কিছু বাতিঘর সর্বদা আলো ছড়ায়, ঝড় বৃষ্টির রাতে শত প্রতিকূলতার মাঝেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে যেন এক অবিচল স্থির স্তম্ভের মতো। আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা তেমনই একজন, যিনি আজ ১৬ কোটি বাঙালির অনুপ্রেরণার উৎস, যিনি এই দেশে আস্থা, স্থিরতা আর শত বাঁধাতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখান সকলকে।প্রধানমন্ত্রীর দৃঢতা যেন স্বচ্ছ আয়নার মতো যেখানে দেশের প্রতি তার দায়িত্ব এবং এক নির্ভেজাল ভালোবাসাই ফুটে ওঠে।একজন হাসু থেকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল কন্যা, একজন জননেত্রী, একজন দেশপ্রেমিক তথা সর্বোপরি আপামর জনসাধারণের প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠবার যে ইতিহাসটি তিনি তৈরি করেছেন তা শুধু অনুকরণীয়ই নয়, অনন্য।আজ আমাদের ভালবাসার প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। শুভ জন্মদিন, হে কাণ্ডারী।
আজ এই দিনে তাই রবীন্দ্রনাথের এই লাইনগুলো উৎসর্গ করতে চাই প্রিয় নেত্রীকে-
“তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ,
তাই তব জীবনের রথ
পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার বারংবার।”
আমাদের প্রিয় নেত্রী এক মহীরুহ হিসেবে নিজেকে এমন এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, যে উচ্চতার তার প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি শুধু নিজেই।পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনা এখন এক জ্বলজ্বল নক্ষত্র যার সুনাম এবং প্রজ্ঞাকে শুধু অনুভব করা যায়। কিন্তু এই পথটি এত সহজ ছিল না।যিনি আজ ১৬ কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস, তাকেও পাড়ি দিতে হয়েছে এক ভীষণ বন্ধুর পথ। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট পরিবারের সকলকে হারিয়ে একজন এতিম হয়ে এক কষ্টের সমুদ্র সাঁতরে আজ তিনি পরিণত। কত শত বার শুধু তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে তার হয়ত এদেশের প্রতিটি লোকের জানা ইতিহাস। কিন্তু যাকে সর্বশক্তিমান রক্ষা করেন, তাকে মারবে এমন শক্তি কার? সকল রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আজও তিনি চিরতরুণ, চিরনতুন, চির উন্নত এক প্রাণ।আজ তাই তার জন্মদিনের এই শুভলগ্নে যেন গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে,
“জয় তব বিচিত্র আনন্দ, হে কবি,
জয় তোমার করুণা।
জয় তব ভীষণ সব-কলুষ-নাশন রুদ্রতা।”
সত্যি তিনি এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে বিরোধীদের যত কলুষ চেতনাকে একা হাতেই দমন করতে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন আজ ধীরে ধীরে।এক মহীরুহ পিতার কন্যা থেকে ধীরে ধীরে দেশের সকলের আস্থাভাজন হয়ত এভাবেই হতে হয়।
দেশে যখন সিরিজ বোমা হামলা, গোপন জঙ্গি তৎপরতায় সকলে উৎকন্ঠিত ঠিক তখনই তার যোগ্য এবং বলিষ্ঠ আচরণে জঙ্গিদের তথা জঙ্গিবাদের ভিত কেঁপে উঠেছিল। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা তাই সবসময় আপোষহীন। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়ে তিনি ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল স্থাপনের করেন এবং আইন প্রণয়ন করে স্থাপিত ট্রাইবুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করেন। আর এই অসাধ্য সাধন শুধু শেখ হাসিনার জন্যই সম্ভব হয়েছিল।
বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে তাদের কাজ গুটিয়ে নিয়ে এক অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছিল, তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার একক নেতৃত্ব ও সাহসিকতায় পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। যা এখন বাস্তব, কোন স্বপ্ন নয়। আজ পদ্মা সেতু পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে দৃশ্যমান। যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই স্বপ্নের রূপকার তারই কন্যা, বিপন্ন মানবতার বাতিঘর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয়তু হে প্রধানমন্ত্রী।
আজ এই দিনে মনে পড়ে যায় তার অতীত জীবনের সেই দুঃসহ লড়াই সংগ্রামের কথা যিনি ৭৫ এর পরে না পেয়েছেন বাবা মায়ের সান্নিধ্য বরং বলা চলে তার জীবনটাই কেটেছে লড়াই সংগ্রামে সাধারণ আর পাঁচ দশটা মানুষের মতো। সব হারিয়েও যিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায়। বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী শেখ হাসিনা নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপোসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সমুদ্র এবং মহাকাশ বিজয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং শেখ হাসিনার দূরদর্শী ভূমিকার ফলেই সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর এবং উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে আজ মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে।বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের কারিগরও আমাদের শেখ হাসিনা।
লিঙ্গসমতা এবং নারীর অধিকার প্রাপ্তির জন্য তিনি সর্বদা সোচ্চার।এছাড়াও দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, শিক্ষাখাতের উন্নয়ন, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন এবং পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা ক্ষেত্রে তিনি উন্নয়নসাধনের মাধ্যমে তার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।করোনা মোকাবেলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর ৭৫ এর ঘাতকদের বিচারের মাধ্যমে চার দশক ধরে বয়ে চলা ইতিহাসের কলঙ্কজনক দুটি অধ্যায় থেকে জাতিকে দিয়েছেন মুক্তি। ১২ লক্ষ রোহিঙ্গাদের বাঁচিয়েছেন, দিয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়। শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণেই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ সকল দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে।
বঙ্গবন্ধুর এই সোনার বাংলায় আজ তারই আত্নজা, আমাদের প্রিয় হাসু আপা ব্যক্তি থেকে সকলের আশার বাতিঘর হয়ে উঠেছেন নিজের যোগ্যতা আর প্রবল ব্যক্তিত্বের কারণে।তাই, বাংলাদেশে তিনি এখন ব্যক্তির উর্ধ্বে জনগণের আশা জাগানিয়া অভিভাবক।আজ এই অভিভাবকের জন্মদিন।তাই, জন্মদিনে আমাদের ভালবাসার মানুষটির সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।
আজ রবিঠাকুরের লাইনগুলোকে উদ্ধৃতিকরেই প্রার্থনা করি-
“মহাবিশ্বজীবনের তরঙ্গেতে নাচিতে নাচিতে
নির্ভয়ে ছুটিতে হবে, সত্যেরে করিয়া ধ্রুবতারা৷”
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)