সারাদেশের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা টাকা পরিশোধ করা শুরু করেছেন ট্যানারি মালিকরা। একই সাথে বকেয়া টাকা উদ্ধারে চামড়া সংশ্লিষ্ট ৩ সংগঠনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল তা কেটে গেছে।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে চামড়া সংশ্লিষ্ট তিন ব্যবসায়ী সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক করেছে এফবিসিসিআই। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ), কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) নেতারা অংশ নেন। বকেয়া টাকার সমস্যা সমাধানে এই তিন সংগঠনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে মধ্যস্থতা করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের জানান, তাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা শুরু হয়েছে। তবে কত টাকার লেনদেন হয়েছে, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি তারা।
ধাপে ধাপে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের পাওনা উদ্ধার করতে চান উল্লেখ করে এই সংগঠনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বকেয়া টাকা পরিশোধ করার জন্য ট্যানারি মালিকদের সময় দেব। কিন্ত সব বকেয়া আদায় করতে চাই। এ বিষয়ে এক টাকাও ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, শেষ ২ বছরের অর্থাৎ ২০১৮ ও ২০১৯ সালের বকেয়া টাকা আগে পেতে চাই আমরা। এরপর পযার্য়ক্রমে ২০১৫ থেকে ২০১৭, ২০১০ থেকে ২০১৫ এবং ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের টাকা ধাপে ধাপে পেতে চাই।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভবিষ্যতে যেন চামড়া নিয়ে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে নতুন একটি সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’।
এই সংগঠনের সভাপতি করা হয়েছে বর্তমান কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে নাটোর জেলা চেম্বারের সভাপতি মো. শরীফুল ইসলামকে।
এর আগে এফবিসিসিআইর পক্ষ্যে সংগঠনটির সহসভাপতি রেজাউল করিম রেজনু বলেন, চামড়া সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে কথা হয়েছে। চামড়া জাতীয় ব্যবসাকে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, গত ২২ আগস্টের বৈঠকের পর আড়তদারদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা শুরু হয়েছে। তবে চামড়ার টাকা গরীবের হক। এটা নিয়ে যে জটিলতা হয়েছিল তা ঠিক হয়নি।
বিটিএর সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা এক অপরের পরিপূরক। কারণ তারা চামড়া না দিলে আমরা ব্যবসা চালাতে পারবো না। তাই আজ একটা খসড়া চুক্তি হয়েছে। সেই অনুযায়ী তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।’
তিনি বলেন, হাজারীবাগে ট্যানারি মালিকদের জমি নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করে সমাধান দেয়া হবে বলে এফবিসিসিআইর সভাপতি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এতে আমরা সন্তুষ্ট।তবে এর দ্রুত সমাধান চাই।
শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া ব্যবসার নতুন নীতিমালায় আমাদের দাবিগুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে ২০২৪ সালেল মধ্যে এই শিল্প খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠান শেষে বিএফএলএলএফইএর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, চামড়া নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে কয়েক দফা বৈঠকে কেটে গেছে। এখন এই ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। সবাই মিলে এগিয়ে যাব।