২৬ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনা ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর পরিচালনায় বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘আলফা’। ‘একাত্তরের যীশু’ ও ‘গেরিলা’র পর এটি তাঁর নির্মিত তৃতীয় ছবি। এরইমধ্যে প্রিমিয়ার শো হয়েছে ছবিটির। চলচ্চিত্র আলোচক, নবীন-প্রবীন নির্মাতা, কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরা হাজির হয়েছিলেন ‘আলফা’র সেই বিশেষ প্রদর্শনীতে। ছবিটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সকলে। অনেকেইতো সরাসরি বলেই ফেলেছেন, এই বয়সে নাসির উদ্দিন ইউসুফ এমন তারণ্যমাখা ছবি করবেন, এটা প্রায় অকল্পনীয়! ডিরেকশন ছাড়াও প্রশংসিত হয়েছে ছবির শিল্প নির্দেশনা ও সাজ সজ্জার অংশটিও। বিশেষ করে ছবিতে চরিত্রদের সাজ সজ্জার বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলেছেন অনেকে। যে অংশটির দায়িত্বে ছিলেন সামিউন জাহান দোলা। যিনি নিজেও একজন অভিনেত্রী। তার পাশাপাশি মঞ্চে নিয়মিত কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন। ‘আলফা’র পোষাক পরিকল্পনার পেছনের গল্প জানালেন চ্যানেল আই অনলাইনকে…
আলফায় পোশাক নিয়ে প্রাথমিক ভাবনা:
প্রথমেই চলচ্চিত্রের গল্পটা আমাদের সবাইকে নিয়ে পড়ে শোনালেন বাচ্চু ভাই। গল্প পড়ার পর সেট-আর্ট-কস্টিউমের সবাইকে তিনি নিজের ভাবনার কথা জানাচ্ছিলেন যে গল্পটাকে তিনি সিনেমায় কীভাবে দেখতে চাইছেন। আমার কাছে সবচে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপার ছিল তা হল– গল্পটার রঙ কী? আপনি হয়তো জানেন প্রতিটা গল্পেরই কিন্তু একটা রঙ থাকে ভাবনায়। তো বাচ্চু ভাই বলছিলেন, তিনি শ্যাওলা গন্ধ খুঁজে পান এ গল্পে। শ্যাওলা রঙের গল্প এটা! আমি তখন ভাবতে শুরু করলাম। জলের-লাশের-জীবনের গুমোট ভাব নিয়ে। ‘শ্যাওলা’ শব্দটা ছিল আমার কীওয়ার্ড। ঐ শ্যাওলা শব্দ থেকেই আমার কস্টিউম ডিজাইনের যাত্রা শুরু।
একেক চরিত্রের একেক ধরণ-ধারণ:
আমরা অনেক সময় নিয়ে গুছিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম ‘আলফা’ চলচ্চিত্রে। একেকটা চরিত্রের ধরণ একেক রকম। প্রতিটা চরিত্র যেমন একটা আরেকটার চেয়ে ভিন্ন তেমনি সিনেমার কালার থিমের উপর লক্ষ্য রেখে কোথাও একটা হারমনিও বজায় রাখার চেষ্টা ছিলই। কিন্তু সেটা যেন আরোপিত মনে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়েছে। এই যেমন আলফা, শ্যাওলা- হালকা বাদামি– ছাই রঙ এরকম রঙগুলোকে বেছে নিয়েছিলাম এ চরিত্রের জন্য। তার গুমোট জীবনের সাথে মিলেমিশে ছিল রঙগুলো। গুলেনূরের ক্ষেত্রে সবুজাভ আভা ছিল ব্লাউজে-সোয়েটারে। যেহেতু তার মধ্যে আকাঙ্ক্ষা আর প্রেম থাকে। গুলেনূরের স্বামীর পোষাকে অনেকগুলো পকেট ছিল, সে একেক পকেট থেকে জিনিস বের করে মাঝে মাঝে। এটিএম শামসুজ্জামান-এর যে চরিত্র তিনি প্রাজ্ঞ একজন মানুষ, তার টুপি-পোষাক সেরকমই রাখার চেষ্টা করেছি। কালি হিজরার পোষাকেও একটা গ্রিনিস টোন ছিল। পেশাদারিত্ব:
আলফা-তে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। এশা ইউসূফ আমাদের এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার ছিলেন। তিনি নিজে ফিল্মের উপর পড়াশোনা করে এসেছেন। সেজন্য আমি একটা কমফোর্টেবল জোন পেয়েছি। অনেক প্রোডাকশন আমাদের দেশে এরকম হয় যে কস্টিউম নিয়ে ভাবারই সময় থাকে না কারও। কিন্তু এশা আমাদের কস্টিউমের জন্য আলাদা একটা রুম দিয়েছিল। সময়মতো পারিশ্রমিক পাওয়াটাও কিন্তু শিল্পীকে কাজে উৎসাহিত করে। এর বাইরেও মঞ্চের অভিজ্ঞতা, আমার দীর্ঘদিন বাচ্চু ভাইর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। গেরিলা-তে পরে গিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু মঞ্চে বাচ্চু ভাইয়ের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর পছন্দ-অপছন্দ আমি বুঝি।
‘আলফা’ চলচ্চিত্রের সবাই প্রতিটি বিষয়ে খুবই সহযোগিতা করেছে একে অপরকে। দোয়েল তখন নবাগতা, এর আগে ক্যামেরার সামনেই দাঁড়ায়নি। তবু তার প্রফেশনালিজম উল্লেখ করার মতোন। আলমগীর ভাই (আলফা)কে কস্টিউম পরিয়ে মানুষের মাঝে ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমরা একসাথে থাকছিলাম, গ্রুমিং সেশন চলছি –এ স্মৃতিগুলো দারুণ! অভিনয়শিল্পীরা নির্বাচিত হওয়ার আগেই আমাদের পোষাক পরিকল্পনা করা ছিল অনেকটাই। যা যা যেভাবে করতে চেয়েছি ঠিক সেভাবেই করতে পেরেছি এই মানুষগুলোর জন্যই।
কস্টিউম ডিজাইনে একাডেমিক শিক্ষার বোঝাপড়া:
একাডেমিক শিক্ষা তো নিশ্চয় একটা বাড়তি সুবিধা চরিত্র বোঝার ক্ষেত্রে, ডিজাইনের ক্ষেত্রে। আমাদের নাট্যকলা বিভাগে পোষাক পরিকল্পনার আলাদা কোর্সই ছিল। তবে কস্টিউম লাইন আপ করা, ওয়েবড্রবিং ইত্যাদি কৌশলগত দিক আমি আমার বিবিসি-তে কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই বেশি শিখেছি। বিবিসি-তে যখন কাজ করতাম তখন এরিকা ওভাপিস্ট ছিলেন আমাদের কস্টিউম ডিজাইনার। তাঁর কাছ থেকেই আমার অনেককিছু শেখা। আর মঞ্চের অভিজ্ঞতা তো ছিলই।
অন্যান্য সেক্টরের সাথে বোঝাপড়া:
অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের সাথে কস্টিউম ডিপার্টমেন্টের বোঝাপড়ার ব্যাপারটি না থাকলে কারও কাজই সম্পূর্ণভাবে ফুটে উঠতো না। চলচ্চিত্রের ব্যাপারটাই তাই। যেমন আমাদের শিল্প নির্দেশক মারুফ ভাইর সাথে প্রতিটা বিষয় নিয়ে অসংখ্যবার মিটিং করেছি আমি। আলোচনা করে নিয়েছি সেটের সাথে কস্টিউমকে কীভাবে মেলানো যাবে। কন্টিনিউটি ব্রেক হচ্ছে কি না এসমস্ত বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সিনেমাটোগ্রাফি এবং লাইটের সাথেও আলোচনা করেছি। রাতে আলফাকে কোন কস্টিউম পরালে সুবিধা হবে, এসব আলোচনা করেই ঠিক করতে হয়েছিল।
আলফায় নিজের পছন্দের চরিত্র:
এভাবে বলাটা কঠিন। সব চরিত্রের পোষাকই খুব যত্ন নিয়ে ভেবে করতে হয়েছে, নিজ হাতে সেলাই করেছি আলফা-র শার্ট, অন্যান্য পোষাকও। তবে গুলেনূর-এর পোষাকের প্রতি আলাদা এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করে। কারণ গুলেনূরের চরিত্রের আবেদন তৈরি করার জন্য এতো ডায়মেনশন ছিল তার সাজসজ্জায়, পোষাকে! তার কানের দুল, চ্যাপ্টা করে চুল আচড়ানো। সবকিছু খুব পছন্দের আমার!