ইরাক-ইরান সীমান্ত অঞ্চলে হওয়া ৭.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত চারশ’রও বেশি মানুষ নিহত এবং ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। একে চলতি বছরের সবচেয়ে মারাত্মক এবং ইরানের ইতিহাসে ভয়াবহতম ভূমিকম্পের অন্যতম বলে জানিয়েছে মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা ইউএসজিএস।
ভূমিকম্পে ইরানের এখন পর্যন্ত ৪১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। নিহতের সেই তালিকায় কয়েকজন সেনা সদস্য এবং কিছু সীমান্তরক্ষীও রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ।
অন্যদিকে সোমবারের ভূমিকম্পে ইরাকে ৯ জন নিহত হয়েছে বলে বিবিসি’কে জানিয়েছেন রেড ক্রিসেন্টের এক মুখপাত্র।
ভূমিকম্পের পর থেকে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার অভিযান চলছে। ভেঙে পড়া ভবনের নিচে বা ধ্বংসস্তুপের ভেতর কোনো জীবিত মানুষ চাপা পড়ে আছে কি না সেটাই এখন শেষবারের মতো খতিয়ে দেখছে উদ্ধারকারী দলগুলো।
ইরানের জরুরি উদ্ধার ও সহায়তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তাই বেশিরভাগ স্থান থেকে মানুষকে জীবিত উদ্ধারের অভিযান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় ইরানে মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সময় রোববার রাত ৯টা ১৮ মিনিটে তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ইরাক-ইরান সীমান্ত অঞ্চল। সীমান্তের হালাবজা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ৩৩.৯ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তি বলে জানায় ইউএসজিএস।
ভূমিকম্পে নিহতদের বেশিরভাগই ইরানের সীমান্ত থেকে মাত্র দশ মাইল দূরে অবস্থিত পশ্চিমাঞ্চলের শহর সারপোল-এ-জাহাব এবং কেরমানশাহ প্রদেশের বাসিন্দা। সারপোল-এ-জাহাব শহরের প্রধান হাসপাতালও ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় আহতদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল।
ইরানের একটি ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর থেকে বর্তমানে কমপক্ষে ৭০ হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে দ্বিতীয় রাত কাটিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রয়োজন হলেই সহায়তা দিতে তৈরি আছে তারা।
ভূমিকম্প আক্রান্ত বেশ কিছু স্থানে ভূমিধস হওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও ইরানের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে মৃতের সংখ্যা অনেক আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পে একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই বাঁধের কাছাকাছি বসবাসকারীদের অন্য এলাকায় সরে যেতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।