যাদেরকে টুর্নামেন্টের শুরুতে ডার্ক হর্স বলা হচ্ছিল। তবে টুর্নামেন্টে মোটেই নিজেদের সুনাম অনুযায়ী প্রভাব ফেলতে পারেনি। প্রতিটি ম্যাচেই হার হজম করেছে। তাদের সেরা তারকা রশিদ খানের স্পিন ভেল্কিকে গোটা টুর্নামেন্টেই ভোঁতা দেখিয়েছে। যে সুযোগ নিয়ে এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৩৯৬ রানের স্কোর গড়েছিল ইংল্যান্ড। শক্তিমাত্রার বিচারে মনে করা হচ্ছিল ভারতও হয়তো ইংল্যান্ডের পথেই হাঁটবে! সেটা হল কই। আফগানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে সেখানে ভারত করতে পারল সবে ২২৪ রান।
চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলেছে আফগানিস্তান। তবে জয়ের গন্ধ পাননি গুলবাদিন নায়েবরা। পাঁচটি ম্যাচই হেরে ১০ দলের মেগা টুর্নামেন্টে ‘লাস্ট বয়’ তারা। সেই দলের বিপক্ষে জোড়া রেকর্ডের সামনে ছিল ভারত। আজ জিতলে বিশ্বকাপে ৫০তম জয়, আর সবচেয়ে কম ম্যাচে কোহলির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজার রান।
এমন ম্যাচে আফগানদের বিরুদ্ধে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কোহলি। ব্যাট করতে নেমেই ভারত সাত রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায়। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে রোহিত শর্মা এক রানের মাথায় মুজিব-উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে যান।
তখন ক্রিজে আসেন কোহলি। রাহুলের সঙ্গে সেট হতে বেশি সময় নেননি তিনি। কিন্তু রোহিত ফিরে যাওয়ার পর বেশিক্ষণ টেকেননি লোকেশ রাহুলও। ৫৩ বলে ৩০ রান করে আউট হন তিনি। মোহাম্মদ নবির বলে হজরতুল্লাহ জাজাইয়ের হাতে ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
লোকেশ রাহুল-বিরাট কোহলি জুটির মতোই বিরাট কোহলি-বিজয় শঙ্কর জুটিতেও হাফসেঞ্চুরি উঠেছে স্কোরবোর্ডে। তবে সেই হাফসেঞ্চুরি পেরোতেই আউট বিজয়। রহমত শাহের বল টার্ন করেনি। এতেই পরাস্ত হন বিজয় শঙ্কর। সুইপ খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ তিনি। প্রথমে আম্পায়ার আউট দেননি। তবে ডিআরএস নিয়ে দেখা যায়, বল লেগস্টাম্পে আঘাত করছে। ২৯ রানে ফেরেন বিজয়।
বিজয় ফেরাতে ভারত কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়ে। ধোনি-কোহলি জুটি সেই সমস্যা থেকে দলকে বের করার চেষ্টা করেছেন। এরমধ্যেই বিশ্বের একনম্বর ওয়ানডে ব্যাটসম্যান কোহলি ৪৮ বলে ক্যারিয়ারের ৫২তম ওয়ানডে অর্ধশত তুলে ফেলেন। চলতি টুর্নামেন্টে ফিফটির হ্যাটট্রিকও করেন কোহলি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮২ রান করেছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচেও ঝকঝকে ৭৭ রান এসেছে কোহরির ব্যাট থেকে।
এদিন কোহলির জন্য এক অনন্য মাইলফলক অপেক্ষা করেছিল। এই ম্যাচে ১০৪ রান করলেই বিশ্বের দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০,০০০ রান পূর্ণ করে ফেলতেন। শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারা ৪৫৩টি ইনিংস নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজার রান করতে। অজি কিংবদন্তি রিকি পন্টিংয়ের লেগেছিল ৪৬৮ ইনিংস। কোহলি যদি সেঞ্চুরির পর আর চারটি রান বেশি করতে পারতেন, তাহলে তিনি মাত্র ৪১৬ ইনিংস খেলেই ওই রান করে ফেলতেন।
কিন্তু সেটা আর হল কোথায়? ভালো ব্যাটিং করতে করতেই একটা বল কাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে আউট কোহলি। ৬৭ রানের মাথায় নবির বলে রহমত শাহের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হয়ে যান অধিনায়ক। স্কোরবোর্ডে তখন দেড়শো রানও ওঠেনি। তার আগেই চারজন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেলে বেশ সমস্যায় পড়ে ভারত।
তবে ধোনি যতক্ষণ থাকেন, ভারতকে আর কতক্ষণ বিপদে রাখতে পারে প্রতিপক্ষ। কিন্তু এদিন পারলেন না ধোনিও। ৫২ বলে ২৮ রান করে আউট তিনি। রশিদ খানের বল ওড়াতে গিয়ে লাইন মিস করে টাম্পিং। রশিদের শিকার হওয়ার আগে একবার নিশ্চিত রানআউট থেকেও বেঁচে যান ধোনি।
আফগানদের বিপক্ষে ছক্কা বৃষ্টি ঝরিয়ে রেকর্ড গড়েছিল ইংল্যান্ড। ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান একাই মেরেছিলেন ১৭টি ছক্কা। ইনিংসে ছক্কা ছিল ২৫টি। সেখানে ভারতের পাওয়ারফুল ব্যাটিং লাইনআপ পুরো ম্যাচে মারতে পারল মাত্র দুটি ছক্কা। প্রথমটি আসে আবার ইনিংসের ৪৬তম ওভারে।
ধোনি ফেরার নামের সঙ্গে বেমানান ইনিংস খেলে যান হার্দিক পান্ডিয়াও। ৯ বলে ৭ রান করে আফতাবের শিকার হন ভারতের নতুন ‘কপিল দেব’। ভারতকে সোয়া দুইশ রানের টার্গেট এনে দেয়ার পেছনে বড় ভূমিকা কেদার যাদবের। ৬৮ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেছেন যাদব। ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটিও আসে তার ব্যাট থেকে। শেষ ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের স্কোরের চাকায় ঠেকনা গুজে দেন আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েব।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ ওভারে ১১০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকার পর প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন রশিদ খান। তবে এদিন নিজের মতো করেই স্বরূপে ফেরেন তিনি। কোহলি-ধোনিদের সামনে ১০ ওভার বল করে ৩৮ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন রশিদ।
রশিদের মতো রান দেয়ার পথে বেশি কিপটে ছিলেন মুজিব-উর রহমান। তিনি ১০ ওভারে দেন ২৬ রান, সঙ্গে একটি উইকেটও। নবি ৯ ওভারে ৩৩ রানে নেন দুই উইকেট। পাঁচ ওভারে ২২ রানে এক উইকেট নেন রহমত শাহ।