চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঈদুল ফিতর: আমাদের করণীয় ও শিক্ষণীয়

দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে রমজান। আসছে ঈদ। সবাই কত খুশি! আনন্দে নেচে উঠে মন। কিন্তু মু’মিনের মনে প্রশ্ন জাগে ক্ষণে ক্ষণে, আমি কি নাজাত পেয়েছি? রহমতের শামিয়ানায় কি আমার জায়গা হয়েছে? কদরের নেয়ামত কি হাসিল করতে পেরেছি? কতটুকু?

‘ঈদ’ আরবি শব্দ, অর্থ আনন্দ, খুশি, উৎসব। মূল শব্দ হচ্ছে আইন-ওয়াও-দাল। অর্থাৎ বারবার ফিরে আসা। মুসলমানদের মাঝে এ আনন্দোৎসব বারবার ফিরে আসে বলে নামকরণ করা হয়েছে- ঈদ। দীর্ঘ এক মাস মরুভূমিতে ক্লান্তিকর ভ্রমণের পর ‘আবে জমজম’ যেন রোযাদারের ঈদ। জাহেলিয়্যাতের অপসংস্কৃতির পরিবর্তে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ইসলামী শরীয়তে আনন্দোৎসবের জন্য বাৎসরিক দুই ঈদ নির্ধারণ করেন (আবু দাউদ শরীফ)।

শাওয়ালের চাঁদ দেখার সাথে সাথেই আনন্দের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হয় চারদিকে। খুশির আমেজে ছেয়ে যায় সবদিক। ঈদের প্রস্তুতিতে এতটুকু কমতি রাখতে চায় না কেউই। রাতটি ঈদের প্রস্তুতির মাধ্যমেই ব্যয় করেন সিংহভাগ মুসলমান। এমনই কি হবার কথা? না। শাওয়ালের প্রথম রাত তথা ঈদের রাত অন্য আট-দশ রাতের মতো সাধারণ নয়। ‘অসাধারণ’ যাকে বলে! কেন? কারণ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ তায়ালা পাঁচটি বিশেষ রজনী নির্ধারণ করেছেন। যে রাতসমূহে কারো দোয়া বিফলে যায় না। তন্মধ্যে একটি, ঈদুল ফিতরের রাত (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ফতোয়ায়ে শামী)।

ঈদুল ফিতরের দিনে যোহরের ওয়াক্ত হবার পূর্বে, জামাতে ৬ তাকবিরের সহিত ২ রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ঈদুল ফিতরের দিনে কিছু সুন্নত রয়েছে। যেগুলো জানা আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১. সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে মিস‌ওয়াক করা।
২. নামাজের পূর্বে গোসল করা।
৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৪. পবিত্র ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা।
৫. সামর্থ্য অনুপাতে উত্তম খাবার বণ্টন করা।
৬. ঈদগাহে বা মসজিদে গমনের পূর্বে মিষ্টান্ন খাওয়া।
৭. ঈদের নামাজের পূর্বে ‘সাদকাতুল ফিতর’ আদায় করা।
৮. ঈদগাহে গমনকালে এক পথে যাওয়া এবং ফিরার সময় ভিন্ন পথে আসা।
৯. সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া।
১০. ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা।
১১. ঈদগাহে যাওয়ার সময় একাধারে তাকবিরে তাশ্‌রিক পড়া।

ঈদের নামাজের পর আমরা একে অপরের আলিঙ্গনে সিক্ত হবো। ভালোবাসায় বুকে বুক মিলাবো। পূর্ববর্তী সমস্ত হিংসা, বিদ্বেষ দাফন করে সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হবো। বড়োদের পা ছুঁয়ে সালাম করব, যা হাদিস শরীফের আলোকে ‘সুন্নত’। ছোটদের স্নেহময় ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিব। সম্ভব হলে প্রচলিত রীতি অনুসারে ‘সালামি’ দিব। এতে আনন্দের মাত্রা বাড়ে। হাদিস শরীফে, একজন আরেকজনকে মহব্বত করে হাদিয়া প্রদানের মাধ্যমে ভালোবাসা বৃদ্ধির কথা এসেছে। তাই এটাকে ‘অপসংস্কৃতি’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

আর ঈদ নিয়ে যতটুকু শিক্ষা প্রয়োজন তার সবটাই দিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে…” সঙ্গীতে কবি কী বলেননি? পুরো সঙ্গীতখানা মন দিয়ে শুনুন। অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। আত্মোপলব্ধির জায়গা প্রশস্ত করুন।

সবাই তো সবসময় শুরুটাই বলে, শোনে। চলুন আমরা জাতীয় কবির এই কালজয়ী সঙ্গীতের শেষটা দিয়েই শেষ করি। “তোরে মারল ছুঁড়ে জীবন জুড়ে ইট পাথর যারা, সেই পাথর দিয়ে তোল রে গড়ে প্রেমেরি মসজিদ”।