ঘুষ নেয়ার অভিযোগে আদালত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় আবারো আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার।
ওই শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় সেলিম ওসমানকে স্থায়ীভাবে জামিন দেয়া এবং শ্যামল কান্তিকে কারাগারে পাঠানোয় সাধারণ মানুষসহ সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে বলেছেন, অপরাধী নয় বরং যে অপরাধের স্বীকার হলো তার বিচার হয়েছে।
কানাডা ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল নতুনদেশ ডটকম এর সম্পাদক শওকত আলী সাগর লিখেছেন, ‘শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে নাজেহাল করেছে সেলিম ওসমান। শিক্ষক শ্যামল কান্তির গ্রেফতার হওয়ার কারনও সেলিম ওসমান। সেলিম ওসমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি নয়। সে জাতীয় পার্টির এমপি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ ধন্য।
শিক্ষক শ্যামল কান্তির নাজেহাল হওয়া, গ্রেফতার হওয়ার উত্তাপ তাই আওয়ামী লীগের দিকেই বর্ষিত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকেও বর্ষিত হচ্ছে। জাতীয় পার্টির একজন এমপির অপকর্মের দায়ভাগ আওয়ামী লীগকে নিতে হবে কেন? আওয়ামী লীগই বা নেবে কেন?
নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের প্রতি শেখ হাসিনার আর্শীর্বাদ থাকতেই পারে। সেই আর্শীর্বাদের সুযোগ নিয়ে ওসমান পরিবারের কোনো সদস্য যদি দৃর্বৃত্তপনা করে, সেটিও প্রধানমন্ত্রীকে হজম করতে হবে? কেন করতে হবে?’
একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা লিখেছেন, ‘কতলোক ঘুষ খায়, কিন্তু অভিযোগ মাত্রই শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে জেলে ঢুকানো হয়, আমাদের প্রতিবাদ করাটাই ঠিক হয়নি, আমরা চিৎকার না করলে হয়তো কান ধরে উঠাবসা পর্যন্ত তার শাস্তি হতো, এখন হয়তো তার জীবনটাই যাবে, কারণ দিন শেষ ক্ষমতাবানরা তো পরাক্রমশালীদের পক্ষে, আর একটা কথা বলি, ক্রিকেটের জয়ে উৎসাহিত হবেন না, এদেশের মানুষ অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে পরাজিত।’
এ বিষয়ে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার মামলায় ২৩ মে জামিন পেয়েছেন সাংসদ সেলিম ওসমান। পরদিন সকালেই লাঞ্ছিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ঘুষের মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু হলো। বিকেলে আত্মসমর্পণ করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কী চমৎকার দেখা গেল। আইন চলছে নিজস্ব গতিতে। ইহাকেই বলে আইনের শাসন, লাঞ্ছিত থাকে কারাগারে, লাঞ্ছনাকারী জামিন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।’
সংবাদ পাঠিকা আসমা আহমেদ লিখেছেন, ‘গোবেচারা এই শিক্ষককে কায়দা করে আত্মসমর্পণ করিয়ে কারাগারে না নিয়ে নারায়ণগঞ্জের লাট সাহেবের চোখের ইশারায় লাশ বানিয়ে ফেললেই তো হত। অহেতুক বাঁচিয়ে রেখে এহেন হেনস্তার কী দরকার?’
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সুলতান মির্জা লিখেছেন, ‘ইহা হইলো ওসমান পরিবার। এর যে কি জ্বালা যন্ত্রণা নারায়ণগঞ্জের মানুষ ভোগ করছে। শ্যামল কান্তি ঘুষ নিয়েছিল কি না নিয়েছিল এটা এখন অবশ্যই একটা বিতর্ক। একটা লোকের বিরুদ্ধে ৩টা কাউন্টার মামলার পর একটা মামলা টিকিয়ে রাখা খুব কষ্ট সাধ্য কোন কাজ নয়। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত কোন দল করতো, উনার চরিত্র কেমন, আজকে নয়, ২০১৬ সালেই মে মাসেও বিষয়টা কারণ হয়ে দাড়ায়নি। এর কারণ কি ? শুধু সেলিম ওসমানের আচরন ও উস্কানী। অনেকেই বলেছে শুনেছি, এমনকি স্বয়ং সেলিম ওসমান সাহেবও বলেছে, ওই সময় এর চেয়ে বেটার আসলেই উনার কি করনীয় ছিল?
সহজ উত্তর দু’দিনের একটা বাচ্চায়ও বিশ্বাস করে (ওসমান পরিবারের দয়ায় নারায়ণগঞ্জে বেচে থাকা কামলা ছাড়া) সেটা হলো, উনাদের এতো দাপট আর জনসমর্থন তাহলে কেন উত্তেজিত লোক গুলোকে বলতে পারলো না, যা হওয়ার তা হয়েছে, বিষয়টা আগামীকাল বা পরশু নিয়ে বসে আমি নিজে বিচার করবো, বিচার মন মত না হলে আপনারা যা খুশি তা করবেন। আসলে সেলিম ওসমান সাহেবের সেই ইচ্ছা ছিল না, আর ইচ্ছা থাকলেও পাবলিক মানবে না ছিল পরিস্থিতিটা।
আজকে দৃষ্টি কটু, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের পক্ষের আইনজীবী ছিল দুই দিন আগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হওয়া সাখাওয়াত হোসেন। তারপরেও লোকটার পক্ষ ছাড়া সম্ভব নয়। শুধু মানবতার ও প্রভাবশালী এই পরিবারের অহংকার ও স্বৈরাচারী মনোভাবের কারনে। আছি শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের পাশে।’
খ্যাতনামা কবি আবু হাসান শাহরিয়ার লিখেছেন, ‘শিক্ষককে কানে ধরে ওঠবস করালেন সাংসদ, ক্ষোভে ফেটে পড়ল দেশের অগণন সাধারণ মানুষ, এবার অপরাধীর বিচার না হয়ে যায় না। যায় না মানে? উদ্ধত সাংসদকে নয়, অবিশ্বাস্য খুচরো অভিযোগে বিদ্যানুরাগী শিক্ষককে কারাগারে পাঠাল আইন। হায়, এই বাংলাদেশকেও আজ দেখতে হচ্ছে! তীব্র নিন্দা জানাই। জয় বাঙলা।’
প্রবাসী সাংবাদিক মালবিকা লাবণি শীলা লিখেছেন, ‘ঘুষ খাওয়া আসল ব্যাপার না। সংখ্যালঘু হওয়াটাই অপরাধ।’
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা করেন বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মোর্শেদা বেগম।
আর ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে শ্যামল কান্তিকে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় গত বছরের মে মাসে। এর দুই মাস পর মামলাটি করেন ওই শিক্ষিকা।