চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আমেরিকার অভিবাসন রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত: মার্কিন বিশেষজ্ঞ মত

বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) নীতি প্রণীত হলেও আমেরিকায় বরাবরই রাজনীতি অভিবাসনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটিতে সুষম একটি অভিবাসন প্রক্রিয়া গড়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই আমেরিকান বিশেষজ্ঞ এই মতামত দিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত সংস্কার উদ্যোগ আমেরিকার অভিবাসনকে খানিকটা হলেও সহজ করবে।

কানাডার বাংলা পত্রিকা ’নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ অনুষ্ঠানে আলোচনায় তারা এই মতামত দেন।

আলোচনায় অংশ নেন টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ইমিগ্রেশন বিষয়ক গবেষক ড. মেহনাজ মোমেন এবং নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি মৌমিতা রহমান। টরন্টো সময় বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি এই আলোচনা সম্প্রচারিত হয়।

ড. মেহনাজ মোমেন তার আলোচনায় বলেন, কানাডা বা অষ্ট্রেলিয়ায় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের অংশ হিসেবে অভিবাসন নীতিমালাকে সাজানো হয়। কিন্তু আমেরিকার অভিবাসন নীতিমালা সেইরকম না। এখানে অভিবাসনকে রাজনীতির একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, গত এক বা দুই দশকে আমেরিকার অভিবাসন একটি সাংস্কৃতিক ইস্যু উঠেছে। অভিবাসীদের পছন্দ করা বা না করাকে কেন্দ্র করে নতুন এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সংস্কারের প্রস্তাবনাকে অভিবাসনের নানা বাঁধাগুলো দূর করে অভিবাসনকে সহজ করার পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। তিনি বলেন, পরিপূর্ণভাবে এই প্রস্তবনাকে আইনে পরিণত করতে দুই কক্ষেই এটি পাশ হতে হবে। সেক্ষেত্রে সিনেটে রিপাবলিকানদের বাধার মুখে পরার সম্ভাবনা আছে। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আলাদা আলাদা পদক্ষেপ হিসেবে তার পরিকল্পনা কার্যকর করতে চান। সেটি করতে হয়তো বা তাকে বেগ পেতে হবে না।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার অভিবাসন সংস্কার প্রস্তাবনায় ‘আনডকুমেন্টেড’ শব্দের বদলে ‘নন সিটিজেন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এটি কিন্তু তার নীতিমালার গুরুত্বপূর্ণ একটি ঈঙ্গিত। অভিবাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং প্রশাসনের জন্য এই বার্তাটি অনেক প্রশাসনিক ইন্টারপ্রিটেশনকে বদলে দেবে।

তিনি বলেন, আমেরিকার যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন তারাই তাদের পছন্দের বা অপছন্দের দেশের লোকদের আসার পথ সহজ বা কঠিন করার লক্ষ্য নিয়ে অভিবসান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বা নীতিমালা গ্রহণ করে। তিনি বলেন,আমেরিকার অভিবাসন দক্ষ জনশক্তির প্রতি সহানুভুতিশীল হলেও অদক্ষদের বেলায় খুবই রুঢ়। আবার অর্থনীতির প্রয়োজনেই প্রতিবেশি দেশ থেকে লোক আসার পথ বন্ধ করেও দেয় না। এই সব কারণেই আমেরিকায় ‘আনডুকমেন্টেড’ জনগোষ্ঠী এতো বেশি। তিনি আমেরিকার অভিবাসনকে অর্থনৈতিক কর্মসূচি ঢেলে সাজনোর পরামর্শ দেন।

নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি মৌমিতা রহমানও আমেরিকার অভিবাসন পদ্ধতি অতিমাত্রায় রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে মত দেন। তিনি বলেন, অভিবাসন সংক্রান্ত প্রতিটি আইনই হয়েছে রাজনীতির কারণে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরনের জন্য। অপছন্দের লোকদের আমেরিকার বাইরে রাখার লক্ষ্য নিয়েই দেশটির অভিবাসন নীতি ও কাঠামো সাজানো হয়।

অ্যাটর্নি মৌমিতা রহমান বলেন, আমেরিকায় সবসময়ই অভিবাসন বিরোধী মনোভাব ছিলো। গত চার বছরে তা অনেক বেড়েছে। অভিবাসন বিরোধী মনোভাবের কারণে এই সময়ে বিশ্বের অনেক দেশে আমেরিকার কনস্যুলার সেবা, ভিসা দেয়া সংক্রান্ত কাজকর্ম গুটিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় লোক আসা নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রাম্প প্রশাসন এসব করেছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিবাসন সংস্কার নীতিকে অভিবাসন এবং অবৈধদের বৈধতা পাওয়ার সহজ পথ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, বাইডেনের প্রস্তাবনায় অবৈধদের বৈধতা পাওয়ার আবেদন করার ক্ষেত্রে কঠিন কোনো পূর্ব শর্ত রাখা হয়নি।

তবে আমেরিকার বিভিন্ন ইমিগ্রেশন কোর্টে দায়িত্বে থাকা ট্রাম্প আমলে নিয়োগ পাওয়া ইমিগ্রেশন বিচারকদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রাম্পের সময় বিভিন্ন পেশা থেকে বিশেষ করে আইন শৃংখলা বাহিনী, সেনাবাহিনী থেকে অনেককে ইমিগ্রেশন কোর্টে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশই ইমিগ্রেশন বিরোধী। তাদের অভিবাসন বিরোধী মনোভাব রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নিষ্পত্তিতে প্রভাব পরতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অভিবাসীদের প্রতি প্রেসিডেন্টের মনোভাব সামগ্রিকভাবে অভিবাসন সংক্রান্ত কাজে প্রভাব ফেলে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজে যেহেতু নিজেকে অভিবাসীবান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার একটি ইতিবাচক ছাপ পরবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, আমেরিকার অভিবাসন নীতিমালা এবং পদ্ধতি নিয়ে মিডিয়ায় আরো বেশি আলোচনা হওয়া দরকার।  অনেকের কাছেই মনে হতে পারে, মুসলমানদের যেতে দেয়া না দেয়া বা অবৈধদের বৈধতার দেনদরবারের মধ্যেই আমেরিকার অভিবাসন কাঠামোর পরিধি। কিন্তু এই আলোচনায় জানা গেলো- এটি তার চেয়েও বিস্তৃত কিছু। তিনি আমেরিকায় অভিবাসনে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জেনে নিজেদের মতো রিসার্চ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেন।