গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক ২০১৮’ এ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কিছু চিত্র উঠে আসলেও প্রকৃত অবস্থার প্রতিফলন ঘটেনি বলে মনে করছেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট সূচকে আরডব্লিউবি’র রিপোর্ট ঠিকই আছে, তবে সামগ্রিক চিত্র সেখানে উঠে আসেনি।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক ২০১৮’-এর প্রতিবেদনে ১৮০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর বাংলাদেশ একই অবস্থানে থাকলেও নেতিবাচক সূচকে পরিস্থিতি আগের চয়ে খারাপ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারের নেতিবাচক সূচক বেড়েছে দশমিক দুই-ছয় শতাংশ।
আরএসএফ-এর ওই প্রতিবেদনে প্রতিবেদন অনুযায়ী যেসব কারণে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে সেগুলো হলো:
১. তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় সাংবাদিকদের বিচারের আওতায় আনা
২. সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর অব্যাহত সহিংসতা
৩. সাংবাদিকদের ওপর হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিরা সহজে রেহাই পেয়ে যায়
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মফিজুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমাদের সাংবাদিকতার যতগুলো প্রবাহী পথ আছে তার প্রায় সবগুলোতেই আমরা অনেক এগিয়েছি। মতপ্রকাশ করতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে সাংবাদিকদের মধ্যে অনেক সেল্ফসেন্সরশিপ কাজ কাজ করে। এই কারণেই হয়তো আরএসএফ’র রিপোর্টে নেতিবাচক বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
‘‘টকশোতে গিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ কথা বলছে, পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন কলাম লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু গেটকিপিংটা হচ্ছে যে জায়গায়, সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে গেটকিপিং। কারণ হচ্ছে সে ভাবছে, আমি হয়তো মামলার মুখোমুখি হতে পারি। গত বছর যেমন চারশ মামলা হয়েছে। সে ভাবছে, স্থানীয় প্রভাবশালী দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারি। সেই কারণেই সাংবাদিকরা নিজেরাই এখন সেল্ফ সেন্সরড হয়ে যাচ্ছে।’’
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপীই সাংবাদিকদের সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশেও সে বিষয়ে কাজকর্ম চলছে। তার জীবনের নিরাপত্তা, মানসিক নিরাপত্তা, চাকরির নিরাপত্তা ইত্যাদি। সাংবাদিকরা তাদের নিরাপত্তাগুলোকে এখন খুব গুরুত্ব দেয়। আগে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দিয়েই সাংবাদিকতার চর্চা করতো। কিন্তু এই বিষয় সামনে আসার কারণেই তাদের মধ্যে পেশাদার অ্যাপ্রোচের উন্নয়ন হয়েছে, যে না এটা আমার চাকরি। এই চাকরি করতে গিয়ে আমার সব দিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়েই আসলে সে সেল্ফ সেন্সরড হয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডের মতে এই প্রতিবেদনকে যেমন সার্বিক চিত্রের প্রতিফলন বলা যাবে না, তেমনি উড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: ৫৭ ধারা, ডিজিটাল অ্যাক্ট, সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা, সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন দিক থেকেই আমরা পরাধীন। যার কিছুটা প্রতিফলন আরএসএফ’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
কর্পোরেট প্রভাব সাংবাদিকতার দুর্বৃত্তায়নসহ চতুর্মূখী চাপে এদেশের গণমাধ্যম নিজেও স্বাধীন নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।