খবরে প্রকাশ এখন আমেরিকায় চলছে নির্বাচন পরবর্তী ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলন। বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে জ্বালাও-পোড়াও ধরণের কিছু কর্মসূচী চলছে। আমেরিকার মতো দেশেও নির্বাচন শেষে হাঙ্গামা-হই-হুল্লোড়ের ঘটনা ঘটে! বিষয়টা অনেকটা অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি। নির্বাচনে জয়ী এমন এক ব্যক্তি যিনি মুসলিমদেরকে অভিবাসীদের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দিতে চান না। অভিবাসীদের যিনি পাল ধরে ফেরত পাঠাতে চান। মেক্সিকো ওয়াল নির্মাণে যার আগ্রহের কমতি নেই। ‘ইসলামোফোবিয়া’ ছিল যার প্রধান নির্বাচনী রণকৌশল। যিনি প্রতি মুহূর্তে বর্ণবাদী আচরণে, যৌনতা নিয়ে মুখর- সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। বিশ্ব গণমাধ্যমে এই কথাগুলোই আমরা বারবার দেখছি এবং শুনছি। হিলারি এবং ওবামা তাকে ইতোমধ্যে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন নাইন-ইলেভেন এর মতোই আরও একটি দিন ইলেভেন-নাইন। নির্বাচনের বিষয়টি একান্তই মার্কিনীদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নীতি যেহেতু সারাবিশ্বকে প্রভাবিত করে তাই গণমাধ্যমের কল্যাণে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় বাংলাদেশসহ প্রায় প্রতিটি দেশেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কে এই ট্রাম্প? তাকে নিয়ে পত্র-পত্রিকা-টিভি-অনলাইন জুড়ে যথেষ্ট সংবাদ হয়েছে। কী পার্থক্য গড়ে দিলেন ট্রাম্প? কী ছিলো তার চাবিকাঠি এই নির্বাচন জয়ের পেছনে? কেন হিলারি ক্লিনটন পরাভূত হলেন? এমন নানান প্রশ্নের উত্তরে যে যার মতো করে হিসাব কষছেন। বিভিন্ন মতামত জরিপ এবং গণমাধ্যমকে একরকম বোকা বানিয়ে ট্রাম্প ঠিকই সিংহাসনে চড়ে বসলেন। ট্রাম্প করলেন বাজিমাত। কিন্তু গণমাধ্যমের পাতায় আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই নির্বাচন হয়ে রইলো সবচেয়ে বড় ‘আপসেট’। ট্রাম্প সমর্থকরা মনে করছেন, তারা আবার তাদের দেশ ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু, অন্যরা আছেন তীব্র আতংকে, ভয়ে, শংকায়- আর ভাবছেন এমন নেতা কী করে আমেরিকার মতো একটি দেশকে এগিয়ে নেবেন! গণমাধ্যম ভাবছে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি কি হবে? কোন দেশের সাথে কী সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি? ওয়াশিংটন ডিসি, ফেডারেল কোর্ট, সেনা, নির্বাহী, অর্থ সংস্থা ঢেলে সাজানোর যে ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন তার ধরণটা কেমন হবে? কী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন ‘দ্য গ্রেট ট্রাম্প’? যেই ট্রাম্পের সঙ্গে প্রগতিশীল আমেরিকার কোন মিল নেই তিনি কীভাবে বিভাজন ভেঙে সামনে এগুবেন, ঐক্যের ইমারত গড়বেন? এক মার্কিন ভোটার বলছিলেন, আমেরিকা বিশাল ভুল করলো। আর অন্য এক মার্কিন নাগরিক আক্ষেপ করছিলেন, আমেরিকার জনগণ তাদের ভুলের মাশুল দেবে। ইসলাম বিদ্বেষী কথাবার্তা যদিও বলেছিলেন ট্রাম্প কিন্তু সে সব কথা তার ওয়েবসাইটে আর পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবেই হয়তো মিলিয়ে যাবে অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের যতো হুমকি, বা মেক্সিকো সীমান্তে ওয়াল নির্মাণের হুংকার। এগুলো হয়তো ট্রাম্প বলেছিলেন আমেরিকানদের সন্তুষ্ট করতেই যাতে তারা নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আপসেটটি ঘটিয়ে ফেলেন। দিনশেষে তাই হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ পুরুষেরা একজন নারীকে নির্বাচিত না করে ট্রাম্পের মতো একজন বিলিয়ন ডলার ব্যবসায়ীকে বেছে নিয়েছেন তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ২০১১ সালে হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস ডিনারে যেভাবে ওবামা ট্রাম্প-কে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করেছিলেন হাজার হাজার মানুষের সামনে, তার জবাব ঠিক ঠিকই দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর শুধু ওবামা, হিলারি বা ডেমোক্র্যাটদের নয়, পুরো আমেরিকাকে বোকা বানালেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও ‘গ্রেট’ বানাতে সে দেশের মানুষ ৯ নভেম্বর নির্বাচিত করলো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। গোটা আমেরিকা গ্রেট না ট্রাম্প নিজেই একজন গ্রেট সেটা বুঝতে সময় চলে যাবে। ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় ট্রাম্প কার্ডই যে ছিলো, বোকা আমেরিকানদের মন জয়। যেখানে তিনি শতভাগ সফল হতে পেরেছেন।