জঙ্গি তৎপরতা, প্রশিক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ করত তারা। তবে কোনো নাশকতার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, গোপনীয় তথ্য সরাবারহ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কদাচিৎ অফলাইনে দেখা সাক্ষাৎ করে থাকত। অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গিদের সঙ্গে পরিচিত হতো এবং জঙ্গিবাদে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করত।
শনিবার রাতে অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্যদের আটক করে র্যাব-৪।
সেসময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী সম্পর্কিত বই, লিফলেটসহ উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
আটকরা হলো: মো. মাসুম মিয়া ওরফে মাসুম (৩০), মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে এমরান (১৯), মো. রাকিবুল হাসান ওরফে সিয়াম (১৮), মো. আব্দুল্লাহ আল রোমান ওরফে রোমান খান (২২)।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন: জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি, নতুন সদস্য ও অর্থ সংগ্রহসহ জঙ্গিবাদী কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য তারা আজকে গোপন বৈঠক করার জন্য খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় তাদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। সেসময় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করে নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে র্যাব-৪ । ওই সময় তাদের দলের আরো বেশ কয়েকজন পালিয়ে যায়। পলাতক জঙ্গিদের তথ্য সংগ্রহ করে আটকের প্রক্রিয়া চলমান আছ।
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল বলেন: তারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপক্ষে, তারা এই ব্যবস্থা বাতিল করে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। দেশের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে কথিত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করাই আনসার আল ইসলামের মূল উদ্দেশ্য। তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা কারীদের উপর তারা আকস্মিক আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে চাপাতি ব্যবহার করে।
তিনি বলেন: জঙ্গি সদস্য মো. মাসুম মিয়া বর্তমানে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে। ফেসবুকের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ স্থানীয় নেতার অনুসারী ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার আমির হোসেনের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত হয়। সে অনলাইনে শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত এবং তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠকের আয়োজন করত। সে প্রায় তিন বছর যাবত এই সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে।
আরেক আটক জঙ্গি সদস্য মো. আবু বক্কার সিদ্দিক বর্তমানে ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে বাংলাদেশী বীর মুজাহিদ নামক এক ব্যক্তির সাথে অ্যাপের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পর্কে জানতে পারে এবং তাদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে যোগদান করে। সে প্রায় দুই বছর ধরে এই সংগঠনের সাথে জড়িত। বিভিন্ন অ্যাপস যেমন টেলিগ্রাম, টর, মেসেঞ্জার ও ইমো ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্ম নামে আইডি ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন রকম জঙ্গিবাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
আটক আরেক জঙ্গি সদস্য মো. রাকিবুল হাসান মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। শীর্ষস্থানীয় এক জঙ্গির সাথে ফেসবুক, মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে তার প্রথম পরিচয় হয়। পরে সাতক্ষীরা অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় এক জঙ্গির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হয়। সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন সক্রিয় সদস্য। সে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন ভিডিও, বইপত্র, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো এবং তাদের সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম পরিচালনা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতি মাসে চাঁদা দিত। আসছে। সে প্রায় দুই বছর ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।
আরেক জঙ্গি সদস্য মো. আব্দুল্লাহ আল রোমান গাজীপুরের একটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছাত্র জীবনে সে হরকাতুল জিহাদের সাথে যুক্ত ছিল। হরকাতুল জিহাদ নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে সে তার সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়, কিন্তু সবসময় সে সশস্ত্র উগ্রবাদ এ অংশগ্রহণে আগ্রহী ছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষস্থানীয় এক জঙ্গি তাকে দাওয়াত দেয় এবং বিভিন্ন বই, লিফলেট ও ভিডিও সরবরাহ করে। পরে তার মাধ্যমে সাতক্ষীরা অঞ্চলের শীর্ষ স্থানীয় অন্যতম জঙ্গি সদস্য মো. ইকরামুল ইসলাম যার সাংগঠনিক নাম মুত্তাকিন ওরফে আমীর হামজা ওরফে সালাউদ্দিন আইয়ুবীর সঙ্গে পরিচয় হয়। সে প্রায় তিন বছর ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সে শীর্ষ জঙ্গিদের মধ্যে একজন, তার কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে।
আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।