নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির ৫ জন সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারদলীয় মানসিকতার ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটিকে নির্দলীয় বা নিরপেক্ষ বিবেচনা করার অবকাশ নেই। যে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে তাতে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের নির্দেশে বুধবার ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, সিএজি মাসুদ আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক শিরীণ আখতার। আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি কমিটিকে স্বাগত জানালেও বিচ্ছিন্নভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন বিএনপির নেতারা। এবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ঘোষিত সার্চ কমিটির সদস্যদের পরিচয় তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কমিটির প্রধান হিসেবে আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি ২০১২ সালে গঠিত সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন। সে কমিটির প্রস্তাবক্রমে রকিব উদ্দীন কমিশনের মতো একটি অযোগ্য অনুগত মেরুদণ্ডহীন বিতর্কিত কমিশন নিযুক্ত হয়। কমিটির অন্যতম সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী হিসেবে বহুল পরিচিত ছিলেন। অপর সদস্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মহাবিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের সময় ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। কমিটির একমাত্র নারী সদস্য ড. শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকনেত্রী হিসেবে ২০১৪ সালে শিক্ষক সমিতির নেতা ছিলেন। কমিটির অপর সদস্য বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ সরকারের অধীনস্থ একজন কর্মকর্তা হয়ে সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধ কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। এমন সব ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটিকে নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ বিবেচনা করার কোন অবকাশ নেই।’ লক্ষণীয় যে কমিটির সদস্য- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সম্পর্কে কোন আপত্তি জানায়নি বিএনপি। এর মানে আমরা ধরে নিতে পারি যে তাকে বিএনপিও স্বাগত জানিয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে হলেও বিএনপির অনাপত্তিকে আমরা একটি শুভদিক বলে মনে করতে চাই। দেশে যখন সব ক্ষেত্রেই দ্বি-দলীয় একটা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, যখন বুদ্ধিজীবীরাও হয় আওয়ামীপন্থী কিংবা বিএনপিপন্থী; তখন মনে হচ্ছিল এদেশে দুই দলের ধামাধরা বুদ্ধিজীবী ছাড়া অন্যরা হয়তো হারিয়েই গেছেন। সরকার গঠিত কমিটিতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অন্তর্ভুক্তি এবং তার বিষয়ে বিএনপির অনাপত্তিতে প্রমাণ হচ্ছে যে আমাদের অতো বেশি হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নেই নেই করেও এখনো কিছু মানুষ আছেন, এখনো কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন যারা দলীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হননি। এটাও প্রমাণ হচ্ছে, রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা সদস্য না হয়েও কিছু কিছু মাথাওয়ালা মানুষ এখনো টিকে আছেন। তারা হয়তো খুবই কম, কিন্তু একেবারেই যে নেই এমন নয়। তাই আমরা একটু আশাবাদী হতে চাই। পরস্পরের মধ্যে বৈরিতা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চিরাচরিত চরিত্র। দীর্ঘ সময় ধরে এই বৈরিতার কারণে সৃষ্ট ক্রান্তিকাল অতিক্রমে অতীতে গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সমাজের থিঙ্কট্যাংক বলে পরিচিত সৈয়দ মনজুরুল ইসলামরা। তবে এক বা দুইজন হলে হবে না, আমাদের অনেক অনেক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রয়োজন।