প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারতের হার, নকআউটের লড়াই জমিয়ে দিয়েছে আরও! নিজেদের দিনে যেকোনো দলই ফেভারিট। স্বাগতিক ইংল্যান্ড তো সেখানে হট-ফেভারিটই। ছেড়ে কথা বলার নয় অস্ট্রেলিয়াও। আরেক সেমির মহারণ তাই জমারই অপেক্ষা।
কয়েকঘণ্টা পরই দ্বিতীয় সেমিতে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। এজবাস্টনে জয়ী দলটি আগামী রোববার লন্ডনের ঐতিহাসিক লর্ডস স্টেডিয়ামে শিরোপার মঞ্চে কিউইদের প্রতিপক্ষ হবে।
গ্রুপপর্বে ৯ ম্যাচের ৬টিতে জয় , ২টিতে হার ও একটি পরিত্যক্ত ম্যাচের সুবাদে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেখানে কঠিন কয়েকটি বাধা পেরিয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় দল হিসেবে সেমির টিকিট কাটে ইংল্যান্ড।
সেমিফাইনালে যেতে হলে লিগপর্বের শেষ দুই ম্যাচে জিততেই হবে- এমন সমীকরণ মিলিয়ে শেষ চারে আসে ইংল্যান্ড। আর নিজেদের শেষ লিগ ম্যাচে ধুঁকতে থাকা সাউথ আফ্রিকার কাছে হেরে শীর্ষস্থান ছোঁয়ার আশা হাতছাড়া করে অস্ট্রেলিয়া।
দুই হট-ফেভারিটের লড়াই। বিশ্বকাপের ইতিহাস অবশ্য চোখ রাঙানি দিচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। আটবারের সাক্ষাতে অস্ট্রেলিয়ার ছয় জয়ের বিপরীতে ইংল্যান্ড যে জিতেছে মাত্র দুটিতে। চলতি বিশ্বকাপে লিগপর্বের ম্যাচে আবার মরগানদের হারাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ফিঞ্চ-ওয়ার্নারদের।
১৯৯২ সালের পর বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে আর হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। ২৭ বছরের খরা কাটাতে পারলে ফাইনালে পা, শিরোপা থেকে এক কদম দূরে, মরিয়াই থাকবে স্বাগতিকরা। কেবল পরিসংখ্যানই একটু অস্বস্তি দিচ্ছে না ইংল্যান্ডকে। ১৯৯২ সালের পর আর একবারও যে নকআউট পর্বে জয় পায়নি থ্রি-লায়ন্সরা।
অন্যদিকে নকআউট পর্বে অস্ট্রেলিয়া বলতে গেলে অপ্রতিরোধ্য। ২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হার বাদ দিলে নকআউট পর্বে অজিদের জয়জয়কার। ১৯৯২ সালের পর যেখানে ইংল্যান্ড একবারও ফাইনাল খেলতে পারেনি, সেখানে অস্ট্রেলিয়া পাঁচবার ফাইনাল খেলে চারবারই শিরোপা জিতেছে। সবমিলিয়ে ষষ্ঠ এবং টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্ন দেখতেই পারে অজিরা।
এজবাস্টনের ইতিহাস আবার ইংল্যান্ডকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। এই মাঠে সর্বশেষ ১০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের দশটিতেই জয় পেয়েছে ইংলিশরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চাঙা হয়েই মাঠে নামবে স্বাগতিকরাও।
এজবাস্টনের ইতিহাস যেখানে ইংল্যান্ডকে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে, সেখানে অস্ট্রেলিয়াকে ভয় দেখাচ্ছে। ২০০১ সালের পর এজবাস্টনে যে আর জয় পায়নি পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
ফাইনালে ওঠার ম্যাচে দুই দলই টসে জিতলে এজবাস্টনে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চাপের ম্যাচে রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ কে নিতে চাইবে! চলতি বিশ্বকাপে রান তাড়ায় খুব একটা সফলতা পায়নি দলগুলো। প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের ২৩৯ রান তাড়া করতে নেমে ১৮ রানে হেরেছে ভারত।
নজর থাকবে যাদের উপর
জস বাটলার (ইংল্যান্ড): অনায়াসে বিগশট খেলতে পারেন জস বাটলার। হাই-স্কোরিং কিংবা লো-স্কোরিং ম্যাচ, যেটাই হোক না কেনো, হার্ডহিটার ব্যাটসম্যানরাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বাটলারের জুড়ি মেলা ভার। অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী বোলিং অ্যাটাককে মুহূর্তেই এলোমেলো করে দিতে পারেন এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
মার্কাস স্টয়নিস (অস্ট্রেলিয়া): অস্ট্রেলিয়ার মিডল-অর্ডারে আস্থার নাম মার্কাস স্টয়নিস। শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারেন এ অজি অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও সমান দক্ষ তিনি। বোলিং বৈচিত্র্য দিয়ে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে সক্ষম। সেমির মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে ইংল্যান্ডের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন অজি তারকা।
টিম নিউজ
অস্ট্রেলিয়া একাদশে যে পরিবর্তন আসছে সেটি ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছেন দলনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। উসমান খাজা ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়ায় স্কোয়াডে যুক্ত হওয়া পিটার হ্যান্ডসকম্ব সরাসরি একাদশে ঢুকবেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ইনজুরি কাটিয়ে অনেকটাই ফিট হয়ে উঠেছেন। তবে ম্যাথু ওয়েড একাদশে যুক্ত হওয়ায় নিজের জায়গা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়লেন অফফর্মে থাকা ম্যাক্সি।
অন্যদিকে ইংল্যান্ড দলে কোনো ইনজুরি সমস্যা নেই। সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙার সম্ভাবনা কম ইংলিশদের। ফলে মঈন আলিকে একাদশের বাইরেই থাকতে হতে পারে।
সম্ভাব্য একাদশ
ইংল্যান্ড: জনি বেয়ারস্টো, জেসন রয়, জো রুট, ইয়ন মরগান, বেন স্টোকস, জস বাটলার, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, জফরা আর্চার, লিয়াম প্লাঙ্কেট ও মার্ক উড।
অস্ট্রেলিয়া: অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, অ্যালেক্স কারি, প্যাট কামিন্স, নাথান কোল্টার-নাইল, মিচেল স্টার্ক ও নাথান লায়ন।