ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য রক্তদানের অধ্যায়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে যতখানি আলোকিত এবং আলোচিত ততটা উচ্চারিত বা আলোকিত নয় ১৯৬১ এর ১৯ মে আসামের রক্তাক্ত সংগ্রাম উপাখ্যান। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের ওপর আলোকপাত করেছেন সেমিনারের বক্তারা।
রাজধানীর প্রেসক্লাবে কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত এই সেমিনারে বাংলা ভাষার বিকৃতিতে বেসরকারী রেডিও এবং টেলিভিশন গণমাধ্যমের বড় দায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
‘বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের বাইরে’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করেছিল একাত্তর এর যাত্রী নামের একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হারুন হাবীব। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব, তার ধারাবাহিকতায় আসামের ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রবন্ধে তুলে ধরেন তিনি।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদ সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, লেখিকা-কবি ঝর্ণা রহমান, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, বাংলা একাডেমির পরিচালক তপন বাগচী, সাংবাদিক- কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সোহরাব হাসান প্রমুখ।
বাংলা একাডেমির পরিচালক তপন বাগচি ভাষার বিকৃতিতে গণমাধ্যমের বড় দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, টেলিভিশন এবং রেডিওগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিকৃত উচ্চারণের বাংলা তরুণ প্রজন্মকে নেতিবাচক ভাবে বাংলায় গড়ে তুলছে। বাংলায় অহেতুক বিভিন্ন ভাষার মিশ্রণ, অদ্ভুত উচ্চারণ এবং অভিব্যক্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
কবি মুহাম্মদ সামাদ বর্তমান তারুণ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাওয়ার ঢিলেমী এবং দেশের বাইরে বাংলা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আগ্রহী না হওয়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান তারুণ্যের চিন্তার গতিপথ, জানার বৈচিত্র্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইন্টারনেট আসক্তিতে। বিশেষত অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহারে।
আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল আসাম সরকারের অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। অথচ এ অঞ্চলের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল বাংলাভাষী। এই গণ আন্দোলনে ১৯৬১ সালের ১৯ মে ঘটে, সেদিন ১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে প্রাদেশিক পুলিশ গুলি করে হত্যা করে।