ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য সুখবর নেই। ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত থেমে থেমে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের। এই মহাসড়কের চার লেন উন্নীত করণের কাজ চলা, সরু রাস্তা, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও কয়েকটি স্থানে সড়ক আড়াআড়ি বন্ধ করে মাটি ফেলার কারণে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে মনে করছেন নিয়মিত এ মহাসড়ক ব্যবহারকারী যাত্রী সাধারণ ও যানবাহনের চালকরা। তবে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও যানজট মুক্ত রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব রকমের পদক্ষেপ।
ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত দৈর্ঘ প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যেখানে যানজট এখন নিত্য দিনের ঘটনা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও যানজট লেগেই আছে। ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যানচালকদের। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রীদের। ছোট শিশু ও নারী যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষদের চরম বিরম্বনায় পড়তে হবে।
বিগত ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার প্রায় চার বছর পরে দুই লেনের সরু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যাত্রা শুরু হয়। উত্তরবঙ্গের সাথে রাজধানী ঢাকার সেতুবন্ধন এ মহাসড়কে শুরু থেকেই বৃহত্তর উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহের ২৩টি জেলার গাড়ি চলাচল করে। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন চলাচল করছে ২২/২৩ হাজার দুরপাল্লার বাস-ট্রাকসহ হালকা ও ভারি যানবাহন। যা মহাসড়কের ধারন ক্ষমতার কয়েকগুন বেশী।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন অটো টেম্পু, রিকশা-ভ্যান ও ব্যাটারি চালিত রিকশার মতো ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপক হারে। একাধিক অন্ধবাঁক, বেপোরোয়া গাড়ি চালনা, ট্রাফিক আইন অমান্যের মতো বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়তই।
মহাসড়কের উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদার কালিহাতীর এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দায়সারাভাবে রাস্তার মাঝখানে ইটের সলিং করে জোড়া-তালি দিয়ে সংস্কার কাজ করছে টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগ। এই ইট ফসকে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এতে ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে জানমালের। মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে মারাত্মক খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবারের মতো টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ লোক দেখানো কাজ করে চলেছে। দেশের অন্যতম বড় এই মহাসড়কে টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। সংস্কার কাজের কিছুদিন পরেই তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
জয়দেবপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত চারলেন রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে যানজট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, গোড়াই, হাটুভাঙ্গা, মির্জাপুর, পাকুল্লা, নাটিয়াপাড়া, করটিয়া, ঘারিন্দা, এলেঙ্গায় প্রতিদিনই যানজট লেগেই থাকে। মহাসড়কের দুই পাশে চারলেন রাস্তার কাজ চলায় মাটি বোঝাই বড়বড় ড্রাম ট্রাক আনলোড হচ্ছে। চার লেনের কাজ এবং নাসির ফোল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, নাসির গ্লাস কোম্পানীতে রাত দিন সারাক্ষনই চলছে মাটি ফেলার কাজ। মহাসড়কের মধ্যে আড়াআড়ি করে বড়বড় ট্রাকগুলো মাটি ফেলছে। ফলে দুই পাশে তিন-চার কিলোমিটার যানজট লেগে যায়।
আবার দুরপাল্লার ট্রাকের চালকরা যানজট লাগলেই গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানো যানজট লাগার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন টাঙ্গাইলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দিনের চেয়ে রাতে তিন-চারগুন বেশি গাড়ি চলাচল করে। মাটি বোঝাই ড্রাম ট্রাকগুলো মহাসড়ক বন্ধ করে মাটি ফেলছে। ফলে মহাসড়কের দুইপাশে ভয়াবহ যানজট লেগে যায়। প্রতি রাতেই যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। এর মধ্যে বৃষ্টিতো আছেই।
জরুরী সংবাদপত্র পরিবহনের মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, যানজটের কারণে পাঠকের হাতে সময়মত পত্রিকা পৌছে দিতে পারছি না। মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার পার হতে সময় লাগে ৪/৫ ঘন্টা। এ কারণে উত্তরবঙ্গের পাঠকরাও পত্রিকা হাতে পাচ্ছেন দুপুরে। এছাড়াও অধিক মালবাহী ও বালুভর্তি ট্রাক মাঝে মধ্যেই মহাসড়কের উপর বিকল হয়ে পড়ছে। পুলিশের রেকার এনে ওইসব বিকল হওয়া গাড়ি সরাতে ৩/৪ ঘন্টা সময় লাগে।
রংপুরের এসআর ট্রাভেলসের চালক আলতাব হোসেন বলেন, চন্দ্রা থেকে পাকুল্লা পর্যন্ত এখানে প্রতিদিনই যানজটে আটকে থাকতে হয়। প্রায় ৩/৪ ঘন্টা সময় নষ্ট হয় এখানে। ফলে সময় মেনে চলা সম্ভব হয় না। যানজট নিরসন করতে না পারলে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষকে সম্ভবত এই মহাসড়কেই ঈদ করতে হবে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
মহাসড়কে খানাখন্দের বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুর-ই-আলম বলেন, মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে মেরামত কাজ চলছে। ঈদের আগ পর্যন্ত কাজ চলবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, যানজট নিরসনে পুলিশ সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছে। চারলেনের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মেনে মাটি ভরাটের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন বলেন, যানজটের বিষয়ে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রনালয় নির্দেশনা মতে মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়েছে।