চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আমরা চাই দুদক সুগন্ধ ছড়াক: হাইকোর্ট

‘দুদককে নিয়ে চারিদিকে কথা হয়, অনেকেই মনে করেন দুদক মানেই দুর্গন্ধ।’ দুদক আইনজীবীর এমন আক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আমরা চাই দুদক সুগন্ধ ছড়াক।’

জাহালমকাণ্ডে দুর্নীতি দমন কমিশনের আভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনের শুনানিতে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গরবার এ মন্তব্য করেন। এসময় দুদকের আইনজীবীকে আগামী শুনানির দিন জাহালম ও আবু সালেকের ছবি আদালতকে দিতে বলেন।

এছাড়া আজ শুনানিতে আদালত ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন: আমারা যখন অ্যাকাউন্ট করতে যাই তখন তো আমাদের ১০টা বিষয়ও যাচাই করা হয়। কিন্তু একজন মানুষ এতগুলো অ্যাকাউন্ট খুলে ফেললেন আপনারা কোনো যাচাই করলেন না, এটা তো ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব না, আমরা বিষয়টা দেখবো।

শুনানির একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারে আদালতে বলেন: গণমাধ্যমে যদি জাহালমের বিষয়টি না আসতো তাহলে তাকে কারাগারেই থাকতে হতো। তখন আদালত বলেন: গণমাধ্যমে জাহালমের বিষয়টি না আসলে তাকে তো মিথ্যা মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে কারাগারেই থাকতে হতো। হয়ত আরেকটি জজ মিয়া নাটকের চেষ্টা হত।

এদিকে অভ্যন্তরীণ তদন্তে জাহালমকাণ্ডের যাদের দায়ী করা হয়েছে তাদের বিষয়ে দুদক কি পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সেই সাথে জাহালমকে আসামি করার পেছনে দুদক ও বিভিন্ন ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা জড়িত তারা যেন চাকরির টাকা-পয়সা নিয়ে পালাতে না পারে সেজন্য তাদের ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট এবং এবিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামি ২১ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ মো. জাকির হোসেন।

এর আগে জাহালমের বিষয়ে দুদকের করা অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন গত ১১ জুলাই হাইকোর্টে দাখিল করে দুদক। দুদকের করা অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে পাটকল শ্রমিক জাহালমের প্রায় ৩ বছর ভুল আসামী হয়ে কারাভোগের বিষয়ে বলা হয়, ‘সার্বিক বিবেচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, জাহালমকে আবু সালেকরূপে চিহ্নিত করার যে ভুলটি হয়েছে, তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে।’

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না, আমি নির্দোষ।’

আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ২৬টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। যিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। এরপর তদন্ত করে দুদক বলেছে, জাহালম নিরপরাধ। একই মত দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

ওই প্রতিবেদনটি গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। এরপর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ জাহালমকে মুক্তির আদেশ দেন। সেই সাথে জাহালমের ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে হাইকোর্ট রুল জারি করেন।

এ আদেশের পর মুক্তি পায় জাহালম। এরপর দুদক হাইকোর্টের এ বেঞ্চে রুল শুনানিসহ জাহালম সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। তবে দুদকের আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাহালমকে মুক্তির আদেশ দেওয়া হাইকোর্ট বেঞ্চেই জাহালমের ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি শুরু হয়। এরপর দুদকের আইনজীবী আদালতকে বলেন, জাহালমের ঘটনাটির তদন্ত করছে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। তারপর গত ২৭ জুন হাইকোর্ট জাহালম কাণ্ডে দুদকের করা অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। সেই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে দুদকের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়।