জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে বন্ধ থাকা রাজধানীর লেকহেড গ্রামার স্কুল বিষয়ে শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেছেন, ‘আমরা চাই দেশ বাঁচুক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চলুক।’
রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই স্কুলের বিষয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। পরে আদালত বেলা সাড়ে ১১টায় এবিষয়ে শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন।
নির্ধারিত সময়ে আদালতে শুনানি শুরু হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা গোয়েন্দা প্রতিবেদন পড়েছি। সিক্রেট এই প্রতিবেদনে আমরা গুরুতর অভিযোগের বিষয় দেখছি।
এ সময় স্কুলের পক্ষে থাকা আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, মাই লর্ড। অভিযোগ কিছু থাকলে থাকতে পারে। কিন্তু স্কুলের ১১শ বাচ্চার কি হবে? তাদের ভবিষ্যত নষ্ট হতে পারে না। স্কুল বন্ধ থাকতে পারে না। যদি কারো বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগ থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। যে কোন পদক্ষেপ নেয়া হোক। কিন্তু স্কুলতো বন্ধ হতে পারে না?
জবাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা চাই দেশ বাঁচুক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলুক।’
এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দিতে হাইকোর্ট রায় স্থগিতের মেয়াদ আরো ১০ দিন বাড়িয়ে আদেশ দেন।
এই আদেশের ফলে আরো ১০ দিন লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধ থাকবে বলে জানান আইনজীবীরা।
একই সঙ্গে আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে এই সময়ের মধ্যে লিভ টু আপিল করতে বলেন। পাশাপাশি লেকহেড গ্রামার স্কুলের বর্তমান মালিক, শিক্ষক ও স্টাফদের সাথে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তাও তদন্ত করে আদালতকে জানাতে বলেন।
রোববার আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
লেকহেড গ্রামার স্কুল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
এরপর গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতির আদালতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সে আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে বিষয়টি রোববার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।
রাজধানীর ধানমন্ডি ও গুলশানের দুটি শাখাসহ লেকহেড গ্রামার স্কুলের সকল কার্যক্রম বন্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে তিনটি রিট করা হয়। স্কুলের নতুন মালিক ও ১২ জন অভিভাবক এই রিটগুলো করেন।
গত ৬ নভেম্বর ধানমন্ডি ও গুলশানের দুটি শাখাসহ লেকহেড স্কুলের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার স্কুল সিলগালা করে দেয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সালমা জাহান সাক্ষরিত চিঠিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুমোদন নেয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় উগ্রবাদ, উগ্রবাদী সংগঠন সৃষ্টি, জঙ্গি কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষকতাসহ স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
২০০৬ সালে ধানমন্ডি ৬/এ সড়কে প্রতিষ্ঠিত হয় লেকহেড গ্রামার স্কুল। গুলশানে এই স্কুলের আরও দু’টি শাখা রয়েছে।