চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আল্লাহর কাছে রোজাদারের মর্যাদা

ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম রোজা। এটি নিছক একটি ইবাদত নয়; বরং আল্লাহর আনুগত্যের এক অনুপম বহিঃপ্রকাশ, যার মাধ্যমে বান্দার সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে উপনীত হওয়ার মাধ্যম ‘তাকওয়া’ অর্জিত হয়। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে তাকওয়া অর্জনকারীরাই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।’ (সূরা হুজুরাত: ১৩) সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বান্দা কেবল মনিবের সন্তুষ্টির জন্য পানাহার, স্ত্রী সহবাস ত্যাগ করে নিজেকে তৈরি করে। এজন্য মহান আল্লাহর কাছে রোজাদারের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। হাদীসের কুদসীতে রয়েছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘বনী আদমের সকল আমলকে দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে। তবে রোজা এর ব্যতিক্রম। কেননা, তা আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। রোজাদার আমার সন্তুষ্টির জন্যই তার প্রবৃত্তি ও পানাহার পরিত্যাগ করে। রোজাদারের জন্য দুটি সুসংবাদ রয়েছে। একটি তার ইফতারের সময়, আরেকটি মহান রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। নিশ্চয়ই রোজাদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকে আম্বরের চেয়ে সুঘ্রাণ। আর রোজা তো ঢাল স্বরূপ। তাই যদি তোমাদের কেউ রোজাদার হয়, তবে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং ঝগড়া না করে। এমনকি কেউ যদি তাকে গালি দেয়, সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার।’ (বুখারী: ১৭৭১)

এই একটি হাদীস থেকে রোজাদারের মর্যাদার বিশালতা বুঝা যায়। রোজা ছাড়া সমস্ত ইবাদতের সাওয়াব দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে, রোজার সাওয়াব হিসেব করা সম্ভব নয়। কেননা, এটা ধৈর্যের অংশ। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই ধৈর্য্যশীলদের প্রতিদান বিনা হিসেবে দেয়া হবে।’ (সূরা যুমার: ১০) এ জন্য নবী পাক সা. রমজান মাসকে ধৈর্য্যরে মাস বলেছেন। অন্য হাদীসে রয়েছে, ‘রোজা ধৈর্য্যরে অর্ধেক।’ (তিরমিজী: ৩৫১৯)

ধৈর্য্য তিন প্রকার। ১. হাজারো কষ্টে আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য্য ধারণ, ২. আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তু থেকে ধৈর্য্য ধারণ এবং ৩. আল্লাহ পাক কর্তৃক নির্ধারিত কষ্টসহ্য করার ধৈর্য্য। আর সকল প্রকার ধৈর্য্যের সম্মিলন হলো রোজা। কেননা তাতে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের ওপর, তার কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকার এবং ক্ষুধা-পিপাসার কষ্টের ওপর ধৈর্য্য-সবই পাওয়া যায়। আল্লাহ এ কারণেই রোজাদারের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

আল্লাহ পাক নিজে রোজাদারের প্রতিদান দিবেন। নামাজ, হজ, যাকাত, দান-সাদকাসহ অন্য সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ এ ঘোষণা দেননি, যদিও সকল ইবাদত আল্লাহর জন্যই। আল্লামা মুল্লা আলী কারী র. বলেন, ‘এর কারণ হলো অন্য সব ইবাদতে রিয়া বা লোক দেখানো সুযোগ থাকে, কিন্তু রোজা প্রতিপালনে এর সুযোগ নেই। বান্দা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রোজা পালন করে, তাই তিনি নিজে এর প্রতিদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।’ (মিরকাত: ৪/১৩৬৩)

রোজাদারের জন্য মনিব দুটি খুশির কথা বলেছেন। একটি দুনিয়ার অন্যটি আখেরাতের। দুনিয়ার খুশি হলো যখন সে সারাদিন কষ্ট স্বীকার করে, ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়ে ইফতার করতে বসে। রাসূলুল্লাহ সা. ইফতারের সময় বলতেন, ‘আল্লাহ চাহেন তো পিপাসার সময় শেষ হলো, কন্ঠ তৃপ্ত হলো আর প্রতিদান পাওয়ার সময় আসলো।’ (আবূ দাউদ: ২৩৫৯) অন্য হাদীসে রয়েছে রাসূল সা. বলেছেন, ‘রোজাদারের ইফতারের সময় কৃত দুআ কবূল করা হয়।’ (শুয়াবুল ঈমান: ৩৬২৪) আর পরকালীন খুশি হলো, মহান মনীবের সাথে যখন রোজাদার সাক্ষাতলাভ করে ধন্য হবে। আল্লাহ পাক বেহেশতে রোজাদারকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করবেন।

রোজাদারের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে সুশোভিত করতে থাকেন। কেননা রোজাদাররা আল্লাহর মেহমান। হাদীস শরীফে রয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রমজানকে কেন্দ্র করে জান্নাতকে বছরের শুরু থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত সুসজ্জিত করা হয়। আর যখন রমজানের প্রথম দিন আসে আরশের তলদেশ থেকে জান্নাতের গাছের পাতার বাতাস প্রবাহিত হয়। তখন জান্নাতী হুরেরা বলেন, হে মাবুদ আমাদেরকে এ সকল রোজাদারদেরকে স্বামী হিসেবে উপহার দাও। তাদের মাধ্যমে আমরা চক্ষুকে শীতল করবো, আর তারাও আমাদের দ্বারা চক্ষুকে শীতল করবে।’ (মিশকাত: ১৯৬৭)

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘জান্নাতে ৮০টি দরজা বা স্তর আছে এর মধ্যে একটি বিশেষ দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। রোজাদার ছাড়া আর কেউ এ দরজায় প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারী: ৩০১৭) অপর বর্ণনায় রয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক ডাকবেন, রোজাদারেরা কোথায়? তখন রোজাদারেরা আল্লাহর ডাকে রাইয়ান নামক দরজায় প্রবেশ করবেন, তারা ছাড়া আর কেউ ঢুকতে পারবে না এবং তখন সে দরজা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারী: ১৭৬৩)

লেখক: মাওলানা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান রিয়াদ