সেই কতো বছর আগের কথা। প্রথমে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল পাকিস্তানে যে হোটেলে ছিলো তার সামনে বোমা হামলা। অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে কিউইদের দ্রুত দেশে ফিরে যাওয়া। এরপর শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল পাকিস্তানে গেলো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে। কিন্তু মাঝ পথেই ফিরতে হলো তাদের। কারণ, ক্রিকেটারদের বাস লক্ষ্য করে গুলি! এতে এমনকি কয়েকজন খেলোয়াড় আহতও হয়েছিলো। ফলাফল, পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ!
সময় গড়ালো কিন্তু কোন দলই পাকিস্তানে যেতে রাজি হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত এইতো কিছু দিন আগে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তান সফর করতে রাজি হলো। কিন্তু সেই একই ঘটনা। জিম্বাবুয়ে-পাকিস্তানের একদিনের খেলা চলাকালীন সময়েই স্টেডিয়ামের বাইরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটলো! পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ প্রথমে বলেছিলো, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ। কিন্তু, পরে জানা গেলো সেটা ছিল বোমা হামলা! অর্থাৎ পাকিস্তান এখনও কারো জন্য নিরাপদ না!
এই যখন অবস্থা, আজ বাংলাদেশ সরকার আমাদের নারী ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরের অনুমোদন দিয়েছে। কেন আমাদের মেয়েগুলোকে এমন একটা জীবনের ঝুঁকির মাঝে ফেলে দেয়া! যেদেশে এখনো জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের নিজেদের নারী ক্রিকেট দলকে হুমকি দিয়ে রেখেছে, সে দেশে আমাদের নারী ক্রিকেট দল কিভাবে নিরাপদ থাকবে ঠিক বুঝতে পারছি না।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময় সেই দেশের জামায়াতে ইসলামী সংসদে শোক প্রস্তাব এনেছিলো এবং অবাক হয়ে আমরা সবাই খেয়াল করলাম সেই দেশের পার্লামেন্টে সেই শোক প্রস্তাব গৃহীত করলো। তখন পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা করেছিলো তারা যে করেই হোক এর প্রতিশোধ নিবে।
বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশে বৈদেশিক মূলনীতির মাঝে সবার সাথে বন্ধুত্ব ও কারো সাথে শত্রুতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোন দেশ যদি নিজ থেকে শত্রুতা করতে আসে তাহলে তার সাথে বন্ধুত্বের দরকার কি?
শুনেছি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএলে) পাকিস্তান তাদের খেলোয়াড় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো। ঠিক জানি না বিসিবি ও সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না। তবে এর পেছনে যদি বিপিএলে পাকিস্তানী ক্রিকেটার খেলানোর কিছু থেকে থাকে, তাহলে এটি মোটেই ভালো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। আমাদের বাচ্চা মেয়েগুলোকে এতোটা অনিরাপদ একটা জায়গায় ঠেলে দেয়া উচিত হচ্ছে না।
পাকিস্তানী খেলোয়াড় ছাড়াতো আমরা এর আগেও বিপিএল খেলেছি। কোনো সমস্যাতো হয়নি। আশা করছি বিসিবি ও সরকার এই বিষয়টি দ্রুত পুনঃবিবেচনা করবে।
পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা প্রতিদিনের ঘটনা। কিছুদিন অাগে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন পাঞ্জাবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুজা খানজাদা। তিনি আবার সাবেক সেনা কর্মকর্তা। যে দেশে একটা প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই জঙ্গি হামলায় নিহত হন, যারা নিজেদের মন্ত্রীরই নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা কি করে আমাদের নারী ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা দেবে?