তিনি দর্শক নন্দিত নির্মাতা। চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা অসঙ্গতির বাস্তব চিত্র তুলে আনেন নির্মাণে। এটাই বোধহয় তার ‘সিগনেচার’! বারবার নিজের নামের সুবিচার করা মানুষটি আশফাক নিপুণ। ঈদুল আযহার অসংখ্য নাটকের ভিড়ে তিনি তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন টার্ন প্রডাকশনে ব্যানারে নির্মিত দুই নাটক নিশো-অপি করিমের ‘ভিকটিম’ এবং নিশো-ঈশিতার ‘ইতি, মা’ এর মাধ্যমে। নিপুণে মুগ্ধ হয়ে প্রোডাকশন হাউজের এমডি আরাফাতুর রহমানও বললেন, ‘আশফাক নিপুণ ওয়ার্ল্ড ক্লাস নির্মাতা’। ঈদের দুই আলোচিত ফিকশন নিয়ে আশফাক নিপুণ কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
‘ভিকটিম’ এবং ‘ইতি, মা’ ফিকশন দুটির গল্প নির্বাচন কীভাবে?
আমি সবসময় সোসাইটির বিরুদ্ধে নানান ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করি। ভিকটিমের গল্প ভাবনা মাথায় আসে প্রায় একবছর আগে। গতবছর ‘হ্যাস ট্যাগ মিটু’ আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন দেশে সমালোচনা তুঙ্গে ছিল। সেবার রোযার ঈদ টার্গেট এ গল্পের আইডিয়া মাথায় নিয়েছিলাম। তিনদিন আমার টিমের সঙ্গে কাজ করে মনে হচ্ছিল, এতো সেনসেটিভ ইস্যুতে স্রোতের সঙ্গে মিলে কিছু করা উচিত নয়। আরেকটু সময় নিতে চেয়েছিলাম। তখন ‘ভিকটিম’ বন্ধ রেখে ‘মিস শিউলি’ বানিয়েছিলাম। পরবর্তীতে কোরবানির ঈদ যখন এলো, ‘হ্যাস ট্যাগ মিটু’ নিয়ে দুটি প্রোডাকশন হয়েছিল। অন্যরা যখন প্রোডাকশন বানিয়েই ফেললেন, তখন ঠিক করেছিলাম আপাতত আর না বানাই! একবছর আগে প্রোডাকশনটি তৈরি করলে হয়তো ওই স্রোতের সঙ্গে মিলেই করতে হতো। কিন্তু এখন ‘হ্যাস ট্যাগ মিটু’ জিনিসটা একেবারেই নেই। তাই এই গল্পটা আমি আগের থেকে পরিবর্তন করে উপস্থাপন করেছি। প্রচারের পর থেকে এটাই দর্শকরা লেখালিখি করছেন, ‘ভিকটিক আসলে কে’? যদি একবছর আগে করতাম, এই আইডিয়া আমার মাথায় আসতো না। শুটিং সেটে গেলেই আমার মধ্যে আইডিয়া ভর করে এবং ডায়ালগ লেখার প্রচুর এনার্জি আসে। বাসা থেকে এমদমই লিখতে পারিনা। আমার সব কাজেই আর্টিস্টরা সেটে গিয়ে স্ক্রিপ্ট হাতে পান।
গত ৫-৬ বছর ধরে আমি যেসব কাজ করেছি সেগুলো সোসাইটিতে ঘটে যাওয়ার ইস্যু নিয়ে। ব্যক্তিগত চাহিদা বা ইমোশনের জায়গা থেকে কাজ করা হয়নি। সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, একেবারে নিজের পছন্দমতো গল্প দেখিয়েছি ‘ইতি, মা’-তে। অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করলেও মা এবং ভাইবোনের গল্প নিয়ে কখনো কাজ করিনি। এটা ভেবে কাজটা মনের তৃপ্তির জন্য করেছি। চাইলে প্রেমের প্রসঙ্গ আনতে পারতাম। কিন্তু তা করিনি। আমার ব্যাক অব মাইন্ডে ছিল, মা! কাজটা দেখে অন্তত আমার মা খুশি হন। উনি যেন বলতে পারেন, আমার ছেলে মা এর গল্প নিয়ে কাজ করেছে।
আম্মা টিভিতে প্রচারের সময় দেখেছেন। আমার নানী যার অনেক বয়স তিনিও দেখেছেন। আমার সিনিয়র কাজিন, আন্টিরাও কাজটি দেখে কেঁদেছেন। আম্মা তো নাটক দেখে কান্না করে আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার জীবনে সেরা একটা কাজ হয়েছে। দেখো, মানুষ কী পরিমাণে কাজটা পছন্দ করে’। লাস্ট ৩৬ ঘন্টায় তাই খেয়াল করছি। যে পরিমাণে রেসপন্স পেয়েছি তা বলার ভাষা নেই। শুধু দর্শক নয়, মিডিয়ার আর্টিস্ট, পরিচালক, প্রযোজক একের পর এক ফোন করে প্রশংসা জানাচ্ছেন। ভালো গল্প পেয়েছেন, গল্পের মধ্যে বাহুল্য কিছু নেই এও জানিয়েছেন। শুধু ‘ইতি, মা’ নয়, ‘ভিকটম’-এর প্রশংসাও করছেন। সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের গল্পে সেক্সুয়াল কিছু না দেখিয়েও দর্শকদের টেনশন ক্রিয়েট করেছি এজন্য খুব পজিটিভলি বাহবা দিচ্ছেন সবাই।
অপি করিম ও ঈশিতার মতো গুণী শিল্পীদের সঠিকভাবে ব্যবহার করেছেন। তাদের দুজনকে দুই গল্পে নির্বাচনের বিশেষ কারণ আছে?
আমি আমার দর্শকদের কখনই হালকাভাবে নেই না। দর্শকের মূল্যবান সময় আমি নিচ্ছি। সবসময় মাথায় থাকে, আমার কাজ থেকেও যেন দর্শক মূল্য পায়। আমার গল্পের চরিত্রগুলোতে তাদের দুজনকে ডিম্যান্ড করছিল। দুই গল্পে হয়তো এসময়ের যাদের ক্রেজ রয়েছে তাদের নিতে পারতাম! পৃথিবীর সব ইন্ডাস্ট্রিতে এটা করা হয়। যার ক্রেজ বেশি তাকে নিয়ে ছোটাছুটি চলে। কিন্তু আমি তো বিষয় নির্বাচনে সেই ধাঁচের কাজ করিনা। আর্টিস্ট নির্বাচনেও তাই করেছি দর্শক যেন নতুন কিছু খুঁজে পায়। যেমন- এই বছরে ‘ভিকটিম’ ছাড়া দর্শক অপি করিমের কাজ পায়নি। ঈশিতাও এই বছরে আমার কাজটা আগেই করেছে। যারা রেগুলার কাজ করে না; অন্য রেগুলারদের চেয়ে তারা কাদামাটির মতো থাকে। কারণ প্রতিদিন শুটিংয়ে তারা অভ্যস্ত থাকে না। যখন অনেকদিন পর তারা কাজে আসছে, তাদের মধ্যে কাজের ক্ষুধাটা থাকে খুব বেশি। তাদের মধ্যেই ২০০ পারসেন্ট এফোর্ড দেয়ার অসম্ভব তাড়না থাকে। নির্মাতার জায়গা থেকে আমি এই বিষয়টা খুব এনজয় করি। আমি যখন মেহজাবীনকে নিয়ে কাজ করি, তখন সে যে ধরণের কাজ করে তার বাইরে ফেলার চেষ্টা করি। ‘এই শহরে’ কাজটা যারা দেখবে তারা বুঝবে। আর্টিস্টকে তার জোনের বাইরে কাজ দেয়াটা আমার কাছে পানিতে ফেলে দিয়ে সাঁতার শেখানোর মতো লাগে। চরিত্র হয়ে ওঠার জন্য তখন আর্টিস্টদের তীব্র চেষ্টা থাকে। তখনই চরিত্রটি ইউনিক হয়ে ওঠে। যারা মাসের বেশিরভাগ দিনই শুটিং করে তারাও হয়তো এটা পারতে পারে। কিন্তু নির্মাতার দিক থেকে আমি আমার ভালো লাগার বিষয়টা জানালাম। নাটকে ভিউ এবং ভাইরাল কনটেন্ট প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী? বিষয়গুলো কীভাবে দেখেন?
আমি আমার দর্শকদের কখনই হালকাভাবে নেই না। দর্শকের মূল্যবান সময় আমি নিচ্ছি। সবসময় মাথায় থাকে, আমার কাজ থেকেও যেন দর্শক মূল্য পায়। আমার গল্পের চরিত্রগুলোতে তাদের দুজনকে ডিম্যান্ড করছিল। দুই গল্পে হয়তো এসময়ের যাদের ক্রেজ রয়েছে তাদের নিতে পারতাম! পৃথিবীর সব ইন্ডাস্ট্রিতে এটা করা হয়। যার ক্রেজ বেশি তাকে নিয়ে ছোটাছুটি চলে। কিন্তু আমি তো বিষয় নির্বাচনে সেই ধাঁচের কাজ করিনা। আর্টিস্ট নির্বাচনেও তাই করেছি দর্শক যেন নতুন কিছু খুঁজে পায়। যেমন- এই বছরে ‘ভিকটিম’ ছাড়া দর্শক অপি করিমের কাজ পায়নি। ঈশিতাও এই বছরে আমার কাজটা আগেই করেছে। যারা রেগুলার কাজ করে না; অন্য রেগুলারদের চেয়ে তারা কাদামাটির মতো থাকে। কারণ প্রতিদিন শুটিংয়ে তারা অভ্যস্ত থাকে না। যখন অনেকদিন পর তারা কাজে আসছে, তাদের মধ্যে কাজের ক্ষুধাটা থাকে খুব বেশি। তাদের মধ্যেই ২০০ পারসেন্ট এফোর্ড দেয়ার অসম্ভব তাড়না থাকে। নির্মাতার জায়গা থেকে আমি এই বিষয়টা খুব এনজয় করি। আমি যখন মেহজাবীনকে নিয়ে কাজ করি, তখন সে যে ধরণের কাজ করে তার বাইরে ফেলার চেষ্টা করি। ‘এই শহরে’ কাজটা যারা দেখবে তারা বুঝবে। আর্টিস্টকে তার জোনের বাইরে কাজ দেয়াটা আমার কাছে পানিতে ফেলে দিয়ে সাঁতার শেখানোর মতো লাগে। চরিত্র হয়ে ওঠার জন্য তখন আর্টিস্টদের তীব্র চেষ্টা থাকে। তখনই চরিত্রটি ইউনিক হয়ে ওঠে। যারা মাসের বেশিরভাগ দিনই শুটিং করে তারাও হয়তো এটা পারতে পারে। কিন্তু নির্মাতার দিক থেকে আমি আমার ভালো লাগার বিষয়টা জানালাম। নাটকে ভিউ এবং ভাইরাল কনটেন্ট প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী? বিষয়গুলো কীভাবে দেখেন?
আমি কিন্তু ভিউয়ের বিপক্ষে না। ভিউ মাথায় নিয়ে যারা কাজ করে তাদের এপ্রিসিয়েট করি। ভিউবেইজড কাজ এবং অল্টারনেটিভ কাজ দুটোই পাশাপাশি বিরাজ করে। ইউটিউব ভিউ অবশ্যই ভালো, তবে কোনোভাবেই মান নির্ধারক নয়। একটা কাজের দর্শক কেমন হবে সেটা নির্ভর করে তার সামাজিক গঠনের উপর। পৃথিবীব্যাপী ধ্রুপদী বা ভালো কাজের দর্শক সবসময় লিমিটেড। সমাজ অনুযায়ী ধীরে ধীরে সেই দর্শক বাড়ে। সালমান খানের সিনেমা প্রথম দিনেই দুইশো কোটি টাকার ব্যবসা করে। কিন্তু নওয়াজ উদ্দিনের ক্যারিয়ারের সব সিনেমা মিলিয়েও হয়ত অত ব্যবসা হবে না! তারপরও তিনি কিন্তু কোনো অংশে ছোট নন। অ্যাভেঞ্জার্স সিনেমার জন্য মানুষ পাগল! কিন্তু পৃথিবীতে এর চেয়েও হাজার গুণ ভালো সিনেমা নির্মিত হয়। যেমন- ‘রোমা’।
আমাদের সমাজে রোমান্টিক, কমেডি ফিকশনের ভিউ সবচেয়ে বেশি হয়। দেশের মানুষ দুর্নীতি, খুন, দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক ইস্যুতে হাঁপিয়ে আছে। বেশিরভাগ দিনশেষে তারা এমন কনটেন্ট হয়ত খোঁজে যা দেখে তারা এসব সমস্যা থেকে কিছুক্ষণ দূরে থাকতে পারে। আমাদের ইয়ুথও কিন্তু বেশ ডিপ্রেসিং সময় পার করছে। তারা এমন একসময় বিলং করছে যে সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, কোটা আন্দোলন করে টিকে থাকা না থাকা, নিরাপদ সড়ক চাই, শেয়ার বাজারে লসসহ এমন আরও নানা ইস্যু চলমান! তারাও হয়ত যখন কোনো কাজ দেখে এসবের বাইরে কিছু খোঁজে। তবে তাই বলে শুধু এই একই ধরণের কাজ করলে তো চলবে না। আমাদের এখানেও ধীরে ধীরে ভালো কাজের দর্শক তৈরি হচ্ছে। আরও একটা বিষয় হচ্ছে, আমরা মোটা দাগে ভিউ সংখ্যা দেখি। কিন্তু যাচাই করিনা এটা দেশ থেকে কতজন দেখলো এবং দেশের বাইরে থেকে কতজন দেখলো। আমাদের দেশের জন্য অ্যালার্মিং হচ্ছে, ভিউ দেখে কাজের মান বিচার করা হচ্ছে। এটা খুবই ভুল স্ট্রেটেজি। কিছুদিন আগেও যাদের ফেসবুক ফলোয়ার্স বেশি, তাদের কাজে প্রধান্য দেয়া হতো। এজন্য অনেক ভালো ভালো শিল্পীর ফলোয়ার্স বেশি নেই বলে কাজ করতে পারেনি। পরিচালক নিতে চাইলেও লগ্নিকারকের দিক থেকে সাজেস্ট করা হতো অমুকের ফলোয়ার্স বেশি তাকে নিতে। আপনি যদি লক্ষ্য করেন অপি করিম আর ঈশিতার কিন্তু ফেসবুক কিন্তু লাখ লাখ ফেসবুক ফলোয়ার্স নেই। অথচ তাদের নিয়ে কাজ করেছি, প্রচুর মানুষ দেখছে, তাদের নিয়মিত কাজ দেখতে চাইছে। দিনশেষে ভালো কাজ থাকবেই। আরও একটা বিষয় হলো, আমাদের ভাইরাল হওয়ার পিছনে ছোটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কী শেয়ার করে ভাইরাল করছি তা খেয়াল করতে হবে। দায়িত্ব শুধু ক্যামেরার সামনে পেছনের লোকজনের না, টিভি, ইউটিউব স্ক্রিনের ওপাশে বসে থাকা দর্শকেরও।
সবসময় আপনি কাজ দিয়ে প্রশংসা অর্জন করেন। ‘ভিকটিম’ এবং ‘ইতি, মা’-এর প্রশংসাগুলো কেমন লাগছে?
করোনা আমাদের এমন সময় আঘাত করেছে যেটা আমাদের পিক সিজন। পহেলা বৈশাখ, রোযার ঈদ মাটি হয়ে গেছে। এই দুই উৎসবে আমার কোনো প্রোডাকশন আসে নাই। এ বছর আর কোনো বড় উৎসব নেই। তাই কাজ আসার সম্ভাবনা নেই। এবার ঈদে তিনটি প্রোডাকশন গেছে। সত্যি করে বলতে এতো প্রশংসা পাব আশাই করিনাই। ‘ভিকটিম’ এতো সেনসেটিভ একটা ইস্যু নিয়ে বানানো, আদৌ কজন আগ্রহ নিয়ে দেখবেন সন্দেহ ছিল। অমিতাভ রেজা, শিহাব শাহীন, দীপঙ্কর দীপনও আমার কাজ দেখে প্রশংসা করে লিখেছেন। নরেশ ভুঁইয়া, তৌকীর আহমেদ প্রত্যেকেই কাজ দেখে সাধুবাদ জানানোর জন্য ফোন করেছেন। এর বাইরে হাজার হাজার দর্শকের যে প্রতিক্রিয়া আমি আসলেই এতো প্রত্যাশা করি নাই, সত্যিই আপ্লূত। ফেসবুকে মিডিয়ার অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। এ বিষয়গুলো আমাকে সাহস দিয়েছে যে আরও ডায়ানামিকভাবে কাজ করা। এতটুকু আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, নিজে ও গল্প সৎ থেকে কাজ করলে দর্শকে স্পর্শ করবেই।
করোনা আমাদের এমন সময় আঘাত করেছে যেটা আমাদের পিক সিজন। পহেলা বৈশাখ, রোযার ঈদ মাটি হয়ে গেছে। এই দুই উৎসবে আমার কোনো প্রোডাকশন আসে নাই। এ বছর আর কোনো বড় উৎসব নেই। তাই কাজ আসার সম্ভাবনা নেই। এবার ঈদে তিনটি প্রোডাকশন গেছে। সত্যি করে বলতে এতো প্রশংসা পাব আশাই করিনাই। ‘ভিকটিম’ এতো সেনসেটিভ একটা ইস্যু নিয়ে বানানো, আদৌ কজন আগ্রহ নিয়ে দেখবেন সন্দেহ ছিল। অমিতাভ রেজা, শিহাব শাহীন, দীপঙ্কর দীপনও আমার কাজ দেখে প্রশংসা করে লিখেছেন। নরেশ ভুঁইয়া, তৌকীর আহমেদ প্রত্যেকেই কাজ দেখে সাধুবাদ জানানোর জন্য ফোন করেছেন। এর বাইরে হাজার হাজার দর্শকের যে প্রতিক্রিয়া আমি আসলেই এতো প্রত্যাশা করি নাই, সত্যিই আপ্লূত। ফেসবুকে মিডিয়ার অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। এ বিষয়গুলো আমাকে সাহস দিয়েছে যে আরও ডায়ানামিকভাবে কাজ করা। এতটুকু আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, নিজে ও গল্প সৎ থেকে কাজ করলে দর্শকে স্পর্শ করবেই।
স্বাধীনভাবে প্রোডাকশন সফল করতে নির্মাতা, শিল্পী ছাড়াও প্রোডাকশন হাউজের ভূমিকা থাকে। আপনার কাজগুলোতে এমন সহায়তা পেয়েছেন নিশ্চয়ই?
এবার আমার দুটি কাজই লাইভ টেকনোলজিসের টার্ন প্রোডাকশনের। এই প্রোডাকশন হাউজ যে পরিমাণে সাপোর্টে দিয়েছে এটা একজন পরিচালকের কাছে আশীর্বাদের মতো। আমি আমার মতো করতে কাজ করে চেয়েছি এবং পেরেছি। তারা কোনোভাবেই আমাকে আটকানোর চেষ্টা না করে পুরোপুরি স্বাধীনতা দিয়েছে। তারা বাজেট যথেষ্ট দিয়েছে কিন্তু কোনো কন্ডিশন দেয়নি। শিল্পী নির্বাচন, গান, গল্প সবকিছুতে আমার উপর ভরসা করেছে। এটা যে কতো বড় সাপোর্ট তা একজন নির্মাতাই জানেন। শুধু এতোটুকু বলেছে, এমন কোনো গল্প বানান যা দেখে মানুষ যে ভালো বলে আলোচনা করবে। সত্যি বলতে, তাদের মতো ভালো প্রযোজক ইন্ডাস্ট্রিতে কম দেখেছি। অনেক প্রযোজক বেশি টাকা দিতে চান কিন্তু কিছু শর্ত জুড়ে দেন। কিন্তু টার্ন থেকে কিছুই বলেনি। নির্মাতার উপর ভরসা রেখে নিঃশর্তভাবে কাজে সাপোর্ট দেয়ার মতো এমন প্রযোজকই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব দরকার।
আপনার কাজের সংখ্যা তুলনামূলক কম কেন?
আমি অনেক অলস। কোনো কাজের জন্য যদি আমাকে পুরস্কৃত করা হয়, তাহলে সেই পুরস্কারটা দেয়া উচিত আমার স্ত্রী এলিটাকে (এলিটা করিম, সংগীতশিল্পী)। শুটিং যখন নিকটে আসে সবচেয়ে কঠিন সময় যায় তার। অনেকের কাছে শুটিং এনজয় হলেও আমার কাছে যুদ্ধের মতো। যুদ্ধ শেষ করে আর আমার ইচ্ছে হয়না যুদ্ধ করতে। অন্য কারণ হচ্ছে, বেশি কাজ করলে কাজ নিয়ে ভাবা, পড়ার সময় বেশি পাবো না। ‘ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে প্রেম’ বানিয়েছিলাম ২০১৩ সালে। এখনো মানুষ দেখা হলে এ নাটকের নাম বলে। একবছর কাজ করে পরের দুবছর হারিয়ে যাওয়ার মতো কাজ করতে চাইনা। মানে স্লো এন্ড স্টেডি।
সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন গত ডিসেম্বরে। আপডেট কী?
করোনায় আমাদের প্রত্যেকের জীবনই স্থবির হয়ে গেছে! সিনেমা তো আর নাটকের মতো না যে তিন চারদিন শুটিংয়ে শেষ হয়ে যাবে। এটা ৩০-৪০ দিনের বড় ইউনিটের কাজ। প্যান্ডামিকের মধ্যে কাজ করা সম্ভব না। আমার সিনেমার গল্প পলিটিক্যাল থ্রিলারের, শুটিং হবে প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে। প্রি-প্রোডাকশন চলছে। এ অবস্থায় কাজ করাটা নিরাপদ মনে করিনা। সত্যি বলতে ২০২০ সালে পৃথিবীর কোথাও সিনেমার শুটিংয়ের উপযোগী হয়নি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ বছর কেউ সিনেমা শুরু করতে পারবে বলে মনে হয়না।