মাঘ মাসের শুরুতেই রাজধানীর চিত্র কিছুটা আলাদা। শীত যেন ব্যস্ত নগরীকে ঝাঁপটে ধরে রেখেছে। প্রকৃতি সেজেছে ভিন্নরূপে। একনাগাড়ে ঠান্ডা আবহাওয়ায় প্রকৃতি যেন অসহায়! একদিকে সকালের আকাশে মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে সেই মেঘ ঠেলে সরিয়ে উত্তাপ ঢালছে সূর্য।
মেঘ-রোদ্দুরের এই খেলায় শহর থেকে কোথায় যেন উধাও হয়ে যাচ্ছে কুয়াশা। রাজধানীর খিলক্ষেত-এয়ারপোর্টের রোডের কাছেই গ্রাম্য পরিবেশ। চারপাশের বিভিন্ন পদের গাছ, খেলার মাঠ, পুকুর-দীঘি, মসজিদ। এর বুক চিরে আঁকাবাঁকা রাস্তায় চলে গেছে। সেখানকার কাওলা নামক স্থানে বুধবার সকালে এমন আবহাওয়া বিরাজ করছিল।
মূল রাস্তা থেকে রেললাইন পার হয়ে মিনিট দুয়েক হাঁটলেই পৌঁছাবো কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। সেখানেই জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ তার নতুন নাটকের শুটিং করছেন। দূর থেকে চোখ পড়লো শুটিং স্পটের মূল ফটক (কোয়ার্টার)। গেট পেরিয়ে যেতেই বাঁ পাশে দেখা গেল নির্মাতা বান্নাহ’র সঙ্গে গল্প করছেন ইরফান সাজ্জাদ ও তানজিন তিশা।
পাশে গিয়ে বোঝা গেল, তারা তিনজন যে গল্পটা করছেন সেটা নির্মিত নাটক নিয়েই। নির্মাতা বান্নাহ বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কীভাবে দৃশ্যটি ধারণ করা হবে এবং ইরফান সাজ্জাদ ও তিশা কীভাবে স্ক্রিনে তাদের প্রেজেন্ট করবেন। মিনিট পাঁচেক অনুশীলনের পর তিনজনই কুশল বিনিময় শেষে চলে গেলেন শুটিংয়ে।
সবাই মনোযোগী কাজে। দৃশ্যটা ছিল এমন, তিশার সঙ্গে মহল্লার রাস্তায় দেখা হয় ইরফান সাজ্জাদের। তারা দুজন দুই ধর্মের হলেও পরস্পরের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ইরফান সাজ্জাদের ফোন না থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না তিশা। কেন ফোন নেই জানতে চাইলে মাথা চুলকিয়ে সাজ্জাদ বলেন, জুতা কেনার টাকা নেই বলেই ছেঁড়া জুতায় পেরেক মেরে চলছি, আর ফোন কিনব কীভাবে?
একথা শুনেই তিশার মন গলে যায়। মলিন মুখে ইরফানকে ফোন কেনার জন্য কিছু টাকা দেন তিশা। কিন্তু প্রথমে সে নিতে রাজি না হলেও তিশার ধমকে টাকাটা নেয়। এরপর তিশাকে তার ভার্সিটি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যেতে চায়। তখনই তিশার মনে ভালোবাসার ফুল ফোটে। আবদার করে সাজ্জাদের চোখ থেকে চশমা খুলে নিজের ওড়না দিয়ে চশমার ধুলো মুছে দেয় তিশা।
দুবারেই শট ওকে! নির্মাতা বান্নাহ বেশ খুশি হয়ে বলেন, জোশ হয়েছে। একবারে পারফেক্ট! এরপর তাদের পরবর্তী দৃশ্যের জন্য পোশাক পরিবর্তন করতে বলেন। এই ফাঁকে চ্যানেল আই অনলাইনকে নির্মাতা বান্নাহ বলেন, আমাদের চারপাশে দেখা যায় ভালবাসা এখন সোশাল মিডিয়ায় বন্দি হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট বিষয় খেয়াল করলে যে ভালোবাসা দ্বিগুণ হয় সেটাই নাটকে দেখানো হবে।
যেমন প্রেমিকের চোখের চশমায় অনেকসময় ধুলো জমে থাকে। ওটা দেখে প্রেমিকা যদি চোখ থেকে নিয়ে ধুলোটা মুছে দেয় তখন দেখা যাবে তাদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়বে। যেমনটা নাটকে দেখিয়েছি। আরো অনেক ছোট ছোট ভালোবাসায় অনুভূতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
বান্নাহ বলেন, এই নাটকে গ্রাম্য, শহুরে এবং বিদেশ ফেরত মোট তিনটা ধাপে গল্প দেখানো হয়েছে। আমার প্রতিটি কাজের মধ্যে নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে। এই কাজে চেষ্টা করছি আগের মতো এই কাজটিতেও নতুনত্ব দিতে। ইরফান সাজ্জাদ বলেন, নাটকের গল্পটা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। গল্পটা আমি যখন পড়ি, তখন থেকেই মনে হচ্ছিল কবে কাজ করতে পারবো। এখানে আমি শিক্ষিত, অতিসাধারণ একজন বেকার যুবকের চরিত্রে অভিনয় করছি। তবে এতটুকু বলছি, নাটকটি দেখলে দর্শকরা শেষে ধাক্কা খাবেন।
এর ফাঁকে কথা হলো তানজিন তিশার সঙ্গে। তিনি জানালেন, এই নাটকে আমি সুপর্ণা নামের একটি হিন্দু মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমার বিশ্বাস দর্শকরা নতুন এক তিশাকে পাবেন।
লেখক ও গীতকবি মাহতাব হোসেনের গল্পে ইরফান সাজ্জাদ ও তানজিন তিশা জুটির এই নাটকের নাম ‘চশমায় লেগে থাকা ভালোবাসা’। বৃহস্পতিবার নাটকটির শুটিং শুরু হবে নারায়ণগঞ্জে। এরপর প্রচার হবে দেশে শীর্ষ একটি বেসরকারি চ্যানেলে।
ছবি: জাকির সবুজ