কয়েক দশক পুরনো শিশুদের এক গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে আয়ারল্যান্ডে। সেই গণকবরে কুমারী মায়ের সন্তানদের সংখ্যাই বেশি বলে জানা গেছে।
১৯২৫ সাল থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে পশ্চিম আয়ারল্যান্ডের গালওয়ে প্রদেশের একটি ছোট্ট শহর টুয়ামেতে অবস্থিত একটি মা ও শিশু হোমে হাজার হাজার পথভ্রষ্ট নারী বসবাস করতো এবং এসব কুমারী মায়ের বেশ কিছু সন্তান ছিলো। সেই সব সন্তান ও মায়েদের লালন পালন করতো সিস্টার্স অব বোন সেকোর্স নামের এক সংস্থা। একটা নির্দিষ্ট সময় পর ওই হোম ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতেন ওই সব নারীরা, তবে বাচ্চাগুলো সেই হোমেই থেকে যেত। কিন্তু পরে ওই বাচ্চাগুলোর কি হতো সেই বিষয়টা এতদিন অনেকটা রহস্যই ছিলো।
বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময়ের গবেষণার পর ২০১৪ সালের দিকে স্থানীয় এক গবেষক ক্যাথেরিন করলেস জানান, সেখানে থাকা অন্তত ৭০০ থেকে ৮০০ নবজাতক ও ছোট শিশুরা সেই হোমেই মৃত্যুবরণ করেন এবং তাদের মৃতদেহ ওই হোমের সম্পদের নিচেই কোনো গণকবরে সমাহিত করা হয়। মাটির অনেক গভীরে যেমন কোনো এক সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে তাদের লাশ ফেলা হয়।
পরে এই ঘটনা নিয়ে বেশ তোলপাড়ও হয়। তবে কেউ কেউ সেটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন।
পরে আইরিশ সরকার সেই গবেষণার প্রেক্ষিতে একটি কমিশন গঠন করেন। সেই কমিশনের রিপোর্ট বলছে, সেখানে থাকা অন্তত ১৭টি মাটির নিচের গণকবরে বেশ কিছু মানব শরীর রয়েছে।
শুক্রবার এক রিপোর্টে এই কমিশন জানায়, যেখানে গণকবরগুলো রয়েছে সেগুলোর সুয়ারেজ লাইন বা পানি প্রবাহিত হওয়ার লাইনের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। তবে তখন এই লাইনগুলো এই কাজেই ব্যবহৃত হতো কিনা সেটা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
সেখানে প্রাপ্ত মৃতদেহগুলো থেকে কিছু অংশ গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করা হয়েছে। ওই সব গণকবরে নানান বয়সী নবজাতক ছিলো বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। সেটা ৩৫ সপ্তাহের ভ্রুণ থেকে শুরু করে ২-৩ বছর বয়সী শিশুও ছিলো।
তথ্য জানার পর যারপরনাই বিষ্মিত হয় কমিশনটি। এই ঘটনায় দায়ী দের খুঁজে বের করতে এখনো তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা। আয়ারল্যান্ডের মন্ত্রী ক্যাথেরিন জাপ্পোনে আগে এই ধরনের কথাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও এখন তিনি বলেন, আমরা এসব মৃতের দেহাবশেষকে সম্মান প্রদর্শন করবো এবং সেসব যেন সঠিকভাবে সমাহিত করা হয় সেদিকে নজর রাখবো।
তবে এই ব্যাপারে বোন সেকোর্স সিস্টার্সের বক্তব্য হলো, ১৯৬১ সালে তারা হোমটি বন্ধ করে দেন। তখন সেখানকার সমস্ত রেকর্ড গালওয়ে কাউন্টি কাউন্সিলে ফেরত পাঠানো হয়। তারাই এই জমির মালিক ছিলেন। তাই এখনকার খবরের ব্যাপারে এখনই আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় তারা।