করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের ঢেউ বাংলাদেশে আছড়ে পড়ার পর থেকে গত কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সবচেয়ে বড় শঙ্কার কথা, শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যায় বড় রকমের উল্লম্ফন ঘটেছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ২১ থেকে ৩৪ জনে পৌঁছেছে মৃত্যুর সংখ্যা। অর্থাৎ এই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে ১৩টি।
দেশে করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে একদিনে এতো মৃত্যু হয়েছিল প্রায় চার মাস আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর। সেদিন করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছিল ৩৬ জনের। তারপর থেকে গতকাল পর্যন্ত একদিনে আর এতো (৩৪ জন) মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
এই তো গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, এতদিন ধরে সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে ১৫ হাজার বা এর আশেপাশে থাকলেও দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। গত ২৩ জানুয়ারি মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জনের। পরের দিন ২৪ জানুয়ারি তা বেড়ে হয় ১৫ জন। ২৫ জানুয়ারি আরও ৩ জনের বেশি মৃত্যুতে তা দাঁড়ায় ১৮ জনে। তবে ২৬ জানুয়ারি আবার মৃত্যু কমে হয় ১৫ জন। ব্যতিক্রম হিসেবে এই দিনকে বাদ দিলে পরের দিন থেকে প্রতিদিনই বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। তার মধ্যে ২৭ জানুয়ারি ২০ জন, ২৮ জানুয়ারি মৃত্যু ছিল ২১ জন। আর আজ শেষ ২৪ ঘণ্টায় (২৯ জানুয়ারি) তা এক লাফে বেড়ে হলো ৩৪ জন।
করোনাভাইরাসের গত দুই বছরের চরিত্র বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, যখনই সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি কিংবা সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখিয়েছে, তারপরই সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। আবার এ বিষয়ে সরকারের কড়াকড়ি আরোপের পর সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই কমেছে। তার মানে মূল বিষয়টাই হলো, করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা এবং নিয়ম-কানুনগুলো যথাযথ মেনে চলা।
আমরা কী তা মেনে চলছি? সরকার নির্দেশ দিয়েছে অর্ধেক জনবল দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস চালাতে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর বলছে, বেশিরভাগ অফিসই চলছে পুরো জনবল দিয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সরকারি অফিসেও মানা হচ্ছে না এই নির্দেশনা। আবার গণপরিবহনে যত আসন, তত যাত্রী নিয়ে চলতে হবে। আদৌ কি তা চলছে?
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাকেও বেশিরভাগ মানুষ হালকাভাবে নিয়েছেন। যার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে মৃত্যু দিয়ে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর যারা বেঁচে যাচ্ছেন; বলতেই হবে তারা ভাগ্যবান। কিন্তু হাজারো পরিবারের আজীবন কান্নার উৎস হচ্ছে এই ভাইরাস।
আমরা মনে করি, এখনো সময় আছে সচেতন হওয়ার। তা না হলে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে প্রতিদিনই বাড়তে থাকবে সংখ্যা। সেই সংখ্যার একজন হতে পারি আমরা যে কেউই।