করোনাভাইরাস এর ভয়াবহতা না যেতেই যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়েছে। তাই উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় নানা মাত্রার ‘মহাবিপদ সংকেত’ চলছে।
এতে উপকূলের মানুষের মাঝে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা চলছে। এরমধ্যে এই মহাবিপদ সংকেত চললেও সাগর থেকে মাছ ধরার অনেক ট্রলার এখনও এসে পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে। এছাড়া উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধের পয়েন্ট দিয়ে সাগরের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান এর শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে। আম্পান মোকাবেলায় জেলায় জেলায় আশ্রয় কেন্দ্র, মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ২০ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। এছাড়া ১৩ হাজার ২৪১টি সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার খোলা হয়েছে বলেও তিনি জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের (এনডিএমসি) সভায় জানিয়েছেন।
এর পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে মেডিক্যাল টিম, দ্রুত রেসপন্স টিম। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। অন্যদিকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও প্রস্তুত রয়েছে। নিচু এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য উপকূলে মাইকিং চলছে।
এসব প্রস্তুতি থাকলেও করোনাকালে যে বড় শঙ্কার জায়গা, তা হলো: আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারা। এ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি হলেও এ মুহূর্তে স্বাভাবিকভাবেই তা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি জনসাধারণকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, সামুদ্রিক জলরাশি ভয়ংকর হয়ে উঠে অবতল আকৃতির অগভীর বে বা উপসাগরে। মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাস যখন এরকম জায়গায় সাগরের পানিকে ঠেলতে থাকে, তখন ফানেল বা চোঙার মধ্যে তরল যে আচরণ করে, এখানেও তাই ঘটে। সাগরের ফুঁসে উঠা পানি চোঙা বরাবর ছুটতে থাকে। বিশ্বের আর যেকোন উপকূলের চেয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তর উপকূল এই ধরনের সার্জ বা জলোচ্ছ্বাসের সবচাইতে বেশি ঝুঁকিতে আছে। এজন্য উপকূলীয় অঞ্চলে শুধু ঘূর্ণিঝড়ের সময়কার কথা বিবেচনা না করে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে, যেন তারা এর ভয়াবহতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।
আম্পান নিয়ে উদ্বেগের আরও কারণ আছে। এরমধ্যে প্রধান কারণ হলো: এটি একটি ’সুপার সাইক্লোন’। এই ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ১৩৭ মাইল বা ২২০ কিলোমিটারের বেশি। আর সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বহু ধরনের বিপদ নিয়ে আসে। প্রথমত: প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত: ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে সামূদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ধেয়ে আসবে। আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হবে, যাতে বন্যা দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে বা আরব সাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, প্রতি দশ বছরে তার মাত্র একটি হয়তো এরকম প্রচণ্ড ক্ষমতা বা শক্তির ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে আম্পান মোকাবেলায় আরও ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়কার কথাও ভাবতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।