আমি শিল্পী মানুষ, কোর্ট-কাচারিতো আমার জায়গা না: ন্যান্সি
‘মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদীতভাবে আমার নাম জড়ানো হয়েছে’
অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী ন্যান্সি। হঠাৎ-ই সংবাদপত্রের শিরোনামে তিনি! না, কোনো নতুন গানের জন্য নয়। ছোট ভাই শাহরিয়ার আমান সানির প্রাক্তন স্ত্রী সামিউন্নাহার শানুর করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ‘আসামি’ হয়ে খবরে তিনি! এ মামলায় ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ন্যান্সির ভাই সানি। ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযুক্ত মামলায় নিজের নাম দেখে বিব্রত ন্যান্সি। কিছুটা ক্ষুদ্ধও তিনি। পারিবারিক বিষয় হলেও এখন তা জাতীয় খবরের পাতায়। আর এসব বিষয় নিয়েই চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে শনিবার সন্ধ্যায় বিস্তারিত বলেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কণ্ঠশিল্পী:
সাধারণত দেশ ব্যাপী ন্যান্সি কোনো গান নিয়ে আলোচিত হতে দেখা যায়। কিন্তু এবার পারিবারিক বিষয় নিয়ে খবরের শিরোনাম আপনি। সমস্যাটা কীভাবে ফেইস করছেন?
পারিবারিক বলতে এটাতো আমার ভাইয়ের বিষয়। তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে আমাকে কেন জড়ানো হলো আমি বুঝলাম না।
আপনার ও আপনার ভাইয়ের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ঠ অভিযোগ কী?
থানায় সানির প্রাক্তন স্ত্রী (সামিউন্নাহার শানু) তার অভিযোগ নামায় যা বলে তার মূলকথা হচ্ছে এই: আমার ভাই সানির সাথে তার প্রেমের বিয়ে। বিয়ের পর থেকেই আমার ও আমার স্বামীর ইন্ধনে সানি তার বেকারত্ব দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করতো। সানির এমন চাপে বিভিন্ন সময় মেয়েটি তার বাবার কাছ থেকে টাকা পয়সা সোনা দানা ও আসবাবপত্র এনে দিয়েছে। তারপর গেল ২৬ আগস্ট সানি আমার ইনস্ট্রাকশান মতো মেয়ের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবী করে। মেয়েটি বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানালে সানি তাকে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি, চড়, থাপ্পড় দিয়েছে। এক পর্যায়ে মেয়েটির গলা টিপে ধরে সানি। শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টাও করে। পরে মেয়ের ফোন পেয়ে তার ভাইয়েরা এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরপর সে অসুস্থ ছিলো, কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সে ৬ সেপ্টেম্বর থানায় এসে মামলা করে। অভিযোগ নামায় এরকম ভাবেই বলা।
সামিউন্নাহার শানুর অভিযোগ যে মিথ্যা, এটা কীভাবে প্রমাণ করবেন?
যদি সত্যিকার অর্থেই সানি তার প্রাক্তন স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করতো, নির্যাতন করতো তাহলে সে ফোন করে তার ভাইদের উদ্ধার করে নিয়ে যেতে বলতে পারলো? অথচ পুলিশকে জানাতে পারলো না? দশ দিন বিশ্রাম করে মামলা করার কথা মনে হলো তাদের!
ঘটনার দশ দিন পর তারা কেন পুলিশের শরনাপন্ন হলেন, কী মনে হয় আপনাদের?
আসলে ঘটনা হচ্ছে ২৭ আগস্ট সানি ডিভোর্স দেয় সামিউন্নাহার শানুকে। ডিভোর্স পেপারটি ঠিকানায় পৌঁছুতে একটু সময় লাগে। হয়তো ডিভোর্স নোটিশটি পেয়েই এমন ঘটনা সাজিয়ে মামলাটি করেছে। আমার প্রশ্ন হলো, ডিভোর্স লেটার পাওয়ার পর কেন মনে হলো তিনি নির্যাতনের শিকার? আগে কেন সানির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলেন না তার বিরুদ্ধে নির্যাতন বা যৌতুকের অভিযোগ এনে?
আপনার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এনে মামলা রুজু হয়েছে, এটা কি মিথ্যে?
নারী নির্যাতনের যে প্রচলিত আইন আমাদের রয়েছে এটার প্রতি অবশ্যই আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। এটা নারীদের সেফটির জন্য করা হয়েছে। দেশের অসংখ্য নারী নির্যাতনের শিকার। প্রতিদিন প্রচুর নারী নির্যাতিত হন। এটা চরম সত্য। এটাকে আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু কেউ এই মামলা করতে গেলে যদি যাচাই বাছাইয়ের একটা অপশন থাকতো তাহলে আমার মনে হয় খুব ভালো হতো। মানে একটু আইনি তদন্ত করে দোষি সাভ্যস্ত হলে বিষয়টা সুন্দর হতো। তাহলে অন্তত এ ধরনের নোংরা বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়া লাগতো না। যে কেউ চাইলেই তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারতো না।
আপনার ভাই ও তার স্ত্রীর মধ্যকার ঝামেলায় আপনার নাম জড়ানোর কারণ কী বলে মনে করেন?
আমি উকিলের সাথে কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি, এরকম মামলায় যখন কেউ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে তখন শুধু ছেলের নাম দিলে বিষয়টা পাকাপোক্ত হলো না। এক্ষেত্রে মেয়ে পক্ষ সাধারণত ছেলেসহ ছেলের পরিবারের যারা আছে তাদেরকেও আসামির কাতারে ফেলে দেয়। তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক বা না থাকুক।
যতটুকু জানি, আপনি স্বামীর সংসারে থাকছেন? তবু ভাইয়ের মামলায় আপনার নাম কেন?
আমারওতো এটাই প্রশ্ন। আমার বিয়ে হয়ে গেছে বহু আগেই। বিয়ের পরতো সংসার থেকে বহু আগেই দূরে চলে এসেছি। এখন স্বামীর সংসারে আছি। তো সেই সংসার থেকে এসে আমার ভাইয়ের সংসারে নেতৃত্ব বা কর্তৃত্ব খাটানোর বিষয়টিওতো প্রশ্নবিদ্ধ।
ডিভোর্সের আগে আপনার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কি উনার স্ত্রী কখনো নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন?
এখন অনেকে এমন প্রশ্ন রাখতে পারেন যে, আপনিতো ভাইয়ের সাথে থাকেন না, দূরে থাকেন। সে স্ত্রীকে নির্যাতন করলো কিনা আপনি দূর থেকে কীভাবে নিশ্চিত হলেন! এমন প্রশ্নে আমি বলবো, আমার ভাই ওই মেয়েকে নির্যাতন করতো এটা আমি মেনে নিতাম যদি ডিভোর্সের আগেও এরকম কথা উঠতো। আমরাতো বয়োজৈষ্ঠ্য ছিলাম, আমাদের কাছেওতো কখনো এরকম কোনো অভিযোগ করেনি। আমরাও শুনিনি। তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গত এক বছর ধরেই তিক্ততা চলছিলো। কিন্তু কখনো আমাদের কাছে এরকম বলেনি যে, তোমার ভাইয়ের সাথে বনিবনা হচ্ছে না।
তাদের বিয়ের ক’বছর হলো?
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে হয়েছে তাদের। কলেজে একসাথে পড়তো। খুব অল্প বয়সে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কিন্তু এক ছাদের নীচে যখন থাকতে শুরু করলো, তখন তাদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া হয়তো হচ্ছিলো না। হয়না অনেক সময় অনেকের যে, অ্যাডজাস্টমেন্ট হয় না! কিন্তু তাদের এই বিষয়টা একান্তই তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিষয়। এখানে আমাকে কেন জড়ানো হলো বা আমার স্বামীকেই বা কেন জড়ানো হলো কিছুতেই বুঝতে পারছি না। তাও যদি একই ছাদের নীচে তাদের সঙ্গে থাকতাম, তাহলেও এক কথা ছিলো!
তারমানে আপনি বলছেন, আপনাকে মামলায় জড়ানো উদ্দেশ্যপ্রণোদীত?
এটাতো স্পষ্ট। বিয়েটাতো আমি করিনি, আমার ভাই করেছে। সংসারটাতো আমার না। আমার ভাইয়ের সংসার। সে তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক রাখবে কিনা, এটা তাদের ইন্টারনেল বিষয়। তার নিজের সিদ্ধান্ত। আমার ক্ষেত্রে এমনটা যদি ঘটতো যে আমার স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছে না, তাহলে তার সাথে সম্পর্ক রাখা না রাখার সিদ্ধান্তটা একান্তই আমি নিতাম। কিন্তু এখানে আমার ভাইয়ের সম্পর্কের জন্য আমাকে, আমার স্বামীকে জড়ানো হলো। এর একটাই উদ্দেশ্য, কারণ ন্যান্সির নাম জড়ালে চারদিকে তোলপাড় হবে। কোনঠাসা করে রাখা যাবে। সংবাদপত্রে নিউজের পর নিউজ হবে, ফলে তাদের উদ্দেশ্যটা হাসিল হবে। নিউজে আমার নামটা বিক্রি করছে, এটা দুঃখজনক। অযথা হয়রানির কারণে এখন আমাকে থানা পুলিশ দৌড়াতে হচ্ছে। কিন্তু আমিতো শিল্পী মানুষ, কোর্ট-কাচারিতো আমার জায়গা না।
উদ্দেশ্য হাসিলের কথা বলছিলেন?
হ্যাঁ, এই মামলাটা হচ্ছে একটা প্রেসার! এটা দিয়ে তারা এটাই বলতে চাইছে যে, এখন আমার সাথে নেগোসিয়েশনে আসো। এটা মূলত টাকা পয়সা আর সম্পত্তি বিষয়ক জটিলতা। আমাদের মানহানি ও অর্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলাটি করেছে।
যেমন?
আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি বন্টনের পর থেকেই মূল ঝামেলাটা শুরু। নেত্রকোনায় আমাদের প্রচুর প্রপার্টি ছিলো। গত ডিসেম্বর/জানুয়ারির দিকে সেগুলো বন্টন হয়। ভাগ বাটোয়ারা করে সানি নেত্রকোনায় ৪১ শতাংশ জমি পায়। এই জমি পাওয়ার পর থেকেই সানির সাথে তার স্ত্রীর ঝামেলা শুরু।
আপনার ভাইকেতো পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে? এখন মামলা নিয়ে কী ভাবছেন?
হ্যাঁ। আমরা জানতামই না যে আমাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। আমার ভাই সানি ঢাকা ছিলো। ৮ সেপ্টেম্বর অনার্স পরীক্ষা দিতে শুক্রবার রাতে সে নেত্রকোনায় যায়। নেত্রকোনা পৌঁছানোর মিনিট দশেকের মধ্যেই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আমাকে বললেন, নারী নির্যাতন মামলায় একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আরো দুই আসামিকে খুঁজছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার এমন কথা শোনার পর আমি ভাবলাম, এক মুহূর্তে আসামি হয়ে গেলাম! এটাকে আমি দুর্ঘটনা হিসেবেই নিয়েছি। এখন আল্লাহ ভরসা। আইনি প্রক্রিয়ায় আগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।