বৈরি আবহাওয়ার সঙ্গে টাইগার দলে আতঙ্ক হিসেবে যোগ হয়েছিল ইনজুরি। মুশফিকের পর ইমরুল, এরপর আবার মুশফিক। দলের বিপদে প্রায় ভাঙ্গা আঙ্গুল নিয়েই পঞ্চম দিন মাঠে নেমেছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু একটি শর্ট বলে হেলমেট পরা অবস্থায়ও মাথায় আঘাত পান তিনি। ওয়েলিংটন টেস্টে সাড়ে তিন দিন দাপট দেখালেও মূলত ইনজুরির কারণেই সাত উইকেটে প্রথম টেস্টে হার মানতে হল বাংলাদেশকে।
পঞ্চম ও শেষ দিনে সফরকারীদের দেয়া ২১৭ রানের জয়ের লক্ষ্য স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড তিন উইকেট হারিয়ে পৌঁছে যায়। টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান বা এর বেশি ম্যাচ হারার কোনো রেকর্ড নেই। সেই রেকর্ডই ভেঙে দিল আজ বাংলাদেশ। টেস্টে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করে হারের রেকর্ডটি ১২২ বছরের পুরনো। ১৮৯৪ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৮৬ রান করেও হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া।
চতুর্থ ইনিংসে তৃতীয় উইকেট জুটিতে কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেলর ১৬৩ রান যোগ করেন। রস টেলর ৬০ রান করে শুভাশিষের বলে আউট হলেও ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করেননি অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ৯৯ রানে থেকে চার মেরে সেঞ্চুরি করার পরের বলেই জয়সূচক রান তুলে নেন তিনি।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে দুটি উইকেট নেন মেহেদি মিরাজ। একটি উইকেট দখল করেন শুভাশিস।
এর আগে ২১৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দেখে শুনেই শুরু করেন কিউই দুই ওপেনার টম লাথাম ও জীৎ রাভাল।মিরাজের জোড়া আঘাতের পর নিউজিল্যান্ডের হয়ে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়েন রস টেলর ও কেন উইলিয়ামসন জুটি। এই দুই তারকা চা বিরতির আগে ৫২ রানের পার্টনারশীপ গড়েন।
স্কোর: বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ৫৯৫/৮ (ডিক্লেয়ার), দ্বিতীয় ইনিংস ১৬০/৯
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৫৩৯, নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ২১৭/৩
দলীয় ৩২ রানের মাথায় কিউই শিবিরে প্রথম আঘাত আনেন মেহেদি মিরাজ। তার ফ্লাইটেট ডেলিভারীতে ড্রাইভ করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন জীৎ রাভাল। বামপাশে ঝাঁপিয়ে বল তালুবন্দি করেন মিরাজ।
দলীয় ৩৯ রানে আবারো মিরাজের আঘাত।প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৭৭ রান করেছিলেন টম লাথাম। দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে আটকে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৬ রানে শেষ লাথামের ইনিংস। মিরাজের বল লাথামের ব্যাট ছুঁয়ে আঘাত করে স্ট্যাম্পে।
৩৯ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় কিউইরা। তবে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেলর ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন দলে কোন প্রকার চিন্তার প্রভাব ফেলতে দেয়নি। দু’ব্যাটসমান ই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে গেছেন।
ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি তুলে নেন উইলিয়ামসন। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান ব্যাটিংও করেছেন ঝড়ো গতিতে। শেষ পর্যন্ত ৯০ বলে ১৫ চারে ১০৪ রান করেন।
অপরদিকে টেইলর করেন ৬০ রান। তবে ৭৭ বলে ছয়টি চারের ইনিংস সাজান।
প্রথম ইনিংসে প্রায় ৫৮৫ করেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টের শেষদিনের হার এড়াতে লড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৫৬ রানে লিড নেয়া বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৬৬ রান নিয়ে শেষদিনের খেলা শুরু করে।
পঞ্চম ও শেষ দিনের শুরুতে যতটা দায়িত্বশীল ব্যাটিং দরকার ছিল, তা করতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুতে বাজে শটে ফেরেন সাকিব আল হাসান। উইকেট ছুড়ে আসেন মুমিনুল হকও।
সাকিব শূণ্য এবং মুমিনুল ২৩ রানে আউট হওয়ার পর হাল ধরেছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর। সাব্বিরের সঙ্গে চমৎকার জুটিও গড়ছিলেন টেস্ট অধিনায়ক। ১৩ রান করার পর আঙুলে চোট নিয়ে লড়াই করা মুশফিকুর রহিম মাঠ ছাড়েন অ্যাম্বুলেন্সে করে।
টিম সাউদির শর্ট বল তার মাথার পেছনে হেলমেটে আঘাত হানে। ওয়েলিংটন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বাংলাদেশ পড়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে। এরপর ট্রেন্ট বোল্টের দারুণ এক ইয়র্কারে ফিরেন তাসকিন আহমেদ। মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৩৭ রান করে ১৯৩ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ।
রাব্বির আউটের পর দলের জন্য ব্যাটিং করতে নামেন গতকাল আহত অবস্থায় মাঠ ছাড়া ইমরুল কায়েস। ক্রিজে নেমে দ্বিতীয় বলে চার হাঁকান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন সাব্বির রহমান। ১০১ বলে ৯টি চারে ৫০ রান করে বোল্টের বলে আউট হন তিনি।
টাইগারদের পরিস্থিতি হতে পারতো আরও খারাপ। প্রথম সেশনে তিনটি ক্যাচ ছেড়েছেন নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডাররা। লাঞ্চের আগে দ্বিতীয় শেষ বলে ফিরে যেতে পারতেন সাব্বির। অন্য প্রান্তে থাকা কামরুলের পরামর্শে রিভিউ নিয়ে টিকে যান তিনি।
কিউই বোলারদের মধ্যে সফলতম বোলার ট্রেন্ট বোল্ট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট নেন তিনি। মিচেল স্যান্টনার ও নেইল ওয়াগনার নেন দুটি করে উইকেট। সাউদি পান একটি উইকেট।
এর আগে সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমের মহাকাব্যিক জুটি এবং মুমিনুল হক, তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানের হাফসেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানের পাহাড় গড়ে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিক রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের জুটি গড়লে বিশাল সংগ্রহ পায় টাইগাররা।
টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা সাকিব ২৭৬ বলে ৩১টি চারের সাহায্যে ২১৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন। মুশফিক করেন ১৫৯ রান। এছাড়া টাইগারদের হয়ে মুমিনুল ৬৪, সাব্বির ৫৪ ও তামিম করেন ৫৬ রান।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে নেইল ওয়াগনার চারটি এবং ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি নেন দুটি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড টম ল্যাথামে ১৭৭ এবং মিচেল স্যান্টনার ৫৩৯ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে।
বাংলাদেশের হয়ে কামরুল ইসলাম রাব্বি সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও অভিষিক্ত শুভাশিস রায় নেন দুটি করে উইকেট। আরেক অভিষিক্ত তাসকিন আহমেদ নেন একটি উইকেট।