চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইয়াবা গডফাদাররা নির্মূল হবে কবে

থানার দারোগার টেবিলের উপর অনেকগুলো গোলাপি রংয়ের ইয়াবা ট্যাবলেট। আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে খুব সহজ সরল ছিপছিপে গড়নের এক মেয়ে। দেখলেই মায়া লাগবে। চেহারা দেখে মনে হয় না কোন অপরাধ সে করতে পারে। কিন্তু না, সে রীতিমতো ভয়ংকর কাজে জড়িত। ইয়াবা ব্যবসার চক্রের সদস্য একজন। অভিনব কায়দায় জুতার ভিতর ৫০০ পিস ইয়াবা বহন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে পুরুষসঙ্গীসহ। মরণ নেশার এ চক্র নিজেকে ধবংস করার সাথে সাথে জাতিকে করছে বিপন্ন। এ মেয়েটি চক্রের মূল ব্যক্তিকে হয়তবা চিনেই না। কারণ এ ব্যবসার শিকড় অনেক গভীরে। হাত বদল হয়ে চেইনের মতো লেনদেন হয় বলে থমকে যায় ইয়াবা মামলাগুলো। আর সে কারণে এমন ব্যবসার মূল হোতারা বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে সমাজে ভদ্র বেশে বহাল তবিয়তে আছে। কিন্তু এ মেয়েটি তার অপরাধের সাজা ভোগ করে জেলে কাটাবে জীবন নতুন আইন অনুসারে।

৫০০ পিস নয় এক পিস ইয়াবাই একটি পরিবারকে বিপর্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট। যদি ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখে না ইয়াবা গডফাদাররা। আর ভাববেই বা কেন। এ যে রাতারাতি বড়লোক হবার সহজ মাধ্যম।

বেশ কিছুদিন যাবত আইনি বিষয় নিয়ে আদালত আর ঢাকা-চট্রগ্রামের হাইওয়ের পাশের এক থানাতে যাওয়া আসা করতে হচ্ছে। সেখানে অনেক ধরনের ঘটনা চোখে পড়লেও, সবচেয়ে আতঙ্কিত হই যে বিষয় নিয়ে তা হলো – ইয়াবা সংক্রান্ত ঘটনাগুলো দেখে। প্রতিদিনই সেখানে থাকে ইয়াবাসহ ধরা পড়া আসামী। তার মধ্যে নারীদের সংখ্যাও কম নয়।

শহর ছাড়িয়ে ইয়াবা এখন চরমভাবে ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামাঞ্চলে। আর ইয়াবা সেবনসহ ব্যবসাতে পুরুষদের সাথে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে ক্রমাগত। বিশেষ করে কক্সবাজার থেকে ছোট বড় আকারে ইয়াবা চালান ধরা পড়ে বিভিন্ন যানবাহনে। সেখানে নতুন নতুন পন্থা গ্রহণ করে ইয়াবা বহন করে নারী পুরুষরা।

বিগত সময়ে মাদক অভিযানের সাথে সাথে ক্রসফায়ারের পরেও তেমনভাবে কমেনি ইয়াবা ব্যবসা। এ মরণব্যাধি নেশা জাতিকে সর্বনাশের পথে নেবার জন্য দায়ী গডফাদাররা আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে এখন পর্যন্ত। সংসদে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর ইয়াবা আইন পাশ হবার পরেও আশানুরূপ নিয়ন্ত্রণ আসে নাই। এমনকি আইনের কোন তোয়াক্কা না করে চলছে ইয়াবা ব্যবসা।

এ বিষয়ের অন্তরালের কারণগুলোকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার দাপটের কারণে আইন তার আপন গতিতে কাজ করতে পারে না। ইয়াবা ব্যবসাতে খুব অল্প সময়ে বিত্তবান হবার লোভে এর সাথে আবার জড়িয়ে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তি।

ইয়াবা ব্যবসার চক্রটি কাজ করে বেশ কিছু হাত হয়ে। পুলিশের হাতে যার ধরা পড়ে তারা প্রথম পর্যায়ের ৩/৪টি হাত যেমন- বহনকারী, মজুদকারী, সেবনকারী। এদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর পরবর্তী হাতগুলো যারা তাদের ধরা সম্ভব হয় না। কেননা এদের পেছনে কাজ করে ক্ষমতাবানরা। যার ফলে ইয়াবার মূল হোতারা আইনকে পকেটে বন্দী করে আবার নতুন চক্র দিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যায়।

অন্য দিকে আদালত পাড়ায় দেখা যায়, বিশেষ এক শ্রেনীর ব্যক্তি বিশেষ ইয়াবা মামলার জামিনসহ নানা বিষয় নিয়ে ব্যবসা করছে। সাময়িকভাবে ইয়াবা আসামীদের জামিন পাওয়াটা মূল বিষয় হয়। আর ইয়াবার আনুপাতিক হারে কবে কিভাবে জামিন পাবে সে পথ করে দিতে বড় টাকার লেনদেন চলে আদালতে। সব দেখে মনে হয় ইয়াবা মামলা এখানে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো।

তাই শুধু আইন পাশ করে চলবে না। বাস্তবিকভাবে ইয়াবার এ আগ্রাসনের ভয়াবহতা কমাতে হলে নতুন আইনের প্রচার প্রচারণাটা এখন সবচেয়ে জরুরি। এর পাশাপাশি গডফাদারদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচার করতে হবে। সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত রাখতে হবে সমাজের কাছে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ইয়াবা ব্যবসার লেনদেনের কাছে নৈতিকতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। থানা বা আদালতে ইয়াবা মামলা বেশ লোভনীয় বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জড়িয়ে পড়ে এ ব্যবসাতে। যার প্রমাণ রয়েছে নানা সময়ের খবরের পাতায়।

উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাও বাংলাদেশের তরুণদের বাঁচাতে হলে ইয়াবার পথ রুদ্ধ করতে হবে। ক্ষমতাধর হয়ে কিংবা ক্ষমতার ছায়াতলে থেকে ইয়াবা ব্যবসা যারা করে তাদের প্রশয় দেবার সময় আর নেই।

আইন হলেই অপরাধ বন্ধ হয়ে যায় না বলে সমাজে খুন হত্যা রাহাজানি ঘটে। ইয়াবা আইনে ইয়াবা বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা আশা করা যায় না সহজভাবে। তাই প্রত্যেককে আইনের পাশাপাশি নিজেদের বিবেক, নৈতিক জ্ঞান দিয়ে মানবিকতাকে বিবেচনা আনতে হবে।

ইয়াবা গডফাদার দোহাই আপনাদের, অর্থের লোভে তরুণ সমাজকে আর শেষ করে দিবেন না। একবার ইয়াবা সেবনকারী সে ছেলে বা মেয়েটিকে নিজের আপনজন মনে করুন। ভাবুন তার পরিণতি। তাহলে আইন নয় বরং আপনার বিবেক যদি জাগ্রত হয় তবেই এ অসাধু ব্যবসা বিদায় নেবে দেশ থেকে। তা ছাড়া কোন আইন পারবে না ইয়াবার মরণ নেশার আগ্রাসনকে রুখতে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)