চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘আমাকে তো সিনেমায় কেউ ডাকে না’

প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ১৯৭৭ সালের ২৬ মার্চ। সুভাষ দত্তের ওই ছবির নাম ‘বসুন্ধরা’। ছবিটি মুক্তি পায় একই বছর ডিসেম্বরে। তারপর ৩৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ ছবিই সুপারহিট। তিনি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। প্রেক্ষাগৃহে আজ মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘হঠাৎ দেখা’। ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের বাংলা ছবির নায়িকা দেবশ্রী রায়। বাংলাদেশ থেকে ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন অলোক মুখোপাধ্যায় (ভারত), পরিচালনা করেছেন রেশমী মিত্র (ভারত) ও সাহাদাত হোসেন (বাংলাদেশ)। কথা হলো ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে।

‘হঠাৎ দেখা’ ছবিটি নিয়ে বলুন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে তৈরি হয়েছে ছবিটি। এখানে সময়কে ধরার একটা বিষয় থাকে, তেমনি সাজ আর লোকেশনেও থাকে ভিন্ন আয়োজন। এমন ছবিতে অভিনয়ে একটু বেশি আগ্রহী আমি। এখানে আমি অমিত চরিত্রে অভিনয় করেছি। যুবক অমিত আর প্রৌঢ় অমিত এই দুই সময়কে ধরা হয়েছে। আমি করেছি প্রৌঢ় অমিত চরিত্রে। এতে মানসী চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার দেবশ্রী রায়। মানসীর সঙ্গে আমার কৈশোরে পরিচয় ও প্রেম অতঃপর বিচ্ছেদ। তারপর অনেক বছর পর আবার কাকতালীয়ভাবে ট্রেনে দেখা। স্মৃতি রোমন্থন আর টুকরো আলাপে কেটে যাওয়া রোমান্টিক ছবি এটি।  আমার খুব ভালো লেগেছে এতে অভিনয় করে।

৬ বছর পর বড় পর্দায় আজ আপনার ছবি মুক্তি পেয়েছে। ছবিতে আপনি নায়ক।

সব নির্ভর করে স্ক্রিপ্টের ওপর। বাকিটা প্রযোজক কিংবা পরিচালকের ওপর। ধন্যবাদ ইমপ্রেস টেলিফিল্মকে এ ছবিতে আমাকে কাস্ট করার জন্য। আসলে নায়ক হয়ে আর কী হবে। বয়স তো থেমে থাকেনি। সেটা মানতে হবে। তবে নায়ক হিসাবে দর্শক আমাকে এখনো মনে রেখেছে, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। মাঝে মাঝে দর্শকের এ ভালোবাসা টের পাই। সর্বশেষ নায়ক হয়েছিলাম ২০১১ সালে, হাফিজ উদ্দিন পরিচালিত ‘সেই তুফান’ ছবিতে।

দর্শকের ভালোবাসা কীভাবে বুঝতে পারেন?

নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে যখনই রাস্তায় নেমেছি, তখনই সাধারণ মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য কিংবা ছবি তোলার জন্য তাদের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা যায়, তাতে মনে হয় আমি জীবনে এই মানুষদের বিনোদনের জন্য কিছু একটা করতে পেরে​ছি।

‘হঠাৎ​ দেখা’ ছবিতে দেবশ্রী রায় ও ইলিয়াস কাঞ্চন

‘হঠাৎ দেখা’ ছবিতে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা বলুন।

দারুণ। খুব গোছানো কাজ ছিল। লোকেশন, সাজ, প্রপস আর নির্মাতাদের ভাবনা— সব মিলিয়ে একটি সফল প্যাকেজ কাজ এটি।

দেবশ্রী রায়কে কেমন দেখেছেন?

পেশাদার অভিনেত্রী তিনি। যা চলচ্চিত্রের জন্য খুব দরকার। আমাদের ইন্ডাষ্ট্রিতে পেশাদারিত্বে অভাব রয়েছে। তাই ইন্ডাষ্ট্রি উন্নতি করতে পারছে না। শুটিংয়ে দেবশ্রী রায়ের সময়জ্ঞান আর পরিমিতি বোধ দারুণ। নির্মাতা কী চান, সেটা তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছবির অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে মানিয়ে নেন নিজে থেকেই। মনে হচ্ছিল যেন তার নিজের বাড়ি। আর সবাই তার পরিবারের অংশ। ছবির শুটিং শেষ করতে একটু সময় লেগে যায়। সহশিল্পী হিসেবে আমার সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।

অভিনয়ের অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। কেন?

আমাকে তো সিনেমায় কেউ ডাকে না। যখন নিয়মিত অভিনয় করতাম, তখন বছরে অসংখ্য ছবি মুক্তি পেয়েছে। এই সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যেত। এখন সারা বছরে ৫০টি ছবিও মুক্তি পায় না। আর আমারও বয়স হয়েছে। ফলে অনেক সময় ছবির প্রস্তাব পেলেও ফিরিয়ে দিতে হয়। তাছাড়া এর বাইরে আমার কিছু রুটিন কাজ আছে, তাই ছবিতে নিয়মিত কাজ করতে পারছি না।

যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে সবকিছু যদি সমানভাবে করা যায়, তাহলে কোনো সমালোচনার সুযোগ নেই। বরং এটা আমাদের জন্য ভালো। আমি তো বলব, যৌথ প্রযোজনার ছবির মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়।

চলচ্চিত্রে বর্তমান প্রজন্ম কেমন করছে?

ভালো না, আবার খারাপও না। বর্তমান প্রজন্মের অনেকের মধ্যেই অভিনয়–প্রতিভা আছে। কিন্তু পেশাদারিত্বের বড় অভাব। তাদের মধ্যে এ বিষয়টা ঠিক হয়ে গেলে বাংলা চলচ্চিত্র উপকৃত হবে।

‘হঠাৎ​ দেখা’ ছবিতে দেবশ্রী রায় ও ইলিয়াস কাঞ্চন

টিভি নাটকে মাঝে মাঝে আপনাকে দেখা যায়।

শখের বশে মাঝে মাঝে দুয়েকটি নাটক করা হয়। তবে অবশ্যই নিয়মিত নয়। এটা কেবল অভিনয়ের চর্চাটা ঠিক রাখার জন্য।

আপনার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন নিয়ে বলুন।

সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে এই কার্যক্রম শুরু করি। এটাকে আমি আন্দোলন হিসেবেই নিয়েছি। এর মধ্যে অনেক কর্মসূচি বাস্কবায়ন করেছি।

সম্প্রতি ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৭’ নামের একটি আইন তৈরি করেছে সরকার। এই আইন সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এই আইনটি করার জন্য। এই আইনে শুধু চালকদের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, শুধুমাত্র চালকদের জন্য। আমার মতে, শুধু চালকের নয় বরং দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি বিধান রাখা দরকার ছিল। যারা লাইসেন্স প্রদান করে, গাড়ির মালিকসহ যারা প্রকৌশলী আছেন, তারাও হতে পারেন।

ছবি : সংগৃহীত