‘সালমান-মৌসুমীর জন্য নয়, ছবির জন্য ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। এতে আর্টিস্টের কোনো হাত নেই। কারণ, কেন্দ্রীয় চরিত্র সালমান-মৌসুমী দুজনেই ছিলেন নবাগত। ছবির গুণেই ছবিটি আজও মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটে আছে।’-বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে চ্যানেল আই অনলাইনকে এমনটাই বলছিলেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান।
আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে ২৫ মার্চ সালমান-মৌসুমী জুটি অভিনীত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পায়। আর মুক্তির সাথে সাথেই ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেয়। ছবির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মৌসুমী ফ্যান ক্লাব। রবিবার বিকাল পাঁচটায় অনুষ্ঠানটি উত্তরায় একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। এই অনুষ্ঠানে তিনিসহ উপস্থিত থাকবেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর নায়িকা মৌসুমী।
হৃদয়ে দাগ কাটার মতো সিনেমা বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য রয়েছে। কিন্তু অতীতে তুমুল বাণিজ্য সফর সিনমো নিয়ে উদযাপনতো হয়ে উঠে না। কিন্তু ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর পঁচিশ বছর উদযাপন হচ্ছে, এটাতো বিরল ঘটনা। মানুষ স্মরণ করছে ছবিটি। আর এমন ঘটনায় উচ্ছ্বসিত নির্মাতা সোহান।
পঁচিশ বছর পরেও সেই দিনটা মনে পড়ে যাচ্ছে জানিয়ে সোহানুর রহমান সোহান চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান: পঁচিশ বছর পরেও কেউ আয়োজন করে আমার সিনেমার কথা স্মরণ করছে, এটাতো অবশ্যই ভালো লাগার। আমাদের চলচ্চিত্রের জন্যও খুব ভালো দিক। তবে খুব বেশি করে পঁচিশ বছর আগের দিনটা মনে পড়ছে। কীভাবে ছবিটা রিলিজ হলো, কীভাবে ব্যবসা করলো, আমাকে কিংবা আমার ছবির আর্টিস্টরা এই ছবির বদৌলতে কীভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। এই দিনে এসব মনে পড়ছে।
বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে কোনো সিনেমা নিয়ে এতো আবেগতো কম দেখা যায়। এটা কি সালমানের প্রথম ছবি ছিলো বলেই কি, নাকি সিনেমার কন্টেন্টের জোর?-এমন প্রশ্নে নির্মাতা বলেন: এমন কথা বলে লাভ নেই। কারণ সালমানের এই ছবিটি যখন রিলিজ হয়েছে, তখনতো সালমানের কোনো অস্তিত্বই নাই। আর্টিস্টের কোনো অবদান ছিলো না। ছবির গুণেই ছবিটি মানুষের মনে জায়গা নিয়েছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বরং এই ছবিই আর্টিস্টদের জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
নব্বই দশকের পরও বেশকিছু জনপ্রিয় সিনেমা নির্মাণ করেছেন সোহানুর রহমান। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে পরিচালনায় নেই তিনি। বর্তমান অবস্থায় কোনো কাজ করছেন কিনা জানতে চাইলে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার এই নির্মাতা জানান: এখন নতুন কোনো কাজ দেখছি না। চলচ্চিত্রের বাজারটা আগে ঠিক হোক। চলচ্চিত্রের বাজারের খুবই খারাপ অবস্থা। সেখান থেকে উত্তরণ হোক আগে। এখনতো আমরা ভারতীয়দের হাতে পুরো জিম্মি হয়ে আছি। সেখান থেকে উত্তরণ ঘটুক, তারপর দেখা যাক।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা হিন্দি ‘সনম বেওয়াফা’, ‘দিল’ ও ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এর কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যে কোন একটির রিমেক করার জন্য। উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তারা। নায়িকা হিসেবে মৌসুমীকে নির্বাচিত করেন। নায়ক হিসেবে প্রথমে তৌকীর আহমেদ ও পরে আদিল হোসেন নোবেলকে প্রস্তাব দিলে তারা ফিরিয়ে দেন। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীর ‘ইমন’ নামে একটি ছেলের সন্ধান দেন। প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং ‘সনম বেওয়াফা’ রিমেকের জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইমন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর জন্য পীড়াপীড়ি করেন। এ ছবি তিনি ২৬বার দেখেছেন। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান তাকে নিয়ে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন ও ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়।
সিনেমাটির হিন্দি কাহিনি লিখেছেন নাসির হোসেন খান, যার বাংলা চিত্রনাট্য লিখেছেন সোহানুর রহমান সোহান ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষের আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেডের ব্যানারে নির্মিত হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। ছবিতে সালমান-মৌসুমী ছাড়াও আরো অভিনয় করেন রাজিব, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত, খালেদা আক্তার কল্পনা, মিঠু, ডন, জাহানারা আহমেদ, অমল বোসসহ অনেক। সিনেমাটি ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ব্যবসাসফল হিসেবে সেরা চারটি ছবির একটি হিসেবে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করে।