সম্প্রতি ২০১৬ সালের গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এই রিপোর্টে বিশ্বের ১২৭টি দেশের উদ্ভাবনী পরিস্থিতি আলাদা আলাদা মূল্যায়ন করা হয়েছে। জিআইআই প্রতিবছর বিশ্বের প্রতিটি দেশের উদ্ভাবনী সক্ষমতার ওপরে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে।
গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সের ২০১৬ এর তালিকার শীর্ষে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, আর ১২৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির জনসন স্কুল, আইএনএসইএডি বিজনেস স্কুল, ওয়ার্ল্ড ইন্টালেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন।
তালিকায় ১২৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৭তম হলেও অন্যান্য অনেক দেশের থেকে নানান ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের উদ্ভাবনী পরিস্থিতি অক্ষমতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম।
তিনি পোস্টে লিখেছেন, গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স ২০১৬ প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ উদ্ভাবনী শক্তি’তে পৃথিবীর দেশ গুলোর মাঝে কার অবস্থান কোথায়; সেই তালিকা বলা যেতে পারে এটিকে। মোট ১২৭টি দেশের উপর জরিপ করে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে গতকালই মনে হয়। এই তালিকায় প্রথম হয়েছে সুইজারল্যান্ড, দ্বিতীয় হয়েছে সুইডেন। এর পর ইংল্যান্ড, আমেরিকার অবস্থান। আমি পুরো তালিকাটি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। এই মনোযোগের কারন হচ্ছে ওই তালিকায় নিজের দেশের নামটি খুঁজে বের করা। ১২৭টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ১১৭তম!
সোমালিয়া,ইথিওপিয়া, মালি, মাদাগাস্কার, নেপাল, সুদানের মতো দেশ গুলোও আমাদের চাইতে অনেক এগিয়ে। অর্থাৎ সোজা বাংলায় বললে বলা যেতে পারে আমরা আসলে কোন কিছু আবিষ্কার কিংবা উদ্ভাবন করতেই পারি না। আমাদের সেই ক্ষমতাই নেই! তালিকায় নাম দিতে হয় বলেই হয়ত ওরা দয়া করে নামটা রেখেছে!
অবশ্য আমাদের সেই ক্ষমতা থাকবেই বা কি করে! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তো আছেন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত! এরা হয় দিন ভর রাজনীতি নিয়ে থাকেন কিংবা থাকেন কিভাবে নিজেদের পকেট ভারি করা যায় সেই চিন্তায় ব্যস্ত। ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনা কিংবা নিজেদের গবেষণার ধারে কাছেও এরা নেই! অবশ্য এরা আদৌ গবেষণা করার যোগ্যতা রাখেন কিনা এই নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
এরা কিভাবে শিক্ষক হয়, সেটাও একটা প্রশ্ন। কেউ বাজার করে শিক্ষক হয়ে যাচ্ছে, কেউ রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক হচ্ছে, কেউ আবার তেমন কোন কিছু না জেনেই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে শিক্ষক হয়ে যাচ্ছে! কিভাবে এরা ফার্স্ট হয়ে যাচ্ছে, সেটাও আসলে গবেষণা করার মতো বিষয়!
তো এই শিক্ষকরা কিভাবে গবেষণা আর উদ্ভাবন করবে আমার অন্তত জানা নেই। দেখবেন শিক্ষকরা এসে বলবে-সরকার আমাদের বেতন বাড়ায় না, এতো কম টাকায় চলতে পারি না, গবেষণার জন্য ফান্ড দেয় না, ইত্যাদি ইত্যাদি! এই শিক্ষকরাই কিছুদিন আগে নিজেদের মর্যাদা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছিলেন!
আচ্ছা ইথিওপিয়া, মালি, নেপাল কি আমাদের চাইতে ধনী দেশ! এই তিনটা দেশ সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারনা আছে। এই দেশ গুলো বাংলাদেশের চাইতে অনেক দরিদ্র; ওদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতনও অনেক কম! কিন্তু তারা আমাদের শিক্ষকদের মতো খাই খাই স্বভাবের না। তাই হয়ত এতো কম বেতনে চাকরি করার পরও ওরা কিছু আবিষ্কার করতে পারছে, কিছু উদ্ভাবন করতে পারছে।
আর আমরা পড়ে থাকছি তালিকার একদম নিচে! মাত্র ১২ লাখ জনসংখ্যার দেশ এস্তনিয়ার অবস্থান যেখানে ২৩, সেখানে প্রায় ১৭ কয়টি জনসংখ্যার আমরা কিনা অবস্থান করছি ১১৭তে!
অবশ্য টক’শো কিংবা আলগা ফুটানি(আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক টাইপ!) কোন তালিকা হলে মনে হয় সেখানে আমাদের বাংলাদেশের নাম প্রথম দিকেই থাকতো! যেই দেশে পলিটিকাল সায়েন্সের শিক্ষক টেলিভিশনে গিয়ে ভুমিকম্প বিশারদ হয়ে যেতে পারে, সেই দেশকে কেন গ্লোবাল ইনোভেসন ইনডেক্সের লোকজন তালিকার প্রথমে রাখলো না; এই নিয়ে অবশ্য একটা গবেষণা হতেই পারে!