চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘আমার অনেক ব্যথা, অনেক কষ্ট’

‘আমার অনেক ব্যথা, আমার অনেক কষ্ট। অামি স্কুলে যেতে চাই। আমি খেলতে চাই।’

এমন আকুতি ১২ বছরের ছোট্ট শিশু স্বর্ণালীর। সাতক্ষীরার মেয়ে মুক্তামনির পর সেও এক ধরণের বিরল রোগে আক্রান্ত। চ্যানেল আই অনলাইনকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই তার কষ্টের কথা জানিয়েছে শিশুটি।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের টেগাটাপাড়া গ্রামের স্বর্ণালীর ডান হাতেও মুক্তামণির মতো দেখা দিয়েছে বিরল রোগ। এ নিয়ে দিশেহারা  স্বর্ণালীর বাবা-মা। মুক্তামণির অপারেশনের খবর মা রুমা বেগমের মনে আশা জুগিয়েছে। স্বপ্ন দেখছেন তার মেয়েটিও সুস্থ্য হয়ে উঠবে। কিন্তু বাবা আব্দুল মান্নানের সামান্য আয়ে তা দুরাশা হতে বসেছে।

স্বর্ণালীকে মঙ্গলবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি  করা হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে ৩২নম্বর ওয়ার্ডের ২৩ নম্ববর বেডে চিকিৎসাধীন।

ডান হাতে ছোট ছোট কালো দাগ নিয়ে জন্ম হয় স্বর্ণালীর। শুরুতে জন্মদাগ মনে হলেও বয়স যখন ৫ তখন থেকেই বাড়তে থাকে দাগগুলো। এক সময় তা বিস্তার লাভ করে পুরো হাত জুড়ে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা। রোগের কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে শিশুটি।

দিন যতো যাচ্ছে কালো দাগের সঙ্গে ক্রমেই মোটা ও ভারি হয়ে উঠছে স্বর্ণালীর হাত। হাতে ছোট ছোট গুটি ও মাংসপিণ্ডের সংখ্যা বেড়ে চলেছে ক্রমশ। নিচের অংশের চামড়া ঝুলে গেছে। স্বর্ণালীর হাতের মাংসপিণ্ডগুলো পেকে মাঝে মাঝে পুঁজ বের হয়। তখন ব্যথায় কাতর হয়ে ওঠে শিশুটি।

রোগের কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বর্ণালীর স্বাভাবিক কার্যক্রম। হাতের আকৃতির কারণে এলাকার শিশুরা তাকে দেখে ভয় পায়। কেউ তার সঙ্গে খেলতে চায় না। স্কুলে গেলেও বসতে চায়না পাশে।  যার কারণে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে স্বর্ণালীর লেখাপড়া। সে নোনামাটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তো।

স্বর্ণালীর বাবা আব্দুল মান্নান চ্যানেল অাই অনলাইনকে জানান, এ রোগের কারণে দিন দিন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে শিশুটি।

তিনি বলেন: ছোট থেকেই ডান হাতে কালো দাগ নিয়ে জন্মায় স্বর্ণালী। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চামড়া মোটা হতে থাকে এবং বাড়তে থাকে চুলকানি।  সেইসঙ্গে বড় হতে থাকে লোমকূপের গোড়া। মেয়েকে নিয়ে সেসময় রাজশাহী শহরে চিকিৎসক দেখালেও এ রোগের কোন উপশম নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন তারা।

পবা উপজেলার সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জীব কুমার সাহা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, স্বর্ণালীর হাতের যে রোগ তা মুক্তামণির মতো একই ধরণের কিনা সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। তবে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে স্বর্ণালীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার সকালে রেফার করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। স্বর্ণালী বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্বর্ণালীর বাবা আবদুল মান্নান দুর্গাপুরের দাওকান্দি কলেজের পিওন ও মা রুমা বেগম গৃহিনী। স্বর্ণালীর বড় ভাই ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।  পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আব্দুল মান্নান।

 

মেয়ের চিকিৎসার জন্য সহায়তা চেয়ে স্বর্ণালীর মা রুমা বেগম বলেন: আমি চাই আমার মেয়েরও মুক্তামণির মতো চিকিৎসা হোক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবায় আমার মেয়ে আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠুক।