চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আবারো রক্তাক্ত মানবতা

আবারো নিরীহ মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলা। আবারো হামলার শিকার ইন্দোনেশিয়া ফ্রান্স। গত কয়েক বছর ধরেই এই দেশ দুটি ধারাবাহিক হামলার শিকার হচ্ছে। আর হামলাকারীরাও সেই একই জঙ্গি গোষ্ঠী– আইএস।

সর্বশেষ হামলায় দু’ দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় কয়েকটি চার্চে একই সময় করা আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৪০ জন। আর ফ্রান্সের মধ্য প্যারিসে এক হামলাকারীর ছুরির আঘাতে একজন নিহত এবং আরও ৪ জন আহত হয়েছে। দুটি হামলাতেই নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী– তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস।

আমরা লক্ষ্য করেছি, আইএস হামলার লক্ষ্যবন্তু হওয়া এ দেশ দুটির ওপর হামলার ঘটনা বেড়েই চলছে। ইন্দোনেশিয়ায় জঙ্গি হামলার ব্যাপকতা ঘটে ২০০০ সালে দেশজুড়ে অনেকগুলো চার্চে বোমা হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে। হামলায় নিহত হয় কমপক্ষে ২০ জন। এই ঘটনার এক বছর পর বালিতে ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হয় দুই শতাধিক ব্যক্তি। তাদের অর্ধেকই ছিল অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। এখানেই থেমে যায়নি সন্ত্রাসীরা। ইন্দোনেশিয়ায় একের পর এক হামলার ঘটনা চলছেই।

ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে আগেও হামলা চালানো আইএস তাদের নৃশংসতা দেখায় ২০১৫ সালে। নভেম্বর মাসে প্যারিসের একাধিক স্থানে চালানো হামলায় নিহত হয় দেড়শতাধিক মানুষ। তারপর থেকে আইএসের হামলার মাত্রা বেড়ে যায়। কনসার্টে, পত্রিকা অফিসে, সুপার মার্কেটে নানা পদ্ধতিতে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা হয় দেশটিতে।

এসব হামলার ধরন মিলে যায় বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় এক যোগে চালানো বোমা হামলা কিংবা গুলশানের হলি আর্টিজান হোটেলে চালানো হামলার সাথেও। ২০০৫ সালের আগস্টে সারাদেশে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। আর ২০১৬ সালের ১লা জুলাই ভয়াবহ গুলশান হামলায় নিহত হয় ১৭ বিদেশী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৮ জন। সেখানেই থেমে যায়নি জঙ্গিরা, এরপরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা হামলা চালিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স বা বাংলাদেশ; সব জায়গাতেই জঙ্গিদের এসব হামলার ধরন একই রকম। তাদের মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষ। নিরস্ত্র মানুষের উপর নৃশংস হামলা চালিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে সেই অপরাধকে বৈধতা দিতে চায় জঙ্গিরা। এসব করে তারা আসলে ধ্বংস করতে চায় মানবতাকে।

আমরা লক্ষ্য করেছি, জঙ্গিরা সেসব দেশেই হামলা করছে, যেখানে ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন ধর্মের শান্তিপ্রিয় মানুষ শত শত বছর ধরে সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করছে। যাদের কাছে মানবতাই বড়। ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স বা বাংলাদেশ তেমনই দেশ। আর এমন দেশগুলোতে বেছে বেছেই হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা।

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জঙ্গি বিরোধী অভিযান চলছে। কিন্তু তারপরও যে তারা থেমে নেই ইন্দোনেশিয়া এবং ফ্রান্সের সর্বশেষ হামলা দুটি তারই প্রমাণ। গুলশান হামলার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের নানা রকম প্রচারণার পাশাপাশি পারিবারিকভাবেও অনেক উদ্যোগের কথা আমরা জানি। এক্ষেত্রে অনেকটা সফলতা এসেছে।

তবে এসব হামলার ঘটনায় আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমরা মনে করি, সচেতনতার পাশাপাশি সতর্কতা বেশি কার্যকর।