চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আমাদের প্রজন্মকে বিশ্বাস করে সিনেমা হলে আসুন: শরিফুল রাজ

২৯ নভেম্বর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে সার্ফিং নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ছবি ‘ন ডরাই’…

বিলবোর্ড, ক্যাটওয়াক, র‌্যাম্প মডেল হিসেবে চষে বেড়িয়েছেন শরিফুল রাজ। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে বড় বড় বিলবোর্ডে দেশের শীর্ষস্থানীয় সব ফ্যাশন হাউজের মডেল হিসেবে দেখা গেছে তাকে। তবে চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়েই সবার নজরে আসেন রাজ। ২০১৬ সালে রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘আইসক্রিম’ ছবিতে অভিনয় করে সিনেমার দর্শকের কাছে পৌঁছেন তিনি। ২৯ নভেম্বর আসছে তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রযোজনায় এবং তানিম রহমান অংশুর পরিচালনায় ছবির নাম ‘ন ডরাই’। ছবিটি নিয়ে রাজ কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে:

দেশে প্রথমবারের মতো সার্ফিং নিয়ে নির্মিত ছবি ‘ন ডরাই’-তে কাজের প্রস্তুতি কেমন ছিল?
পরিচালক অংশু ভাই কাস্ট করার পর ট্রেনিং-এ যাই। কারণ, সার্ফিং পারতাম না। সাঁতার আমি ভালো পারি, কিন্তু সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করা ওতো সহজ ছিল না। যারা সার্ফার তারা ছোট থেকেই শেখেন। কিন্তু আমাকে শিখতে হয়েছে তিনমাসে। ট্রেনিংয়ের সময় বড়বড় ঢেউ গেছে আমার উপর দিয়ে। বড় কোনো এক্সিডেন্ট হতেও পারতো! আমার ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে কয়েকবার শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছি পানির উপরে এসে। যখন বড়বড় ঢেউ আসতো তার মধ্যে ডুবে যেতাম। পানির মধ্যে তো নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না। ঢেউ যতক্ষণ পর্যন্ত শান্ত না হয়েছে, ততক্ষণ পানির মধ্যেই থাকতে হয়েছে। এখানে অনেক ব্যালেন্স ও দমের ব্যাপার আছে। একটু একটু করে আমাকে আগাতে হয়েছে। আমি পরিচালক ও প্রযোজককে কথা দিয়েছিলাম আমাকে এটা পারতেই হবে! এছাড়া কোনো অপশন ছিল না। পুরোটা শিখতে আমার তিনমাস লেগে গেছে। ট্রেনিং করিয়েছেন নূর মোহাম্মদ। তিনি কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা। প্রযোজক রুহেল ভাইয়ের এতো আন্তরিক ছিলেন বলে বোঝাতে পারবো না।

চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষাও তো শিখতে হয়েছে…?
ভাষার ব্যাপারে অকোয়ার্ড অবস্থায় একটু পড়তে হয়েছে। কক্সবাজারের লোকাল গল্প তাই তাই চট্টগ্রামের ভাষা শেখা অবধারিত ছিল। ভাষা শেখার জন্যও ফাইট করতে হয়েছে। এজন্য একজন ভালো মেন্টর পেয়েছিলাম। হয়তো সেখানকার ভাষায় কথা বলতে পারবো না, তবে স্ক্রিপ্টে যা ছিল তা রপ্ত করেছিলাম। এটাও টাফ ছিল। কাজের পর আরেক চ্যালেঞ্জ ছিল পরিচালক, মেন্টর হ্যাপি কিনা! ফাইনালি তারা হ্যাপি হয়। ‘ন ডরাই’ আমার জীবনের অন্যতম একটা জার্নি। অভিনয় আমার নেশা, পেশা। তাই এমন সুন্দর প্রজেক্টের সঙ্গে আগামীতেও থাকতে চাই। যেখানে চ্যালেঞ্জ, চরিত্র, মজা সবকিছুই থাকবে। আমি মনে করি, আমার পরের কাজগুলোও এমন হবে।

‘ন ডরাই’-তে কী এমন ছিল যে কারণে সেন্সর বোর্ড প্রথমে আটকে দিয়েছিলো?
সেন্সর বোর্ড কোনো অসঙ্গতি পেলে আটকাতে পারে! কিন্তু আমি এই জেনারেশনে এসেও দেখি মফঃস্বলের অনেক হলে কুরুচিকর কাটপিছ সিনেমা চলছে। তখন সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা কোথায় থাকে? ভালো সিনেমা ও স্ক্রিপ্টের সঙ্গে যদি একটা গালিও থাকে তার মানে ওটার যৌক্তিকতা আছে। এই জেনারেশনে থেকে যদি আশির দশকে চিন্তা নিয়ে বসবাস করি তাহলে তো হবে না। পরিচালক, শিল্পী, প্রযোজকের স্বাধীনতা দিতে হবে। সেন্সর বোর্ডের কাজ সেন্সর করছে। তাদের কথা মানার পর ছবি ছেড়ে দিয়েছেন।

‘ন ডরাই’ তো নারী প্রধান ছবি। আপনার চরিত্রের বিশেষত্ব কী?
নারীর সম্মানের জায়গাটা আমার কাছে অনেক। আমি যখন গল্প পাই, তখন নারী প্রধান গল্প কিনা সেভাবে নেইনি। আমার চরিত্রের জায়গাটা দেখেছি। আমি দেখলাম আমার চরিত্রটি ঠিকঠাক আছে। আমি অভিনেতা হবো, এটাই করতে আমার মন চায়। এটাই আমার পেশা। কোনো না কোনো কারণে এর গল্প আমাকে টেনেছে। পরিচালক আমাকে জোর করেনি। গল্প ও ছবি দেখার পর দর্শকরা বলবে আমি কী করেছি।

কোনটা চান ‘ন ডরাই’-এর ব্যবসায়িক সফলতা, নাকি দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আওয়ার্ড? 
এটা নিয়ে আমার হেডেক (মাথাব্যাথা) নেই। আমি চাই, আমাদের প্রজন্মের সবাই ছবিটি দেখুক। কারণ, আমাকে কিন্তু এখনকার বেশীরভাগ ছবি সিনেমা হলে টেনে নিয়ে যায় না। হলে গিয়ে সর্বশেষ দেখেছি দেবী, আয়নাবাজি এগুলো। আমি মনে করি, আমাকে সিনেমা হলে নিয়ে যাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জেনারেশনে যারা কাজ করছি, তারা ভালো চিত্রনাট্য পছন্দ করি, ভালো গল্প নির্বাচন করি, ভালো পরিচালক-প্রযোজক নির্বাচন করি। তাই আমাদের প্রজন্মকে বিশ্বাস করে সিনেমা হলে আসুন। কাজ দেখুন, তারপর মতামত জানান। যন্ত্রণা গানটা রিলিজের পর ক্লাস ফোর-পাইভে পড়া কিছু শিক্ষার্থী আমাকে জানিয়েছে এই গানটা তাদের ভালো লেগেছে। তারা টাকা জমাচ্ছে। তাদের স্কুলের ম্যাডাম নিয়ে হলে গিয়ে ‘ন ডরাই’ দেখবে বলে।

‘ন ডরাই’ মানে ভয় পাইনা। আপনি ব্যক্তি জীবনে কোনো কিছুতে ভয় পান?
আমার ভয় ডর নেই। তেমন কিছুতেই আমি ভয় পাইনা। যখন যে কাজ শুরু করি ঠিকভাবে শেষ করার জন্য আমার মধ্যে তাড়না কাজ করে।

আপনার আরেক সিনেমা ‘পরাণ’- নাকি বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড এবং মিন্নি’র গল্প নিয়ে?
পরাণ এর কাজ পুরোপুরি শেষ। আমার দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। রায়হান রাফী বাণিজ্যিক ছবির নির্মাতা হিসেবে খুব ভালো। তার সেন্স অব হিউমার খুব ভালো। ‘ন ডরাই’ থেকে এটা একেবারে আলাদা কাজ। শতভাগ বাণিজ্যিক ধারার ছবি। আমরা কারও ঘটনা বা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সিনেমা করিনি। এটা মফঃস্বলের ছেলেমেয়ের গল্প। মিন্নির ঘটনা নেই এখানে। এটা মানুষের কনফিউশন। মিন্নি, বন্ডের চরিত্র করতে গেলে ওইসব কাজের প্রস্তুতি নিতে হবে অনেকদিন ধরে। আমাদের গল্পের প্লট মিন্নি-বন্ড না।

ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আমি সিনেমা চুজ নিয়ে খুব কনসার্ন। অনেক ছবির অফার এসেছে, পছন্দ হয়নি। না করে দিয়েছি। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো চরিত্র। এটা ভালো না লাগলে করি না। ‘আইসক্রিম’ করার সময় রেদওয়ান রনি আমাকে স্পার্ক করে দিয়েছে আমি কী করতে পারবো। ‘ন ডরাই’ পছন্দ করেছি অন্যরকম গল্প। নারীবাদী চরিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। ‘হাওয়া’ করলাম এটাও অন্য স্বাদের সিনেমা। এটার প্রধান কারণ পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন। তার মেকিংয়ে অন্যরকম একটা আর্ট আছে। সবমিলিয়ে আমার কাজগুলো গঠন, চরিত্র সবই আলাদা। মনে হয় কেউ মিল খুঁজে পাবে না। আমি নিজেই পাইনা। কোনো চরিত্র করার পর বাসায় ফিরে যদি সেটা মিস করতে না পারি তাহলে অস্বস্তি লাগে। যেমন ‘হাওয়া’ শেষ করে আসার পর প্রতি রাতে ঘুমাতেও অসুবিধা হয়।