গত ২ সেপ্টেম্বর তুরস্কের বদ্রুম উপকূলে পড়ে থাকা ৩ বছরের শিশু আয়লান কুর্দির নিথর দেহের ছবি নিয়ে বিশ্বব্যাপী হইচই পড়ে যায়। ছবিটা সিরীয় শরণার্থীদের ট্র্যাজিক ছবি হিসেবেই বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ছবিটা প্রকাশের পর পরই টনক নড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর। জার্মানীসহ অন্য দেশগুলোর শরণার্থীদের প্রতি মানবিক হয়ে উঠার গল্পের শুরুও সেখান থেকে।
আয়লান কুর্দির বাবা আব্দুল্লাহ কুর্দি যে নৌকা করে তুরস্ক থেকে ইউরোপের দেশ গ্রীসে যাত্রা করে নিজ স্ত্রীসহ দুই সন্তানকে হারিয়েছেন ঐ নৌকারই অন্যযাত্রীরা তাকে মানবপাচারকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন।
ইরাকের এক নারী যার দুই সন্তানও আয়লান কুর্দির মত সাগরে ডুবে মারা গেছে ঐ নৌকা করে ইউরোপে যাওয়ার পাথে তিনি অভিযোগ করেছেন আব্দুল্লাহ কুর্দি একজন মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য। জয়রব আব্বাস ও তার স্বামী আহমেদ হাদি জাওয়াদ অভিযোগ করে বলেন, আব্দুল্লাহ নৌকাটি ডুবে যাওয়ার সময় ছোট নৌকাটির স্টিয়ারিং ধরে ছিলো। নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পরে আব্দুল্লাহ তাদের কাছে অনুরোধ করেন তারা যেন এই কথা না প্রকাশ করেন।
স্ত্রী পুত্র হারানো শোকে বিপর্যস্ত আব্দুল্লাহ কুর্দি এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেছেন, আমি কোনো মানবপাচারকারী না সেইটা প্রমাণ করে দিব। আমি মানবপাচারকারীকে ধরতেই শুধু আবারো তুরস্কে যাব।
তিনি বলেন, আবু হুসেইন নামে এক পাচারকারীই ঐ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। ইরাকের এরবিলে কুর্দিদের আঞ্চলিক প্রধানমন্ত্রীর অতিথি ছিসেবে অবস্থান করছেন আব্দুল্লাহ কুর্দি। সেখান থেকে ব্রিটশি মেইল অনলাইনকে তিনি এক সাক্ষাৎকার দেন।
আয়লানের বাবা বলেন, আমি জানি না তুরস্কের সেই পাচারকারীর আবু হুসেইন না অন্য কিছু। কিন্তু তার চেহারা মনে আছে। আমি লক্ষ মানুষের মধ্য থেকে ঠিকই তাকে খুঁজে বের করতে পারবো। এবং আমি এটাও নিশ্চিত যে তাকে আমি ঠিকই খুজে বের করবো। আর একমাত্র এই কারণেই আমি তুরস্কে যাব।
আবু হুসেইনের সঙ্গে তুরস্কের সমুদ্র উপকূল বদ্রুমে আব্দুল্লাহর দেখা হয়। সে মূলত একজন মানুষ পাচারকারী চক্রের দালাল ছিলো। তাকে গ্রীসে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আব্দুল্লাহ কুর্দি ২ হাজার ৯০০ পাউন্ড দেয়। এর আগেও দুইবার স্বপরিবারে ইউরোপে যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান আব্দুল্লাহ। তাই সেদিন গভীর রাতে স্ত্রী-পুত্রসহ বিপদজনক সমুদ্র পথে যাত্রা করে তারা দালালের মাধ্যমে। সেদিনের সমুদ্র যাত্রার বর্ণনাও দিয়েছেন আয়লানের বাবা।
তিনি বলেন, হুসেইনকে টাকা দেওয়ার পরে আমরা বদ্রুম সমুদ্র উপকূলে পৌঁছাই। আমাদের সে কথা দিয়েছিলো গ্রীসে পৌঁছে দেব। টাকা রাখার পর সে আমাদেরকে নৌকাতে উঠায়। আহমেদ নামের সেখানে তুরস্কের আরো একজন ছিলো। তারা দুইজন এক সাথে কাজ করছিলো।
‘আমি জানি না তার সেইটা আসল নাম কিনা। হুসেইন, আহমেদ নামে দুইজন মানবপাচারকারী ও একজন সিরীয়ান নাগরিক ছাড়া আর কেউ ছিল না ঐ নৌকায়। এছাড়া আর একজন ছিল সেই নৌকায়। তিনি নৌকার মাঝি।’
আব্দুল্লাহ বলেন, আমি তার নাম জানি না কিন্তু সে একজন টার্কি ছিলো এইটা বলতে পারি। সে যখন দেখলো বড় একটা ঢেউ আসছে তখন সে নৌকা থেকে লাফ দেয়।
আয়লানের বাবা তার স্ত্রী সন্তানের মৃত্যুর জন্য মানবপাচারকারীদেরকেই দায়ী করেছেন।