রোববার চাঁদ দেখা গেলে সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসল্লিারা ওইদিন তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র রমজানে এক মাস রোজা পালনের পর এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে। বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ঈদের এ প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন। বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শায়খুল হাদীস মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান।
রাষ্ট্রপতি, বিচারপতিগণ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকবৃন্দ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। ঈদগাহে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামায়াত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামায়াত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও শেষ জামাত সকাল পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।
বায়তুল মোকাররমের প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন এ মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বিতীয়টিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান, তৃতীয়টিতে জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাশেম, চতুর্থটিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির ধর্মীয় প্রশিক্ষক মাওলানা জাকির হোসেন এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইমামতি করবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠেয় ঈদ জামাত দেশের প্রধান ঈদ জামাত হিসেবে গণ্য হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন জানান, এবার বাড়তি সর্তকতা হিসেবে জাতীয ঈদগাহে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রেখে চলেছেন। সাদা পোশাকেও তৎপর রয়েছেন র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া শনিবার ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে জানান, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মুসল্লিদের প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, জননিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাগ বা অন্য কিছু নয়, শুধু জায়নামাজ সাথে নিয়ে মুসল্লিরা জামাতে আসবেন। ব্যাগসহ ঈদগাহে ও জাতীয় মসজিদে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বলেন, রাজধানীর প্রায় ৫শ’ স্থানে ছোট-বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যেসব জায়গায় ঈদ জামাত হবে, সেসব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সব স্থানেই পোশাকে ও সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ৮টায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন।
ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে ৪/৫টি করে মোট ৪০৮টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, ডিএসসিসি’র ৫৭টি ওয়ার্ডে ২৩০ টি স্থানে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
অপরদিকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে ৫টি করে মোট ১৮০টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিয়ায় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন এবং দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের ইমাম খতিব হাফেজ নাজীর মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে এবং শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
চ্যানেল আই মসজিদ প্রাঙ্গণে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত হবে সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে। একই মসজিদেই ঢাকা মহানগরীর সবশেষ জামাত হয় বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে।
প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেখানেও ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিবছরের মতো এবারও জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ। সকাল পৌনে দশটা থেকে বৃহত্তর এ জামাতটি সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই।
এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে সকাল ৮টায় ঈদুল ফিতরের প্রথম ও প্রধান জামাত হবে। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।
খুলনায় ঈদ-উল-ফিতরের প্রথম ও প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে আটটায় সার্কিট হাউজ ময়দানে। ইমামতি করবেন মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ্। দ্বিতীয় ও শেষ জামাত হবে সকাল নয়টায় টাউন হল জামে মসজিদে।
রাজশাহীতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। ইমামতি করবেন অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাৎ আলী।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে আটটায় হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহে। এছাড়া নগরীর ৪টি মসজিদে দুটি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সিলেটে মোট ২শ’ ৫৪টি স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ঈদের প্রধান জামাত হবে ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ ময়দানে, সকাল ৯টায়।
ময়মনসিংহে আঞ্জুমানে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায় ১ম এবং সোয়া ৯টায় ২য় জামাত হবে।
রংপুরে সকাল সাড়ে ৮টায় কলেকটরেট ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত হবে।
দিনাজপুরে প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে।
ঈদ উপলক্ষে মুসল্লিদের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।