বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক রোবোটিক্স প্রতিযোগিতা ‘ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ’ ‘ইউআরসিতে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’ এমআইএসটি’র দল ‘মঙ্গল বারতা’। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র অঙ্গসংগঠন ‘মার্স রোভার সোসাইটি’ প্রতিবছরই যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যের মরুভূমিতে বিশেষ পরিমণ্ডলে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এবারের প্রতিযোগিতা হয়েছে ভার্চুয়াল পরিসরে।
এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৮টি টিম আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত যাচাই-বাছাই শেষে ৩৬টি টিম নির্বাচিত হয়। করোনা পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত ১৫টি দল ফাইনালে অংশ নেয়। বাংলাদেশ থেকে দু’টি দল অংশ নিয়েছিলো। এমআইএসটি’র ‘মঙ্গল বারতা’ ছাড়াও ছিলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির টিম ‘মঙ্গল তরী’ –যারা সবমিলিয়ে ৪র্থ স্থান অর্জন করে।
রোভার হচ্ছে এক ধরনের বিশেষ রোবোটযান, যাকে অন্য গ্রহ বা উপগ্রহের পৃষ্ঠে পৃথিবী থেকে নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানো হয় এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই সক্ষমতা পরীক্ষায় ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জে অংশ নেয়া দলগুলোকে কয়েকটি মিশন দেয়া হয়। ‘ইক্যুইপমেন্ট সার্ভিসিং মিশন’-এ রোভার দিয়ে এমনসব যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করানো হয়, যা আদতে মানুষের জন্য নির্মিত। এর মধ্যে ছিলো, একটি ড্রয়ার খোলা, একটি টুলবক্স নিয়ে সেই ড্রয়ারে রাখা, কিবোর্ডে নির্দিষ্ট কমান্ড চাপা এবং একটি স্ক্রু টাইট করা। ‘অটোনোমাস ন্যাভিগেশন মিশন’-এ রোভারকে মানুষের নিয়ন্ত্রণ বা সাহায্য ছাড়াই নির্দিষ্ট একটি পথ পারি দিতে হয়। আরও ছিলো ‘এক্সট্রিম রিট্রিভাল এন্ড ডেলিভারি মিশন’ – যেখানে রোভারকে মঙ্গলের মতো রুক্ষ ও চ্যালেঞ্জিং ভূপৃষ্ঠে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ভার্চুয়াল পরিসরে এই মিশনটি পুরোপুরিভাবে পরীক্ষার সুযোগ ছিলো না। তাই ছোট ছোট বিকল্প কিছু মিশনের মাধ্যমে রোবোটের সক্ষমতা যাচাই করা হয়।
মিশনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অর্ধশত সদস্যের মঙ্গল বারতা দল গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নিরলস কাজ করেছে। শেষ পর্যন্ত গত ১ থেকে ৫ জুন প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। এমআইএসটি’র মঙ্গল বারতা দলের নেতৃত্বে ছিলেন আকিব জামান।
দলের সদস্যরা জানান, মঙ্গল বারতা শুরু থেকেই প্রতিযোগিতায় ভালো স্থান অর্জনে সচেষ্ট ছিলো। বাংলাদেশে রোবোটিক্সের উপকরণ সুলভ নয়, আর এ ধরনের প্রতিযোগিতার জন্য প্রয়োাজনীয় যন্ত্রাংশ প্রায়ই অন্য দেশ থেকে আনাতে হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এসব বাধা উৎরানো গেছে সুষ্ঠু সমন্বয়ের কারণে, জানায় মঙ্গল বারতা।
পৃথিবী থেকে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক রোভার পাঠানো হয়েছে আমাদের সৌরজগতের প্রতিবেশী মঙ্গল গ্রহে। আর তাই এই গ্রহে রোভার পাঠানো এবং নিত্যনতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা ও বিনিয়োগ অনেক বেশি। বৃহৎ এই কর্মযজ্ঞেরই অংশ ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় লাল-সবুজের জয়জয়কারে দারুণ উচ্ছ্বসিত মঙ্গল বারতা টিম। ‘বাংলাদেশের মঙ্গল-প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা’র স্লোগানে উদ্ভাবণের নতুন দুয়ার খুলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় টিম মঙ্গল বারতা।