালেন, বিশ্বে নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড হিসেবে আমাদের সুনাম আছে। বাংলাদেশে মাত্র ৬ মাস হলো জেডটিই লঞ্চ করা হয়েছে। ঈদে প্রত্যাশিত বিক্রি হচ্ছে না। তবে শুধু আমাদের ক্ষেত্রে কারণটা ভিন্ন। এখনো আমাদের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়নি। ক্রেতারা আমাদের সম্পর্কে তেমন জানেও না। তবু ঈদ উপলক্ষে আমরা প্রতিটি সেটের সঙ্গে ফ্রি ব্যাককভার,গ্লাস প্রটেক্টর দিচ্ছি। আমাদের ভি-৭ এর সঙ্গে দিচ্ছি ফ্রি পাওয়ার ব্যাংক।’
পোশাক নির্ভর ঈদ বাজারের একচেটিয়া আধিপত্য থাকবেই। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে ঈদের পর মোবাইলফোন বাজার আবারও চাঙা হবে বলে প্রত্যাশা করছে বিক্রেতারা।