চতুর্থ সপ্তাহেও যখন ‘আয়নাবাজি’র ভেলকি দেখতে দর্শক হলমুখী হচ্ছেন ঠিক তখনি পাইরেসির কারণে মুখ থুবড়ে পড়ছে ছবিটি। বাংলা চলচ্চিত্রে রেকর্ড গড়া আয়নাবাজিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গুনী নির্মাতা রেদওয়ান রনিসহ অন্যান্যরা আহ্বান জানিয়েছেন।
‘আয়নাবাজি’ বাঁচাতে যে যার জায়গা থেকে পাইরেসি বন্ধে সরব হচ্ছেন। ‘চোরাবালি’ খ্যাত নির্মাতা রনি ‘আয়নাবাজি’ পাইরেসি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘আমরা কপিরাইট নিয়ে কোনো রকম চিন্তা করি না। তবে খুব বাজেভাবে এ পাইরেসি শুরু হয়ে গেছে। ঠিক তেমনি দুঃখজনকভাবে ‘আয়নাবাজি’র’ পাইরেসি হয়েছে।
কিন্তু এ ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণে আশার সঞ্চার করেছে। মানুষ খুব উৎসবমুখর হয়ে সিনেমা হলে যাচ্ছে। উত্তেজনা বিরাজ করছে সিনেমা হলগুলোতে। একজন নির্মাতা সিনেমা নির্মার্ণের পর তার একটিই চাওয়া দর্শক যেনো সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন।
এ নির্মাতা মনে করেন, সিনেমা হলে গিয়েই সিনেমা দেখলে ইন্ডাস্ট্রি টিকে যাবে এবং ওই পরিচালক আরেকটি সিনেমা বানানোর উৎসাহ পাবেন। এবার যদি দর্শক ফ্রি দেখার আশায় বসে থাকেন কবে ইউটিউবে আসবে অথবা কোনো অনলাইনে দেখবেন, তাহলে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির প্রতি দর্শক হিসেবে আপনার কোনো দায়িত্ব কাজে লাগবে না।
রনি আরো বলেন, ‘একটা সিনেমা তো ফ্রিতে হয় না’। একটা ছবির পেছনে কত মানুষের শ্রম কত টাকা, কত মেধা এখানে খাটানো হয়েছে তাতো বোঝা যাবে না। এই টাকা যদি পরিচালকের ফেরত না আসে কি মনে হয় এই পরিচালক আরো একটা ‘আয়নাবাজি’ বানাবে।
খুব কষ্টে কথাগুলো বলতে হচ্ছে, সিনেমা বাঁচানোর জন্য সবার একটি দায়বদ্ধতা আছে। ফেসবুকে থাকলেই কেনো আপনি সেটা দেখবেন? চুরির মোবাইল আপনার সামনে আসলে আপনি যেমন কিনতে পারেন না, সেরকম চুরির কনটেন্ট আপনার সামনে আসলে সেটি আপনি দেখতে পারেন না।
দর্শকদের প্রতি জোর অনুরোধ জানিয়ে এ নির্মাতা পাইরেসি বন্ধে একমাত্র কাজ করতে পারে দর্শক। ‘আয়নাবাজি’র এতো বড় সাফল্যে বন্ধ হয়ে গেলে চলবে না। এইটা এখন আন্দোলনের মতো হওয়া উচিত সবার প্রতিজ্ঞা করার উচিত ‘আয়নাবাজি’ নকল কপি দেখবো না।
অন্যদিকে জনপ্রিয় আরেক নির্মাতা অনিমেষ আইচ দর্কশদের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন; ‘ফ্রিতে চায়নিজ নকল ডিম পাওয়া যাচ্ছে, খাবেন? -না। ভুয়া প্রিন্টের আয়নাবাজী লিংক আছে, দিবো? – একদম না। ৭০-৮০ টা হলে চলছে আয়নাবাজি , হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখেন’।
এদিকে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ ইতোমধ্যে ফেসবুকে লাইভে দেয়া কয়েকটি প্রোফাইল সনাক্ত করেছে এবং যেসব ওয়েবসাইট এ উক্ত সিনেমার কপি আপলোড করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্র নিয়ে উপরোক্ত বিষয়ে (Facebook Live/Website Upload) কারো কোন তথ্য জানা থাকলে- cyberunit@dmp.gov.bd এই ইমেইলে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
গত ২০ অক্টোবর বাংলা চলচ্চিত্রে রেকর্ড করা চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’ পাইরেসির কবলে পড়ে। মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি টেলিভিশন-এ আপলোড করা হয় পুরো ছবিটি। এরপর সেখান থেকে অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায় ছবিটি। এমনকি ফেসবুক লাইভেও চলে আসে ‘আয়নাবাজি’। বিষয়টি টের পেয়ে পরদিনই ছবিটি সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে এরপর দিনই অনলাইনে বেআইনিভাবে আপলোডের দায়ে জড়িত দু’জনকে আইসিটি ধারা ৬৮, ৬৯ (২) এবং সামাজিক মাধ্যম ধারা ৫৭, আইনের আওতায় ‘আয়নাবাজি’ পাইরেসির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে।
পাইরেসি কবলে পড়া ইতিমধ্যেই আয়নাবাজি’র ব্যবসা কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। তবে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সিনেপ্রেমীদের আশা সবকিছু কাটিয়ে আয়নাবাজি তার আগের ভেলকিতে ফিরে আসবে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ মাত্র দু’সপ্তাহে ঢুকে পড়েছে লাভের ঘরে। ৬০ লাখ টাকার নির্মিত ছবি আয় করে নিয়েছে দুই কোটি ১৩ লাখ টাকা।