ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টুয়েন্টি সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়া হল না বাংলাদেশের। সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া হল টাইগারদের। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষটিতে ৩০ রানে জিতে ম্যাচের সঙ্গে সিরিজ ২-১এ নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিকরা।
রোববার হ্যাটট্রিকসহ মাত্র ৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন পেসার দীপক চাহার। এটি টি-টুয়েন্টির ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগার।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কথা কারটা ছেড়ে কারটা বলা যাবে। দুজন ব্যাটসম্যান ছাড়া অন্য কেউ ডাবল ফিগারেই যেতে পারেননি। শেষ আট উইকেট গেছে মাত্র ৩৪ রানে। তারা অলআউট হয় চার বল বাকি থাকতে।
অথচ সিরিজের গল্পটা শুরু হয়েছিল অন্যভাবে। আট সাক্ষাতের পর ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টুয়েন্টি জয় পায় বাংলাদেশ। দিল্লিতে ৭ উইকেটে জেতার পর সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ আসে টাইগারদের সামনে। কিন্তু দিল্লি থেকে রাজকোট যেতেই প্রত্যাবর্তনের গল্প। সবটাই অবশ্য ভারতের। রাজকোটে রাজকীয় জয়ের পর নাগপুরে জিতে সিরিজ জিতে নিল রোহিত শর্মার দল।
১৭৫ রানের টার্গেট। নাগপুরের পিচ বিবেচনায় যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। এমন টার্গেটে শুরুটা যেমন হওয়া দরকার, মোটেও তেমনটা হয়নি। তিন ওভার আর স্কোরবোর্ড দুই অঙ্ক (১২) ছুঁতেই দুই উইকেট হাওয়া। ফলে শুরুর চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং দাঁড়ায় বাংলাদেশের সামনে।
তবে শুরুর ধাক্কাটা আর বড় হতে দেননি নাঈম শেখ। তার দুর্দান্ত ফিফটিতে ট্র্যাকে ফেরে বাংলাদেশ। মাত্র ৩৩ বলে ফিফটি পূরণ করেন ২০ বছর বয়সী এ তরুণ। ধীরে ব্যাট চালালেও তাকে ভালো সঙ্গ দেন মোহাম্মদ মিঠুন। দুজনে মিলে জুটিতে ৬১ বলে তোলেন ৯৮ রান। যার মধ্যে নাঈমেরই ৬৮।
নাঈম-মিঠুনের জুটি লম্বা হওয়ার সঙ্গে ম্যাচও ক্রমেই বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকতে থাকে। চাপ বাড়ে ভারতীয় বোলার-ফিল্ডারদের উপর। ভারতীয়দের শারীরিক ভাষায়ও সেটা স্পষ্ট ছিল। একটা সময় মনেই হয়নি, এই ম্যাচ বাংলাদেশ হারতে পারে, তাও আবার এমন ব্যবধানে!
কিন্তু এরমধ্যেই বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান মিঠুন। দীপক চাহারকে উড়িয়ে খেলতে গিয়ে মিডঅফে কেএল রাহুলের হাতে ধরা পড়েন। তার ২৭ রানের চেয়ে মোকাবেলা করা বলের সংখ্যা বেশি (২৯)।
মিঠুন ফিরলেও ম্যাচেই থাকত বাংলাদেশ। কিন্তু বিপদ বাড়ে মুশফিকুর রহিমের আউটে। প্রথম ম্যাচের হিরো, এই ম্যাচে জিরো। সিভম দুবের বলে লেটকাট করতে গিয়ে উইকেটেই বল টেনে আউট হন মুশি।
অন্যরা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও নাঈম ছিলেন নিজের মতো। একের পর এক চোখ জুড়ানো শটে মাতাতে থাকেন তিনি। যে যুজবেন্দ্র চাহাল আগের দুই ম্যাচে ভুগিয়েছেন, তাকেও টানা তিনটি চার মারেন। কিন্তু মুশফিকের মতো তিনিও ধরাশায়ী ধীরগতির দুবের। সরাসরি বোল্ড হন। যাওয়ার আগে অবশ্য ৪৮ বলে দশ চার দুই ছক্কায় ৮১ রানের ইনিংস খেলে যান।
ছোট-বড় মিলিয়ে চারটি জুটি ভারতকে বড় স্কোর গড়তে সাহায্য করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এখানেও পিছিয়ে পড়ে। নাঈম-মিঠুনের ওই একটা জুটি ছাড়া আর কোনো জুটি কুরির ঘরও ছাড়াতে পারেননি।
হতাশ করেন উঠতি তারকা আফিফ হোসেনও। সৌম্য-মুশফিকের পর তিনি ফেরেন শূন্য রানে। ১১০-১২৬, এই ১৬ রানের ব্যবধানে মিডঅর্ডারের তিন উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১৪৪ রানেই গুটিয়ে যায় ইনিংস।
এর আগে আট বলে লিটন দাস করে যান ৯ রান। এরপরই বিপদ বাড়ান সৌম্য সরকার। এক বলের বেশি খেলতে পারেননি তিনি।
দীপক চাহারের বলে দুবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। এক বলের বেশি না খেলতে পারায় রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি। ওয়াশিংটন সুন্দরের ক্যাচ বানিয়ে সৌম্যকেও ফেরান চাহার।
চাহারের ৬ উইকেট ছাড়াও দুবে তিনটি ও চাহাল একটি উইকেট নেন।
তিন ম্যাচের সিরিজ ফলাফল ভারত ২, বাংলাদেশ ১। এরপর শুরু হবে দুদলের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। যার প্রথমটি শুরু ১৪ নভেম্বর, ইন্দোরে। পরেরটা ২২ নভেম্বর ইডেনে।