বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাস এই বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ‘তীব্র নেতিবাচক‘ অবস্থায় ফেলে দেবে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ। মহামারীর দীর্ঘস্থায়ীত্ব বিগত সময়ের মহামন্দার পর সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে অর্থনীতি বিশারদরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার পর থেকে সবচেয়ে মন্দ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ব।
তিনি বলছেন, প্রথমে মনে হয়েছিলো, ২০২১ সালে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু তার আর সম্ভাবনা নেই। বিভিন্ন দেশের লকডাউন ব্যবস্থা দেশে দেশে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক ছাঁটাইয়ে বাধ্য হচ্ছে।
জাতিসংঘের একটি সমীক্ষা বলছে, ৮১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ৩.৩ বিলিন শ্রমিকের কাজ পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিবিসিকে আইএমএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জর্জিভা বলেন, এতে উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর তা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন হবে শত শত বিলিয়ন ডলার সহায়তা।
তিনি বলেন, মাত্র তিন মাসে আগে ২০২০ সালে আমরা ১৬০ সদস্য দেশের সন্তোষজনক মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি আশা করেছিলাম। কিন্তু করোনা সেটা ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমরা এখন ভাবছি, এ বছর ১৭০টির বেশি দেশ মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির নেতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।
‘প্রকৃতপক্ষে ১৯৩০ এর মহামন্দার পর এই প্রথম সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পূর্বাভাস দেখছি। পরিস্থিতি যতটা খারাপ মনে হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি খারাপ হতে পারে। কারণ মহামারী কতোদিন থাকবে তা অনিশ্চিত‘।
মূলত জর্জিভার এই আশঙ্কাকে আরো দীর্ঘায়িত করছে আমেরিকার বেকারত্ব হার বৃদ্ধি। দেশটিতে ৬.৬ মিলিয়ন লোকের বেকারত্বের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মার্কিন ফেডারেল রির্জাভ বলেছে, করোনা মোকাবিলায় সহায়তার জন্য অতিরিক্ত ২.৩ ট্রিলিয়ন অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার ওপর ৯৫ শতাংশ লোক লকডাউনের আওতায় চলে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম সতর্ক করে বলেছে, কোভিড ১৯ এর বিস্তারের কারণে অর্ধ বিলিয়ন লোক দারিদ্রের দিকে ঝুঁকতে পারে এবং মহামারী শেষে বিশ্বের ৭.৮ বিলিয়ন লোক দারিদ্রের দিকে ঝুঁকতে পারে।
সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘের শ্রমসংস্থা সতর্ক করেছে যে, এই মহামারীর কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে গুরুতর সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।
গত মাসে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) সতর্ক করেছে, বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে।
সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাঞ্জেল গুরি বলেছেন, ২০০১ সালের ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলা এবং ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পরে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় রকমের ধাক্কা এটি।