আম্পানের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বিনামূল্যে সার, বীজ ও নগদ সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ১৫ মে ঘূূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত হানার পূর্বাভাস পাবার সাথে সাথেই কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই ছিলেন সতর্ক। ফসলের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য কৃষককে দেয়া হয়েছিল প্রয়োজনীয় পরামর্শ। ফলে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ফলে কৃষিতে ব্যাপকভিত্তিক ক্ষতি সাধিত হয়নি।
কৃষিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবন থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পান এর ফলে কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে অনলাইনে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হলেও অল্প কিছু কৃষিজ ফসলের বিশেষ করে ফলের মধ্যে আম, লিচু, কলা, সবজি, তিল এবং অল্প কিছু বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে।
প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মোট জমির পরিমাণ ১,৭৬,০০৭ হেক্টর। ইতোমধ্যে হাওড়ে শতভাগ, উপকূলীয় অঞ্চলে ১৭ জেলায় শতকরা ৯৬ ভাগসহ সারা দেশে গড়ে ইতোমধ্যে ৭২ শতাংশ বোরো ধান কর্তন করা হয়েছে। ফলে, ক্ষতির পরিমাণ সামান্য যা আমাদের খাদ্য উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শাকসবজি ও মসলা চাষিদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন মৌসুমে বিনামূল্যে সার, বীজ ও নগদ সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান করা হবে। এছাড়াও, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, ফল ও পান চাষিদেরকে মাত্র ৪% সুদে কৃষি ঋণের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৬০-৭০ ভাগ আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে পড়া আমগুলো ত্রাণ হিসেবে দুস্থ জনগণের মাঝে বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে্। এতে একদিকে যেমন আমচাষিরা কিছুটা আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে অন্যদিকে তেমনি দু:স্থ এবং অসহায় জনগণের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে।
কৃষিমন্ত্রী জানান, প্রাথমিক প্রতিবেদন বোরো ধান ৪৭ হাজার হেক্টর যা শতকরা ১০ ভাগ, ভূট্টা ৩ হাজার ২৮৪ হেক্টর যা শতকরা ৫ ভাগ, পাট ৩৪ হাজার ১৩৯ হেক্টর যা শতকরা ৫ ভাগ, পান ২ হাজার ৩৩৩ হেক্টর যা শতকরা ১৫ ভাগ, সবজি ৪১ হাজার ৯৬৭ হেক্টর যা শতকরা ২৫ ভাগ, এভাবে চিনাবাদাম ২০ ভাগ, তিল ২০ ভাগ, আম ১০ ভাগ, লিচু ৫ ভাগ, কলা ১০ভাগ, পেঁপে ৫০ ভাগ, মরিচ ৩০ ভাগ, সয়াবিন ৫০ ভাগ, মুগডাল ৫০ ভাগ এবং আউশ ৬ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্রিফিংকালে কৃষিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও সকলের সহযোগিতায় মহামারি করোনা এবং সুপার সাইক্লোন আম্পানের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশের খাদ্য উৎপাদনের বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা নয়, তা আরও বৃদ্ধি করে ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন করার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।