উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্ত্রী বন্যার পানি দেখতে গিয়ে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার সময় হাত ফসকে পানিতে পড়ে যায় শখের দামী মোবাইল ফোন। আর তা তুলতে ইউএনও খবর পাঠান ফায়ার সার্ভিসকে। তারপরে ৬ সদস্যের একটি ডুবুরি বহুকষ্টে কয়েক ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে মোবাইলটি উদ্ধার করে।
ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের স্ত্রীর মোবাইল ফোন নিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছিল নাটকীয়তা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, ডুবুরিদের ইউএনও’র স্ত্রীর মোবাইল উদ্ধারের ঘণ্টাব্যাপী অভিযান দেখতে স্থানীয় শত শত জনতা সেখানে হাজির হয়েছিল এবং ঘটনাটি ‘টক অব দ্য’ টাউনে পরিণত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস-১০ মডেলের মোবাইলটি তার স্ত্রীর খুব প্রিয়। তাই ফোনটি উদ্ধার করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য নেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের সেবাপ্রদানকারী একটি সংস্থাকে প্রজাতন্ত্রের আরেকজন সরকারি চাকুরে তার ব্যক্তিগত কাজে লাগাতে পারেন কিনা, তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। স্ত্রীর সেলফি বিলাস আর অসাবধনতায় মোবাইল ফোন তুলতে ৬ জন ডুবুরিকে বন্যার পানিতে কেনো নামানো হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন করছেন অনেকে।
মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপালনরত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন। তাছাড়া তারা অন্যান্য প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের চেয়ে একটু বেশিই সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিছুদিন আগে তাদের জন্য বরাদ্দের অপেক্ষায় থাকা কোটি টাকার গাড়ি বেশ আলোড়ন তুলেছিল। সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তা বিধিমালায় এ ধরণের কাজ সাংঘর্ষিক কিনা, তা হয়তো কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবেন। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে, ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আরো দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত ছিল ব্যক্তিগত কাজে ফায়ার সার্ভিস ডাকার আগে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ দেশের একটি খুবই দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। যারা বিভিন্ন দূর্যোগে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। আলোচিত হলেও বন্যার পানির প্রবল স্রোতের মধ্যে থেকে ইউএনও’র স্ত্রীর সামান্য মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে তারা আবারও তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন।
এখানে আরেকটি লক্ষ্যণীয় যে, জনগণের যেখানে সেখানে সেলফি তোলার অভ্যাস। অনেক গবেষণা প্রতিবেদনে এই বিষয়টি একটি মানসিক রোগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেলফি তুলতে গিয়ে অনেক ঘটনায় প্রাণহানিসহ নানা ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিভিন্নসময় জানা যায়। মাদারগঞ্জে বন্যার পানি দেখতে ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার ঘটনা সেলফির ক্ষতিকর প্রভাবের একটি উদাহরণ হয়ে থাকলো।
বন্যার পানি দেখতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্প্রতি বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, কাজেই সবারই এ ধরণের আচরণের আগে সাবধান হওয়া উচিত। সেইসঙ্গে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা যার যার অবস্থানে থেকে নৈতিক ও দায়িত্বশীল আচরণ করবেন বলেও আমাদের আশাবাদ।