যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠি আল-কায়েদা দ্বারা সংগঠিত ভয়ঙ্কর ৯/১১ এর নারকীয় অধ্যায় রচনার পর সেখানকার মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর সরকারের নজরদারি, বৈষম্যমূলক আচরণ, অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়।
সম্প্রতি আহমেদ মোহাম্মদ নামের ১৪ বছরের এক বালক ঘরে নির্মিত এক ঘড়ি স্কুলে নিয়ে গেলে বোমা সন্দেহে তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে টেক্সাস পুলিশ। তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয় এই ঘটনা। নির্মম আচরণের শিকার আহমেদ মুসলিম বলেই এমনভাবে তাকে নাজেহাল হতে হয়েছিলো বলে দাবি করে সমালোচকেরা।
৯/১১ এর পরবর্তীতে মুসলিম আমেরিকানদের জন্য এই ধরনের অবমাননাকর ঘটনা প্রায়শই ঘটে আসছে। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন মতপথের মুসলিম ব্যক্তিরা বৈষম্যমূলক পরিবেশেই নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।
আল-কায়েদার সেই বিভৎস হামলার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় নেতিবাচক বিবেচিত তরুণ মুসলিম নেতাদের কয়েকজন তাদের কাজ এবং তাদের পথ নির্বাচনের প্রেরণা সম্পর্কে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সাথে সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত লেখক, নারীবাদী গবেষক এবং মুসলিম লেখক সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহানা হানিফ, স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং স্বেচ্ছাসেবী মার্ক ক্রেইন, দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক সংগঠন ড্রাম এর নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আহমেদ এবং আইনজীবী জাহরা বিল্লো।
শাহানা হানিফ:
ব্রুকলিনে জন্ম নেওয়া বাঙ্গালি লেখক, জনগণের আবাসন বিষয়ক সংস্থার সংগঠক, এলজিবিটিকিউ নারীবাদী গবেষক এবং মুসলিম লেখকদের সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ২৪ বছর বয়সী শাহানা। ভিন্ন পরিচয়ের অধিকারী শাহানার এতোসব পরিচয়কে যদি আমেরিকানরা সঙ্গত বলে মনে না করে; তবে এটা তাদের সমস্যা বলে মনে করেন তিনি।
শাহানা বলেন, আমি একজন নারী। আমি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেই। নিজেকে বাংলাদেশী বলি। মানুষ যাই বলুক না কেনো আমি নিজেকে এভাবেই বর্ণনা করা অব্যাহত রাখবো।
তিনি আরো বলেন, বৈষম্যমূলক পরিবেশকে নিদারুন পরাজয় বলে মনে হয়। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য বেঁচে থাকা এবং অন্যান্য প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের বেচে থাকার সংগ্রামে সাহায্য করা।
জাহরা বিল্লো:
সানফ্রান্সিসকো ভিত্তিক কাউন্সিল অন আমেরিকান-মুসলিম রিলেশন্স (সিএআইআর) এর নির্বাহী পরিচালক এবং নাগরিক অধিকার বিষয়ক আইনজীবী জাহরা বিল্লো (৩১)। ৯/১১ এর পরে জন্ম নেওয়া ইসলামোফোবিয়া এবং হিজাব পরে বাইরে গেলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা স্মরণ করেন।
জাহরা বলেন, এফবিআই নিয়মিতভাবে মুসলিম পরিবারের বাড়িগুলোতে যেতো এবং কোনো ভিত্তি ছাড়াই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতো। আমাদের দায়িত্ব সাধারণ আমেরিকানদের তাদের অধিকার সম্পর্কে জানানো এবং এই ধরনের অভিযানের সময় তাদের কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয় সে সম্পর্কে জানানো।
ফাহাদ আহমেদ:
নিউইয়র্কের দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসি শ্রমিকদের জন্য সংগঠন ড্রাম এর নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আহমেদ (৩৫), ৯/১১ এর পরে আরব এবং দক্ষিণ এশিয়ান সম্প্রদায়ের অনেককেই কর্মক্ষেত্র বা বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন ভীতিকর খবর পান বলে জানান। এই সম্প্রদায়ভূক্ত কমপক্ষে ১২০০ লোককে কয়েক দিন বা সপ্তাহের জন্য ধরে নিয়ে যেতো যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ। আক্ষরিক অর্থেই এই মানুষগুলো হারিয়ে যেতো বলে মন্তব্য করেন ফাহাদ।
ফাহাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদ এবং সংকীর্ণতার ইতিহাস অনেক পুরোনো। আমরা এই ইতিহাসের পথে নতুন সম্প্রদায় হিসেবেই শুধু অন্তর্ভূক্ত হলাম।
মার্ক ক্রেইন:
মোভঅন ডটওআরজি এর ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং ডেট্রোয়েট শহরে বিভিন্ন জনসেবামুলক কাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কর্মরত মার্ক ক্রেইন (২৭) বলেন, ইসলাম ধর্ম আমাকে জাতিগত সমস্যা নিরসনের জন্য সমাধান দেয়। কলেজে অধ্যয়নকালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ক্রেইন।
মুসলিমদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেইন বলেন, তোমরা আমাদের বহিরাগত করে তুলতে পারো না।