একুশের প্রথম প্রহরে পুরো জাতি যখন শোকাবহ পরিবেশে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছিল, তখনই এল একটি দুঃসংবাদ। রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর।
রাত যতো গভীর হচ্ছিল আগুনের ভয়াবহতার খবর আসছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭৮ জন নিহত ও অনেকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চকবাজার ট্র্যাজেডির এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সরকারের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এখন যাই করা হোক না কেন, পুরো চকবাজার এবং ঢাকা মেডিকেল এলাকা যেন এক মৃত্যুপুরী। স্বজন হারানোর বেদনায় যেন ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস। সঙ্গে স্তব্ধ পুরো বাংলাদেশ।
ভয়াবহ এই দুর্যোগের এই মূহূর্ত কাউকে দোষারোপের সময় নয়, এখন আসলে দুর্যোগ মোকাবেলার সময়। শোক কাটিয়ে ওঠার সময়, যদিও এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। তবুও বলতে হয়, কেমিক্যালের গোডাউন, গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ অপরিকল্পিত এই নগরব্যবস্থার কারণেই এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
নিমতলি ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি। অর্থাৎ সেই ট্র্যাজেডি থেকে কেউ কোনো শিক্ষা গ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করেননি! ফলে আবারও এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি।
আবাসিক এলাকায় কেমিক্যালের গোডাউন কতোটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে তা আঁচ করতে পেরেছিলেন মেয়র সাঈদ খোকন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহের মধ্যে পুরনো ঢাকায় কেমিক্যাল কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
সেসময় এফবিসিসিআই, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মেয়র।
মেয়র খোকন বলেছিলেন: নিষিদ্ধ ঘোষিত ২০টি রাসায়নিক যাদের কাছে পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যাদের কারখানায় নিষিদ্ধ কেমিক্যাল থাকবে না, কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হবে।
এখন এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আমরা আশা করি। কেমিক্যাল ব্যবসার নামে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এ প্রক্রিয়া চিরতরে বন্ধ করতে হবে। নাহলে নিমতলি, চকবাজার ট্র্যাজেডির পর এমন আরও ভয়াবহ খবর শিরোনাম হতেই থাকবে। মানুষের পুড়ে কাঠকয়লা হওয়া ভয়াবহ চিত্র আমরা কোনোদিন বন্ধ করতে পারবো না।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা। খুব শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলসহ সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।