আসন্ন দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে দল মনোনীত চূড়ান্ত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ উপচে পড়ছে।
গত তিন দিনে তৃণমূল নেতারা এসব অভিযোগ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।
লিখিত এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—অর্থের বিনিময়ে বিএনপির নেতা, রাজাকারের সন্তান-নাতি, ইয়াবা ব্যবসায়ী, হত্যা মামলার আসামিসহ বিতর্কিত বিত্তশালীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে বঞ্চিত হয়েছেন সৎ, নিবেদিত ও ত্যাগী নেতারা।
আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এরই মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গেল ১০ অক্টোবর ঢাকা বিভাগের ৮ জেলা, সিলেট বিভাগ এবং রাজশাহী বিভাগের একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে।
মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে শরীয়তপুর সদর উপজেলা আংগারিয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক আসমা আক্তার। তার বড় ভাই বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মো. আ. হক। আসমা আক্তারের স্বামী বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-ড্যাবের নেতা।
আওয়ামী লীগ ঘোষিত দল মনোনীত আরেক প্রার্থী হলেন পটুয়াখালী সদর উপজেলাধীন মরিচবুনিয়া ইউনিয়নে মো. আসাদুল ইসলাম আসাদ । তার আপন বড় ভাই মো. রফিকুল ইসলাম মুন্সি মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক। এছাড়া আসাদের আপন মামাশ্বশুর মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক। আসাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাই বিএনপি মতাদর্শে বিশ্বাসী।
এতে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা হতাশ। বরিশাল জেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ এবার এমন একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে, যিনি অতীতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং সাবেক সহসভাপতি ছিলেন।
বগুড়ায় ২০ ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে কেউ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, কারো বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, কেউ মানবিক সহায়তার অর্থ আত্মসাৎকারী। আবার কারো বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কাটা, মাদক ব্যবসা, বিরোধী দলের সঙ্গে ব্যবসা করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এতে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
নাটোরের বড়াইগ্রামে একটি ইউপিতে জামায়াত নেতার মেয়েকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলার ৬ নম্বর মাগুরা-ঘোণা ইউনিয়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহসভাপতি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তাদের মনোনয়ন না দিয়ে সাবেক যুবলীগ নেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সদরের কুতুবপুরে ইউপি নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল আলমকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তাকে দলটি বহিষ্কার করে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। মনিরুল আলম নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী সাংসদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
মনিরুল আলমকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
অন্যদিকে কেন্দ্রে অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলেও বিক্ষোভ করছেন অনেক নেতাকর্মী। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ৭ নম্বর কাজীরবেড় ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী একজন চিহ্নিত রাজাকারের সন্তান বলে তৃণমূল নেতারা অভিযোগ করেছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের করা রাজাকারের তালিকায় তার বাবার নাম ১০১ নম্বরে। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছেন।
তথ্য গোপনের কারণে বিতর্কিত কেউ মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রার্থী বদলাবে আওয়ামী লীগ।