চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ইনস্টাগ্রামে আপনার সন্তান কী করছে?

দেশে অভিভাবক পর্যায়ে কতজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করছেন? আপনারা কি কখনো আপনাদের সন্তানের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলটি একবারের জন্যও ফলো করে দেখেছেন? যদি একবার দেখতেন…?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব-অপপ্রচার থেকে শুরু করে যেকোন অসামাজিক কর্মকাণ্ড রুখতে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র সর্বক্ষণ ব্যস্ত। অভিভাবক পর্যায়েও সরকারি উদ্যোগে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সচেতনতা। এমন সতর্ক পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের সকলের সামনে অদেখায় ঘটে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর একটি ঘটনা।

সকলের অলক্ষ্যে গড়ে উঠছে একটি ভয়ঙ্কর প্রজন্ম ‘ইনস্টাঃ প্রজন্ম’। যারা বাঙালি জাতির স্বকীয়তা এমনকি মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে গিয়ে আধুনিকতার নামে নগ্নতা এবং যৌনতাকে প্রকাশ্য উপলক্ষ হিসেবে নিয়েছে। আমাদের সামনে ঘটে গেলেও আমরা অধিকাংশই এটা জানতে পারছি না।

আধুনিকতার চরম শিখরের এ সময়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও যৌনতা কোনো প্রকাশ্য বিষয় নয়। প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও স্কুল-কলেজগুলোতে সিলেবাস ভুক্ত বয়ঃসন্ধি সম্পর্কিত শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুকাল আগেও ছিলো সমাজের একটি অংশের আপত্তি। যদিও সে পরিস্থিতির এখন অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে।

সেখানে যৌনতাকে প্রকাশ্যে এনে নিজেদের গরিমা জাহিরের প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়েছে আমাদেরই ছেলে-মেয়েরা। যাদের অধিকাংশই পেরোয়নি স্কুলের গণ্ডিও। এমনকি এ সদ্য হাইস্কুল ও লেভেল পার না করা ছেলে-মেয়েরা নিজেদের অপরের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে বায়োগ্রাফিতে লিখে রাখছে তার যৌন পারদর্শিতার বর্ণনা।

এরসঙ্গে থাকছে ব্যবহৃত ক্ষেত্রের বাইরে গিয়ে অপ্রচলিত বিশেষ বিশেষ শব্দের ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যবহারের। যার অবস্থান মজবুত করতে আবার ভিন্ন ভিন্ন ইমোজি।

যদি একটি উদাহরণ তুলে ধরি: বায়োগ্রাফির প্রথম শব্দটা ‘Taken’, স্বাভাবিক ভাবেই কারও চোখেই এটা অস্বাভাবিক মনে হবে না। এরপাশেই আবার ব্যবহার করা হয়েছে মধ্যাঙ্গুলি (?) আকৃতির একটি ইমোজি৷ তারপর পাশে বছর-মাস-দিন-ঘন্টা এবং তার সঙ্গীকেও মেনশন করে দেওয়া হচ্ছে। যা দিয়ে ব্যবহারকারী তার যৌন অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছেন।

এগুলো সাধারণ প্রচলন, এছাড়া বিভিন্ন বিকল্পভাবে কিংবা উপমা ব্যবহার করে যৌন অভিজ্ঞতা প্রকাশ করা এ মাধ্যমে নিজেকে বড় করে দেখানোর অন্যতম প্রচলিত কৌশল। যেগুলার প্রচলিত ভাবধারায় অর্থ দাঁড় করানো কষ্টকর। এক্ষেত্রে প্রোফাইলে থাকা ব্যবহারকারীর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গী, যেমন চোখের কাছে হাতটা আড়াআড়ি ভাবে তুলে ধরে কিংবা মাথার ঠিক মাঝামাঝি বরাবর হাত তুলে বিজয় বা ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শন করতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ অস্বাভাবিকভাবে জিহ্বা বাইরে বের করে নিজেদের পোট্রেট পোস্ট করতে দেখা যায়। ইনস্ট্রাগ্রামের জগতে যা স্পার্ম গ্রহণের স্মারক বোঝানো হয়।

ইমোজি ব্যবহারেরও এখানে ব্যবহারকারীরা খুবই কৌশলী। কয়েকটা উদাহরণ যদি তুলে ধরা হয়: ?- এই ইমোজি দিয়ে ব্যহারকারী নিষিদ্ধ সম্পর্কে আগ্রহী বলে বার্তা দেন, ?-? এ দুটি ইমোজি দিয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আহ্বান এবং সঙ্গম পরবর্তী পরিস্থিতি জানান দেওয়া হয়। এছাড়া, ? ? ?? ? এ ইমোজি গুলোর পর্যায়ক্রমিক ব্যবহার আরও বেশি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ। এমন করে ???????প্রতিটি ইমোজি-ই কোন না কোন বিশেষ ইঙ্গিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা হুট করে কারও পক্ষে বুঝে ওঠা কষ্টকর।

সবকিছু এভাবে প্রকাশযোগ্য নয়। ইনস্টাগ্রাম ইউজাররা নিজের ছবি বিশেষ অ্যাপ দিয়ে এডিট করে সারাদিনে ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছু ফলোয়ারদের সামনে তুলে ধরছে। ঠোঁটের ওপর ফুল বা আগুনের ট্যাটু লেপ্টে দিয়ে চুম্বন এবং বিকৃত ভঙ্গির ছবি অ্যাপে ঝাপসা করে তার পাশে ইংরেজি ‘প্লে’ লেখা, প্লের প্রতীকী চিহ্ন বসানো এবং সময়ের বর্ণনা দিয়ে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার বার্তা দিচ্ছে।

দিনদিন এ পরিস্থিতি ভয়াবহ থেকে ভয়াবহতর হচ্ছে। আমরা অনেক সময় ড্যান্সিং কারের কথা শুনেছি বা রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে অতিক্রম করতে দেখেছি। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে একজন ব্যবহারকারীর হ্যাংআউট হিস্টোরি লক্ষ্য করলাম। সেখানে কয়েকটি ভাগের প্রথম দুই তিনটিতে হোটেল রুমে বিছানার ওপর বসা একজনের (পুরুষ/নারী) পর্যায়ক্রমিক ছবি। এরপর রেস্টুরেন্টে বসে চারজনের দলের রাতের খাবার। সব শেষে একটি প্রাইভেট কারের পেছনের সারিতে বসে চার জনের বাড়ি ফেরা। এবং রাজধানীর কোন একটি ফ্লাইওভার অতিক্রমের সময় চার যাত্রীর যৌনতার রগরগে দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ। যা তারা নিজেরা নিজেদের মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। ভিডিওটি আলো আঁধারির এমন পর্যায়ে ধারণ করা যে, আপনি স্ক্রল করে গেলে চোখ এড়িয়ে যাবে।

তবে ভিডিওটি দেখলেই আঁতকে উঠবেন আপনারা। ওই কারে উপস্থিত থাকাদের একজনই ভিডিওটি তার স্টোরিতে ১৩ সপ্তাহ আগে পোস্ট করেছেন!

অন্যদের বোকা বানাতে গিয়ে নিজেদের যে অনাগত বিপদ তারা সামনে টেনে আনছেন হয়তো সেটা একটি বারের জন্যও তাদের মাথায় আসেনি। ভিডিও ও ছবি ভিত্তিতে বয়স বিবেচনায় এদের সকলেই স্কুল শিক্ষার্থী হবে।

আমার প্রশ্ন হলো ওই সকল অভিভাবকদের কাছে আপনার কোন বিবেচনায় আপনার সন্তানদের এতরাতে হ্যাংআউটে বাইরে পাঠালেন। অন্যকিছু না হলেও সন্তানের নিরাপত্তার কথাটি কি একটি বারের জন্যও তাদের মাথায় আসেনি।

অবক্ষয়ের এ লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। নয়তো সামনে ভয়ঙ্কর লজ্জাজনক জাগতিক মহাপ্রস্থান আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। যে আমাদের দায় হবে বাঙালির হাজার বছরের সামাজিক ও সাংস্কতিক মূল্যবোধ এবং স্বকীয়তা ধ্বংস রোধে নিশ্চুপ থেকে বিকারগ্রস্ত একটি প্রজন্মের হাতে দেশকে তুলে দেওয়ার।

এখনই সতর্ক না হলে আমাদের হারাতে হবে জাতির ভবিষ্যৎদের। যাদের হাতে যাবে দেশের ভবিষ্যতের নেতৃত্ব। আর মূল্যবোধের এ বিপর্যয় রোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে পরিবারকে, গুরুত্ব দিতে হবে পারিবারিক শিক্ষার প্রতি৷

আমাদের এখানে ইনস্টাগ্রামের যে ট্রেন্ডটা চলছে সেটা লস-অ্যাঞ্জেলসের ওপেন মাইন্ডার গ্রুপের অনুকরণে। এখানে তাদের কেউ কেউ নিজেদের ইনস্ট্রা মুক্তমনা বলেও নিজেদের পরিচয় দেয়।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)