চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঈদে কতো মানুষ ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যায়?

ঈদযাত্রায় এ বছর ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের চারটি সিটি করপোরেশনসহ এ তিন জেলা ছেড়ে যাচ্ছে প্রায় এক কোটি ৪৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও জেলার অন্যান্য স্থান থেকে যাবে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ। গাজীপুর থেকে যাবে ২৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। আর ১১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ যাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে।

এই বিপুলসংখ্যক ঘরমুখী যাত্রীর ৫৫ শতাংশ সড়কপথে ও ২৫ শতাংশ নৌপথে যাবে। বাকি ২০ শতাংশ যাবে রেলপথে। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদ-পূর্ব বার্ষিক প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সংগঠনগুলো এ সংক্রান্ত ‘পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেজ’ সংরক্ষণ না করায় তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিবছর ঈদের আগে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় এবং এতে প্রতিবেদনটিও ‘শতভাগ তথ্য নির্ভর কিংবা বস্তুনিষ্ঠ’ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে দাবি করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি ঈদে আনুমানিক ৫০ শতাংশ মানুষ ঢাকা মহানগরী ছেড়ে যায়। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ শহর ছাড়ে ৩০ শতাংশ মানুষ। এই হিসেবে এবার ঈদে এক কোটি মানুষ ঢাকা শহর ছাড়ছে। আর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ শহর ছাড়ছে যথাক্রমে ১৯ লাখ ৫০ হাজার ও ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।

এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ-চারটি সিটি কর্পোরেশনের বাইরে এ তিন জেলার অন্যান্য স্থান থেকে আরো ২০ লাখ মানুষ ঈদে ঘরমুখী হয়। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ১০ লাখ, গাজীপুরের ৬ লাখ ও নারায়ণগঞ্জের ৪ লাখ মানুষ। সব মিলিয়ে তিন জেলার এক কোটি ৪৭ লাখ (প্রায় দেড় কোটি) মানুষ এবার ঈদযাত্রায় শামিল হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈদ-পূর্ব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে বলে জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে, নৌ ও সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণপরিবহন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং বক্তি পর্যায়ের গবেষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বেসরকারি এই সংগঠনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ৮০ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ সড়কপথে ও ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ নৌপথে ঘরমুখী হবে। বাকি ২৯ লাখ ৪০ হাজার মানুষ যাবে রেলপথে। এই হিসাবে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ৫৫ শতাংশ সড়ক, ২৫ শতাংশ নৌ ও ২০ শতাংশ রেলপথ ব্যবহার করবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বরাত দিয়ে জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংখ্যা যথাক্রমে ১ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার ১৭ এবং ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৫। দুটি করপোরেশন মিলিয়ে ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৮১ লাখ ৮৪ হাজার ৪১ এবং সম্মিলিত আয়তন ২৭০ বর্গকিলোমিটার।

তবে জীবন-জীবিকার তাগিদে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ঢাকামুখী প্রবণতার কারণে গত ৯ বছরে রাজধানীর জনসংখ্যা অন্তত দুই কোটি। একই কারণে ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (এনসিসি) জনসংখ্যা বেড়ে যথাক্রমে ৬৫ লাখ ও ২৫ লাখ হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন শহরের বর্তমান লোকসংখ্যা ২ কোটি ৯০ লাখ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, ঈদে স্বজনদের সান্নিধ্য প্রত্যাশীরা গত কয়েকদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে ঘরমুখী হতে শুরু করলেও আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে আজ ৩১ মে শুক্রবার থেকে এবং এই যাত্রা চলবে ৫ জুন বুধবার (সম্ভাব্য ঈদের দিন) দুপুর পর্যন্ত।

তিনি বলেন, প্রত্যেক ঈদে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ঘরমুখী মানুষের সিংহভাগেরই চাপ পড়ে রাজধানী ঢাকার রেলস্টেশন এবং লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোর ওপর। আমাদের সামগ্রিক পরিবন ব্যবস্থায় মাত্র ছয়দিনে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের চাপ সামাল দেয়ার সক্ষমতা নেই। তাই ঈদযাত্রীদের মোটেও দুর্ভোগ হবে না- এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পাশাপাশি সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনার ঝুঁকি তো রয়েছেই।

তাই নিরাপদ ঈদযাত্রার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।